আফগান যুদ্ধের বিশৃঙ্খলাপূর্ণ সমাপ্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা চলতি সপ্তাহে কংগ্রেসে সম্ভবত স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে উত্তপ্ত শুনানির মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন।
Published : 28 Sep 2021, 04:28 PM
মার্কিন সেনেট ও প্রতিনিধি পরিষদের যেসব কমিটি সামরিক বাহিনীর কর্মকাণ্ড দেখভাল করে মঙ্গল ও বুধবার তাদের শুনানি হওয়ার কথা। এসব শুনানিতে কমিটিগুলোর রিপাবলিকান সদস্যরা দুই দশকের যুদ্ধের একবারে শেষে এসে বাইডেন প্রশাসনের ভুলগুলো নিয়ে তোপ দাগবেন বলেই অনুমান করা হচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সপ্তাহ দুয়েক আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনকে যেসব প্রশ্নবানে জর্জরিত করা হয়েছিল, চলতি সপ্তাহের শুনানিতে পেন্টাগনের শীর্ষ কর্মকর্তাদেরও প্রায় একই ধরনের প্রশ্ন করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আফগানিস্তানে বিশৃঙ্খলায় ব্লিনকেনের পদত্যাগের দাবিও উঠেছিল, তা সত্ত্বেও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে করা প্রশ্নের জবাবে বাইডেন প্রশাসনের নেওয়া পদক্ষেপের পক্ষে জোরাল অবস্থান নিয়েছিলেন।
এবারের শুনানিতেও মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি থেকে এক লাখ ২৪ হাজার আফগানকে বিমানযোগে সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রমে সহায়তা করায় মার্কিন সেনাদের প্রশংসা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
যে অভিযানে এই সোয়া লাখ আফগানকে সরানো হয়, ওই অভিযানের সময়ই কাবুল বিমানবন্দরে এক আত্মঘাতী বোমা হামলা ১৩ মার্কিন সেনা ও দেড়শর বেশি আফগানের প্রাণ কেড়ে নেয়।
“যা করেছি, আমরা যে তার চেয়েও ভালো করতে পারতাম অস্টিন তা খোলাখুলি বলতে পারেন,” রয়টার্সকে বলেছেন এক মার্কিন কর্মকর্তা।
শুনানিতে মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তান ছাড়ার আগে দেশটিতে চালানো শেষ ড্রোন হামলায় শিশুসহ ১০ বেসামরিকের মৃত্যুর প্রসঙ্গও উঠতে পারে।
জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের এক সদস্যকে উদ্দেশ্য করে ওই ড্রোন হামলা চালানো হচ্ছে বলে সেসময় মনে করেছিল তারা, তাদের ওই ‘ভুলে’ সাধারণ মানুষের প্রাণ গেছে।
“আফগানিস্তান ছাড়ার সময় আমাদের নিজেদের লোকদের যেমন প্রাণ গেছে, তেমনি আমরাও প্রাণ নিয়েছি,” বলেছেন ওই কর্মকর্তা।
শুনানির আগে সেনেটের আর্মড সার্ভিস কমিটির শীর্ষ রিপাবলিকান সেনেটর জেমস ইনহফ প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে নানা বিষয়ে তথ্য চেয়েছেন, এর মধ্যে আছে ২৬ অগাস্ট কাবুল বিমানবন্দরে বোমা হামলা, কী কী সামরিক সরঞ্জাম ছেড়ে আসা হয়েছে এবং প্রশাসন ভবিষ্যতে কীভাবে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার পরিকল্পনা সাজাচ্ছে সে সংক্রান্ত তথ্যও।
ডেমোক্রেট সেনেটর জিন শেহিন বলেছেন, শুনানিতে আইনপ্রণেতারা সমন্বয়ে ঘাটতি এবং দেশটিতে যারা আমাদের সহযোগিতা করেছিল তাদের সবাইকে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে কোনো সত্যিকারের পরিকল্পনা আছে কিনা তা জানতেও চাপ দেবেন।
“সব উত্তর পাবো কিনা, জানি না। আফগানিস্তানে আমরা যা করেছি, তা এই পরিস্থিতিতে নিয়ে এল কেন সে প্রসঙ্গেও পুনরায় প্রশ্ন উঠবে,” টেলিফোনে রয়টার্সকে এমনটাই বলেছেন শেহিন।
শুনানিতে সবচেয়ে কঠিন সব প্রশ্নের মুখে পড়তে পারেন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলি এবং ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান মেরিন জেনারেল ফ্রাঙ্ক ম্যাককেনজি।
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ ড্রোন হামলায় বেসামরিক নিহতের ঘটনাকে ‘মর্মান্তিক ভুল’ অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন ম্যাককেনজি।
তার পাশপাশি শুনানিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর অন্যান্য কর্মকর্তাদের ভবিষ্যতে আল কায়েদা ও ইসলামিক স্টেটের মতো গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে আসা সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি ড্রোন এবং অন্য দেশে থাকা কমান্ডোদের দিয়ে মোকাবেলায় বাইডেন প্রশাসনের পরিকল্পনার ব্যাপারে ব্যাপক প্রশ্নবানে জর্জরিত হতে হবে।
তথাকথিত ‘উড়ে গিয়ে’ হামলা চালিয়ে আসার সক্ষমতার সঙ্গে যে ঝুঁকি আছে, তাকে বাইডেন প্রশাসন ‘খাটো করে দেখছে’ বলে সম্প্রতি রিপাবলিকানরা অভিযোগ করে আসছিলেন।
ক্যাপিটলে হামলার ঘটনার পর সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে উদ্বেগ থেকে বেসামরিক নেতৃত্বকে ‘বাইপাস’ করে গোপনে চীনা ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন বলে নতুন প্রকাশিত এক বইতে যে অভিযোগ করা হয়েছে শুনানিতে তা নিয়েও প্রশ্নের মুখোমুখি হতে পারেন জেনারেল মিলি।
বইয়ের ভাষ্যকে প্রত্যাখ্যান করে তার কার্যালয় জানিয়েছে, জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান যেসব ফোন করেছেন তা পেন্টাগন ও মার্কিন সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করেই করা হয়েছিল।
ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি ফাঁস করে জীবন্ত কিংবদন্তি বনে যাওয়া সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড এবং ওয়াশিংটন পোস্টের খ্যাতনামা সাংবাদিক রবার্ট কস্টার ‘পেরিল’ বইয়ে ওঠা অভিযোগের ভিত্তিতে মিলির পদত্যাগ দাবি করেছেন সেনেটর মার্কো রুবিও।
ঘটনা সত্য হলে মিলির বিচার হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সেনেটর র্যান্ড পল।
সেনেটে যাই হোক, প্রতিনিধি পরিষদেই মিলিকে সবচেয়ে বড় তোপের মুখে পড়তে হতে পারে বলে অনুমান অনেক পর্যবেক্ষকের। সেখানে বুধবার সাক্ষ্য দেওয়ার কথা রয়েছে মিলির।