আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের বিমানবন্দরে সন্ত্রাসী হামলার সতর্কতা জারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ‘আত্মঘাতী’ বোমা বিস্ফোরণে মার্কিন সেনাসহ বহু মানুষের প্রাণ গেছে।
Published : 26 Aug 2021, 08:19 PM
আফগানিস্তানের এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, দুই দফা বিস্ফোরণে অন্তত ৬০ জন নিহত হয়েছে। আর আহত হয়েছে ১৪০ জন।
তালেবান বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় এই জোড়া বিস্ফোরণ ঘটেছে। বিস্ফোরণে ১২ মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে বিবিসি।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাবুলে বিমানবন্দরের কাছে ব্যারন হোটেলের গেইটে প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটে। সেখানে গোলাগুলিও হয়। তার পরপরই বিমানবন্দরের অ্যাবি গেইটের কাছে ভিড়ের মধ্যে ঘটে দ্বিতীয় বিস্ফোরণ।
বিমানবন্দরের বাইরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা তালেবান যোদ্ধারাও বিস্ফোরণে আহত হয়েছে বলে ওই বাহিনীর একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ধারণা করছিলেন, ইসলামিক স্টেটের খোরাসান গ্রুপ (আইএসআইএস-কে) এর পেছনে থাকতে পারে।
রাতে টেলিগ্রামে আইএস এর মুখপত্র আমাক নিউজ এজেন্সির এক বার্তায় দাবি করা হয়, কাবুল বিমানবন্দরের আত্মঘাতী এই বোমা হামলা তাদেরই কাজ।
We can confirm that the explosion near the Abbey Gate of the Kabul airport has resulted in an unknown number of casualties. We will continue to update.
— John Kirby (@PentagonPresSec) August 26, 2021
১১ দিন আগে তালেবানের হাতে কাবুলের পতন হওয়ার পর এই হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়েই ৮২ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিদেশিদের পাশাপাশি আফগানরাও রয়েছেন তাদের মধ্যে।
৩১ অগাস্টের চূড়ান্ত সময়সীমার মধ্যে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য তোড়জোড় করছে পশ্চিমা দেশগুলো। দেশ ছাড়ার চেষ্টায় হাজার হাজার আফগানও মরিয়া হয়ে বিমানবন্দরের ভেতরে ও বাইরে অপেক্ষা করছেন প্রতিদিন।
এই নাজুক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএস সেখানে হামলা চালাতে পারে বলে খবর আসছিল গত কয়েক দিন ধরেই।
কাবুল বিমানবন্দর সন্ত্রাসী হামলার ‘উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের ওই এলাকা এড়িয়ে চলতে বলেছিল বুধবার।
Explosion at #KabulAirport a moment ago! I am safe.#Kabul#Afghanistan pic.twitter.com/iA4ajbCi5d
— Aisha Ahmad (@AishaTaIks) August 26, 2021
এই সতর্কবার্তার মধ্যেই যুক্তরাজ্যের আর্মড ফোর্সেস বিভাগের জুনিয়র মন্ত্রী জেমস হিপি বৃহস্পতিবার বিবিসি রেডিও ফোরকে বলেন, কাবুল বিমানবন্দরে মারাত্মক হামলার চেষ্টা হতে পারে বলে ‘খুবই বিশ্বাসযোগ্য‘ খবর আছে তার কাছে।
তিনি বলেছিলেন, সম্ভবত কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেরকম কিছু ঘটতে পারে।
এরপর আফগানিস্তানের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি জন কিরবি জানান, কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে এবং এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে অবহিত করা হয়েছে।
Photos: Casualties from blast near Kabul airport this evening. #Afghanistan pic.twitter.com/ZnbQrKf2Yh
— TOLOnews (@TOLOnews) August 26, 2021
বিলাল সারওয়ারি নামের একজন আফগান সাংবাদিক প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে এক টুইটে বলেছেন, বিমানবন্দরের অ্যাবি গেইটের বাইরে কাগজপত্র পরীক্ষার জন্য দিয়ে একটি নালার পাশে অপেক্ষা করছিলেন বহু আফগান। তাদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশুও ছিল। সেখানেই ভিড়ের মধ্যে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটনায় একজন অন্তত আরও একজন সেখানে গুলি চালায়।
আফগানিস্তানের টোলো নিউজের খবরেও ভিড়ের মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটানোর কথা বলা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ফরেন অ্যায়ের্স অ্যান্ড ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্যাটেজি কমিটির সদস্য অ্যালিসিয়া কেয়ার্নস বলেছেন, ব্যারন হোটেলের বাইরে বিস্ফোরণের ঘটনায় বহু মানুষ আহত হয়েছেন। যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের পাশাপাশি আফগানদের মধ্যে কাদের সরিয়ে নেওয়া হবে, তা বাছাইয়ের কাজ চলছে ওই হোটেলে।
এই কনজারভেটিভ এমপি এক টুইটে জানিয়েছেন, ওই হোটেলের উত্তর গেইটের কাছে বোমা হামলার পাশাপাশি গুলিও চালানো হয়েছে।
Sewage canal where Afghans were vetted after their documents was packed with Afghans including women and children. A suicide attacker blew himself up in the middle of a large crowd. At least another attacker started shooting, multiple eye witnesses in the area&a friend tells me. pic.twitter.com/1MHuLOZnDl
— BILAL SARWARY (@bsarwary) August 26, 2021
টোলো নিউজের এক টুইটে দেখা যায়, ঘটনাস্থল থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় মানুষজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিছু ভিডিওতে দেখা যায় রক্ত আর লাশ, আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মানুষের জুতা, ব্যাগ আর বিভিন্ন জিনিসপত্র।
সিএনএস জানিয়েছে, বিস্ফোরণের খবর যখন এল, প্রেসিডেন্ট বাইডেন তখন হোয়াইট হাউজের সিচুয়েশন রুমে আফগানিস্তানের ওপর প্রতিদিনের ব্রিফিং শুনছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনও ছিলেন তার সঙ্গে।
কাবুলে বিস্ফোরণের খবর আসার পরপরই জরুরি বেঠক ডেকেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, পরিস্থিতি হয়ত েএমন দাঁড়াতে পারে যে কোনো কিছুই আর কারও নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।