বিবিসি জানায়, আফগানিস্তান বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ডেবোরাহ লিয়নস নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, মে মাস থেকে এ পর্যন্ত দেশটির ৩৭০টি জেলার মধ্যে ৫০টিরও বেশি দখল করে নিয়েছে তালেবান।
এ অবস্থায় আফগানিস্তানে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন লিয়নস। তিনি বলেন, আফগানিস্তানে সংঘাত বেড়ে যাওয়ার মানে হল, কাছের বা দূরের অনেক দেশের নিরাপত্তাহীনতা বেড়ে যাওয়া।
আফগানিস্তান থেকে সব সেনা প্রত্যাহার করতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও নেটো। চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহারের সময়সীমা নির্ধারণ করা আছে।
পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি আফগানিস্তানের পরিস্থিতি ‘গতিশীল’ বলে বর্ণনা করেছেন। তালেবান হামলা বেড়ে গেলেও সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা এখনও পরিবর্তন করেনি পেন্টাগন। তবে তা পরিবর্তন হতে পারে এবং সেনা প্রত্যাহারের গতি শ্লথ করা হতে পারে বলে পেন্টাগন এরই মধ্যে জানিয়েছে।
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদকে ডেবোরাহ বলেন, কট্টরপন্থি তালেবান গোষ্ঠীর সাম্প্রতিক অগ্রযাত্রা ‘জোরাল সামরিক অভিযানেরই’ ফল।
তিনি বলেন, “যে জেলাগুলো তারা দখলে নিয়েছে সেগুলো বিভিন্ন প্রাদেশিক রাজধানীকে ঘিরে থাকা জেলা। তার মানে, বিদেশি বাহিনী চলে যাওয়া মাত্রই এই প্রাদেশিক রাজধানীগুলো দখলে নেওয়ার জন্য তালেবান যোদ্ধারা এখন থেকেই অবস্থান নিচ্ছে।”
মঙ্গলবার তালেবান আফগানিস্তান-তাজিকিস্তানের প্রধান সীমান্ত পারাপার এলাকা দখলে নিয়েছে। এই সীমান্তর অবস্থান উত্তরের কুনদুজ প্রদেশে, যেখানে তালেবান ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে সংঘর্ষ বেড়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, তালেবান সরকারি বাহিনীর কাছ থেকে বিপুল সংখ্যক সামরিক সরঞ্জাম ছিনিয়ে নিয়েছে। তারা এই বাহিনীর অনেক সদস্যকে হত্যা, জখম এবং জিম্মিও করেছে। তবে তালেবানের পক্ষে হতাহতের সংখ্যা পরিষ্কার জানা যায়নি। আফগান নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, হারানো অঞ্চল ফিরে পেতে তারা খুব দ্রুতই বড় ধরনের অভিযান শুরু করবে।
আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির দাবি, সরকারি বাহিনী তালেবান জঙ্গিদের মোকাবেলা করতে সক্ষম। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে দেশটিতে তালেবানের দাপট বাড়ছে। অনেকেই মনে করেন, বিদেশি সেনারা চলে গেলে আফগানিস্তান আবার তালেবানের কব্জায় চলে যাবে।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার জেরে আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান চালিয়ে তালেবান শাসন উৎখাত করে মার্কিন নেতৃত্বধীন বাহিনী। দীর্ঘ ২০ বছরের এই যুদ্ধের ইতি টেনে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সেনা প্রত্যাহারের কাজ এ পর্যন্ত অনেকটাই এগিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অবশ্য প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, সেনা প্রত্যাহারের পরও আফগানিস্তানকে সহায়তা, সমর্থন দিয়ে যাবে তার দেশ। তবে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি আর থাকবে না।