আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া তালেবানকে ‘নির্দয় গোষ্ঠী’ অ্যাখ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ জেনারেল মার্ক মিলি বলেছেন, কট্টরপন্থি গোষ্ঠীটি আদৌ বদলাবে কিনা, তা বোঝা যাচ্ছে না।
Published : 02 Sep 2021, 02:44 PM
আফগানিস্তানে আক্রমণ চালিয়ে তালেবানকে উৎখাত করার পর টানা ২০ বছর দেশটিতে অবস্থান করেছে মার্কিন সেনা। মঙ্গলবার সেনা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দীর্ঘতম যুদ্ধের অবসান হল।
অগাস্টে ঝড়ের বেগে একের পর এক প্রাদেশিক রাজধানী ও পরে কাবুল দখলে নেওয়া তালেবান এখন আফগানিস্তানের প্রায় পুরো অংশের নিয়ন্ত্রক, শিগগিরই তারা নতুন সরকারের ঘোষণা দিতে যাচ্ছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
আফগানিস্তান থেকে সর্বশেষ সেনাকে সরিয়ে নেওয়ার পর প্রথম জনসমক্ষে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার সময় জেনারেল মিলির পাশে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনও ছিলেন।
বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে এ দুজনই আফগানিস্তানে কাজ করা সৈন্যদের এবং বিপুল সংখ্যক মানুষকে দেশটি থেকে সরিয়ে নেওয়ার কর্মযজ্ঞের প্রশংসা করেছেন।
কাবুল বিমানবন্দর দিয়ে লোকজনকে সরিয়ে আনতে তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ করার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে অস্টিন বলেন, “আমরা তালেবানের সঙ্গে সীমিত কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করেছি, আর সেটি ছিল- যত বেশি সংখ্যক মানুষকে পারা যায় বের করে আনা।”
একই প্রসঙ্গে জেনারেল মিলি বলেন, “যুদ্ধে আপনি আপনার মিশন ও বাহিনীর ঝুঁকি কমাতে যা যা করা দরকার তা-ই করেন, যা করা প্রয়োজন মনে করেন, তা সবসময় করতে পারেন না।”
ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) শাখা আইএস-কে’র বিরুদ্ধে অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র তালেবানের সঙ্গে সমন্বয় করে নিচ্ছে, এমনটা দেখা যেতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।
কাবুল বিমানবন্দরের কাছে গত সপ্তাহে যে আত্মঘাতী হামলায় ১৩ মার্কিন সেনাসহ ১৭০ জন প্রাণ হারিয়েছেন, আইএস-কে ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে।
আফগানিস্তানে যতগুলো জিহাদি জঙ্গিগোষ্ঠী সক্রিয়, আইএস-কে তাদের মধ্যে সবচেয়ে উগ্র ও সহিংস। তালেবানের সঙ্গে তাদের বিরোধও প্রকাশ্য।
তালেবান জিহাদ ও যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ আইএস-কে’র।
সংবাদ সম্মেলনে অস্টিন বলেছেন, ভবিষ্যতে তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করবে কিনা, সে বিষয়ে এখনি কোনো অনুমান করতে রাজি নন তিনি।
“আমাদের নজর যেন আইএস-কে’র ওপর থাকে, আমরা যেন তাদের নেটওয়ার্কের কাজকর্ম বুঝি তা নিশ্চিত করতে এবং ভবিষ্যতে আমাদের বেছে নেওয়া সময়ে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে কর্মকর্তারা যা যা করা দরকার, সব করবেন,” বলেছেন এ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
লাখো মানুষকে আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে আনার পর এখনও দেশটিতে ১০০ থেকে ২০০ মার্কিনি রয়ে গেছেন বলে অনুমান ওয়াশিংটনের। তাদের পাশাপাশি মার্কিনিদের সহযোগিতা করা আরও আফগানকে দেশটি থেকে বের করে আনতে ‘সম্ভাব্য সব উপায়’ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জো বাইডেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।
বিদেশি সেনারা আফগানিস্তান ছাড়ার পর বুধবার তালেবান যোদ্ধাদের উল্লাসে মাততে দেখা গেছে। কট্টরপন্থি এ গোষ্ঠীটি এখন সরকার গঠনে মনোযোগী।
কাতারে তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের উপপ্রধান শের আব্বাস স্তানিকজা বলেছেন, দুই একদিনের মধ্যেই নতুন সরকার পাবে আফগানিস্তান।
শীর্ষ পদে না থাকলেও এ সরকারে নারীরা নিচের দিকের বিভিন্ন দায়িত্বে থাকবেন বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি।
গত দুই দশক আফগানিস্তানের সরকারে যারা ছিলেন, তারা নতুন এ সরকারে জায়গা পাবেন না, বলেছেন প্রভাবশালী এ তালেবান নেতা।