আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের উত্তরপূর্বের পানশির প্রদেশের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দাবি করার পর সেখানে জয় ঘোষণা করেছে তালেবান।
Published : 07 Sep 2021, 12:25 AM
সোমবার পানশিরের প্রাদেশিক গভর্নরের কার্যালয়ের সামনে তালেবান যোদ্ধাদের পতাকা ওড়ানোর একটি ছবিও অনলাইনে পোস্ট করেছে গোষ্ঠীটি।
আফগানিস্তানে সশস্ত্র প্রতিরোধ টিকে থাকা এই একটিমাত্র প্রদেশে জয় দাবি করে তালেবান গোটা দেশই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ঘোষণা দিল। পাশাপাশি শিগগিরই একটি সরকার ঘোষণা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে তারা।
তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “পলায়নপর শত্রুদের শেষ আস্তানা পানশির দখল করা হয়েছে। এই জয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশ পঙ্কিল যুদ্ধ থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে এসেছে।”
পানশিরের কোনও মানুষের সঙ্গেই ‘বৈষম্যমূলক আচরণ করা হবে না’ আশ্বাস দিয়ে ভাই-ভাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাবে বলে জানিয়েছেন জাবিউল্লাহ।
তবে পানশিরের তালেবানবিরোধী প্রতিরোধ বাহিনী ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (এনআরএফ) অবশ্য এখনও পরাজয় স্বীকার করে নেয়নি। পানশিরের সব কৌশলগত অবস্থানগুলোতেই প্রতিরোধ যোদ্ধারা রয়েছে এবং তালেবানের বিরুদ্ধে তারা লড়াই চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে এনআরএফ।
তালেবানবিরোধী এই বাহিনীর নেতা আহমাদ মাসুদ তালেবানের বিরুদ্ধে ‘জাতীয় আন্দোলনের’ ডাক দিয়েছেন।
বিবিসি জানায়, স্যোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করা এক অডিও বার্তায় এনআরএফ নেতা মাসুদ তালেবানকে বৈধতা দেওয়া এবং তাদেরকে রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তিতে বলীয়ান করে তোলার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দোষারোপ করেছেন।
জাতীয় আন্দোলনের ডাক দিয়ে তিনি বলেন, “আপনি ঘরে-বাইরে যেখানেই থাকুন, দেশের মান-মর্যাদা, স্বাধীনতা এবং সমৃদ্ধির স্বার্থে আপনাদেরকে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানাচ্ছি।”
তালেবানের পানশির দখলের দাবি সম্পর্কে এর আগে এনআরএফ এর মুখপাত্র আলি মাইসাম বিবিসি-কে বলেছিলেন, “তালেবান পানশির দখল করতে পারেনি। আমি তালেবানের দাবি প্রত্যাখ্যান করছি।”
এনআরএফ এর পক্ষ থেকে এক টুইটেও বলা হয়, “ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তালেবান ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে।”
তালেবান এর আগে আফগানিস্তানের শাসনক্ষমতায় থাকাকালে কোনওসময়ই পানশিরের দখল নিতে পারেনি। তাই প্রদেশটি তালেবানের দখলে চলে যাওয়ার দাবি সত্য হয়ে থাকলে তা হবে গোষ্ঠীটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক অর্জন।
কিন্তু তালেবান পানশিরে জয় ঘোষণা করলেও প্রদেশটির কতটা অংশ তাদের দখলে আছে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা ছবিতে তালেবান যোদ্ধাদের পানশিরের গর্ভনর কম্পাউন্ডের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলেও প্রদেশটির বেশিরভাগ এলাকাই ছোট ছোট প্রত্যন্ত অনেক পার্বত্য উপত্যাকা নিয়ে গঠিত।
ওইসব জায়গায় তালেবান বিরোধী প্রতিরোধবাহিনী আবার নতুন করে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পাবে।
তবে এনআরএফ নেতা মাসুদের বাবা বেশিরভাগ শক্তিমত্তার অধিকারী হয়েছিলেন তাখার প্রদেশ হয়ে তাজিকিস্তানে যেতে পারার কারণে। তাখার প্রদেশটিও মাসুদের বাবার নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু সেই তাখার প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ এখন তালেবানের হাতে। ফলে সেপথে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের রসদ পাওয়া এখন আরও কঠিন।