যুক্তরাষ্ট্র ও এর নেতৃত্বাধীন নেটো জোটের সেনারা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যেতে থাকার মধ্যে সেখানে তালেবানের দৌরাত্ম বেড়ে যাওয়ায় তাদের অগ্রযাত্রা ঠেকাতে এবার হাতে অস্ত্র তুলে নিতে শুরু করেছে সাধারণ আফগানরাও।
Published : 30 Jun 2021, 09:29 PM
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের উত্তরে পারওয়ান প্রদেশের উঁচু পাহাড়ের এক জায়গায় ছোট একটি তালেবান বিরোধী দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ৫৫ বছর বয়সী দোস্ত মোহাম্মদ সালাঙ্গি। হাতে তার অস্ত্র, আর কণ্ঠে কবিতা। মুখে ঘন দাড়ি, মাথায় ঐতিহ্যবাহী টুপি পরা এই আফগান দেশে তালেবানের উত্থান ঠেকাতে বদ্ধপরিকর।
তালেবানকে দেওয়া এক হুঁশিয়ারি বার্তায় তিনি বলেছেন, “তারা (তালেবান) যদি আমাদের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়, আমাদের ওপর অত্যাচার চালায়, নারীদেরকে তাদের সম্পত্তি মনে করে, জনগণের সম্পত্তি দখল করে- তাহলে এমনকী আমাদের সাত বছর বয়সী বাচ্চারাও অস্ত্র হাতে নেবে এবং তাদেরকে রুখে দাঁড়াবে।”
তালেবানের বিরুদ্ধে লড়তে প্রস্তুত শত শত সাবেক ‘মুজাহিদীন’ যোদ্ধা ও সাধারণ মানুষদেরই একজন এই সালাঙ্গি, যারা আফগানিস্তানে তালেবানের পুনরুত্থান ঠেকাতে সেনাবাহিনীকে সাহায্য করার জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার তাগিদ অনুভব করেছেন।
পারওয়ান প্রদেশের স্থানীয় একটি তালেবানবিরোধী নেতাদের দলে যোগ দেওয়া এক ছাত্র ফরিদ মোহাম্মদ বলেন, “আমাদের দেশকে আমাদেরই রক্ষা করতে হবে… বিদেশি শক্তি যখন আমাদের ছেড়ে চলে গেছে, তখন আমরা লড়াই করা ছাড়া আর কোনও পথ দেখছি না।”
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের পরই মোতায়েন থাকা জার্মানির সবচেয়ে বড় সেনা দলটি তলপি-তলপা গুটিয়ে চলে যাওয়ার পর কথাগুলো বলছিলেন ফরিদ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং নেটো গত এপ্রিলের মাঝামাঝিতে ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছিল, আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মোটামুটি ১০ হাজার সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। ওই ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধেক সেনাই প্রত্যাহার হয়ে গেছে। আর এর সঙ্গে সঙ্গে আফগানিস্তানে বেড়েছে তালেবান হামলা।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে আফগানিস্তান বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ডেবোরাহ লিয়নসের দেওয়া তথ্যমতে, মে মাস থেকে এ পর্যন্ত ৩৭০টি আফগান জেলার মধ্যে ৫০টিরও বেশি দখল করে নিয়েছে তালেবান। আরও অনেক প্রাদেশিক রাজধানী তালেবান যোদ্ধারা ঘিরে ফেলতে শুরু করেছে এবং দেশের রাজধানী কাবুলের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
তালেবানের দাবি, তারা অন্তত ১০০ জেলা দখল করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আকাশপথে আফগান বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ঘাটতি থাকায় এমন হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেই জেলাগুলো তালেবানমুক্ত করার চেষ্টায় মূলত পুরোনো এসাল্ট রাইফেল, পিস্তল, গ্রেনেড লাঞ্চার নিয়ে সালাঙ্গি এবং ফরিদ মোহাম্মদের মতো সাধারণ মানুষেরা ‘পাবলিক আপরাইজিং ফোর্স’-এর অংশ হিসাবে স্থানীয়দের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে।
আফগান প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনীর মুখপাত্র আজমল ওমর জানান, তালেবানের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নিতে আগ্রহী আফগানদেরকে আঞ্চলিক সেনাবাহিনীতে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু উত্তরোত্তর আরও অনেক গ্রুপ অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার ফলে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধের ঝুঁকি বাড়ছে বলে সতর্ক করেছেন কয়েকজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
আফগানিস্তানে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি চলতি মাসেই ওয়াশিংটন সফর করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করতে। বাইডেন এ ব্যাপারে আফগানিস্তানকে সহযোগিতা করে যাওয়ার আশ্বাস দিলেও বলেছেন, আফগানদেরকে নিজের ভাগ্য নিজেদেরই নির্ধারণ করে নিতে হবে।
আফগানিস্তানে সংকটের একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে পাওয়ার চেষ্টায় আলোচনার প্রক্রিয়া থমকে আছে। যদিও আফগান শান্তি পরিষদের প্রধান বলেছেন, তালেবান হামলা বাড়লেও এ চেষ্টা ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।