জাতীয় নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে হংকংয়ে সংবাদপত্র কাযালয়ে এটাই প্রথম পুলিশি অভিযান বলে এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে।
এতে বলা, সাংবাদিকতার কাজে ব্যবহৃত সামগ্রী জব্দ করার পরোয়ানা নিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে ওই অভিযান চালানো হয়। পুলিশের পাঁচশ সদস্য পত্রিকাটির বার্তাকক্ষে প্রবেশ করে।
তারা সাংবাদিকদের কম্পিউটার ও নোটবুক তল্লাশি করে। পাঁচ জন নির্বাহী কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে বার্তাকক্ষের কম্পিউটারগুলোর সামনেও পুলিশ কর্মকর্তাদের বসে থাকতে দেখা যায়।
এই অভিযান হংকংয়ের গণমাধ্যমের প্রভাবশালী ধনকুবের জিমি লাইয়ের ওপর আরেকটি বড় আঘাত, যিনি অ্যাপল ডেইলি ট্যাবলয়েডের মালিক এবং বেজিংয়ের নীতির একজন কড়া সমালোচক।
চীনের জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অধীনে তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এবং বেআইনি সমাবেশে অংশ নেওয়ায় এখন তিনি কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, সাংবাদিকদের ফোনসেট ও কম্পিউটার থেকে তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে এই পরোয়ানা জারি করা জয়। এই ঘটনার পর সেখানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিষয়ে সতর্কবার্তা আরও জোরেশোরে বাজতে শুরু করেছে।
পুলিশ জানায়, ২০১৯ সাল থেকে এই ট্যাবলয়েডটি ডজনখানেকের বেশি প্রতিবেদন ছেপেছে, যা সম্ভবত নিরাপত্তা আইন ভঙ্গ করেছে। তবে সবশেষ নিবন্ধ কবে ছাপা হয়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি তারা।
সংবাদপত্রটির সদরদপ্তরের বাইরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জ্যেষ্ঠ সুপারিনটেনডেন্ট লি কোয়াই-ওয়াহ বলেন, “এসব নিবন্ধের বৈশিষ্ট্য খুবই সোজাসাপ্টা, উসকানিমূলক; চীন ও হংকংয়ের ওপর অবরোধ আরোপে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোকে আহ্বান জানানো।”
লি জানান, অ্যাপল ডেইলির সঙ্গে যুক্ত তিনটি কোম্পানির এক কোটি ৮০ লাখ হংকং ডলার (২৩ লাখ ২০ হাজার ডলার) জব্দ রাখা হয়েছে। এই অভিযান গোটা সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
হংকংয়ের বাইরে অবস্থানরত লাইয়ের পরামর্শক মার্ক সিমোন রয়টার্সকে বলেন, “অ্যাপল ডেইলির সম্পাদকীয় অংশের ওপর এটা সরাসরি হামলা। তারা পত্রিকাটির শীর্ষ সম্পাদকদের গ্রেপ্তার করেছে।”
অ্যাপল ডেইলির কার্যালয়ে এটা পুলিশের দ্বিতীয় অভিযান। এর আগে গত বছর বিদেশি শক্তিদের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ তুলে লাইকে গ্রেপ্তারের জন্য ২০০ পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়।
২০১৯ সালে হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থিদের একটি বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশে, চীনের ভাষায় যা ছিলো বেআইনি, অংশ নেওয়ার দায়সহ বিভিন্ন অভিযোগে গত ডিসেম্বর থেকে কারাভোগ করছেন লাই। নিরাপত্তা আইনের অধীনে মামলা হওয়ায় তার জামিন হয়নি।
চীনের সবচেয়ে বেয়াড়া শহরটিকে একটি কর্তৃত্বপরায়ন শাসনের অধীনে আনতে এই জাতীয় নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন বেইজিংয়ের প্রথম বড় পদক্ষেপ। বেইজিংয়ের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় এমন যেকোন পদক্ষেপই এই আইনের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব।
পুলিশ গ্রেপ্তার পাঁচ জনের নাম প্রকাশ না করলেও, অ্যাপল ডেইলির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তাদের প্রধান বার্তা সম্পাদক রায়ার ল, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা চেয়ুং কিম-হুং, প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা চো তাত-কুয়েন, উপ প্রধান সম্পাদক চ্যান পুইমান ও প্রধান নির্বাহী সম্পাদক চেয়ুং চি-ওয়াইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।