মিয়ানমারে সামরিক জান্তা ‘ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন’ করছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রায় ৩শ’ এমপি। জাতিসংঘকে এই লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
Published : 12 Feb 2021, 09:29 PM
বিবিসি জানায়, জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে পাঠানো এক চিঠিতে এই এমপি’রা অভিযোগ করে বলেছেন, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাচ্ছে।
এর আগে মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার দূত বলেছিলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর তাজা বুলেট ব্যবহারের প্রমাণ আছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারে ক্ষমতার দখল নেয় সেনাবাহিনী। আটক করে নেত্রী সু চিকে, জারি করে একবছরের জরুরি অবস্থা। এরপর থেকেই জান্তার বিরুদ্ধে জনরোষ বড় ধরনের বিক্ষোভে রূপ নিয়েছে।
গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সংকল্পবদ্ধ হয়ে টানা ষষ্ঠদিনের মতো বৃহস্পতিবার মিয়ানমারজুড়ে মানুষ বিক্ষোভ করেছে। এদিন সামরিক জান্তা নেতা জেনারেল মিন অং হ্লাইং প্রথম জনসম্মুখে এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বিক্ষোভের অবসান ঘটিয়ে সরকারি চাকরিজীবীদের অবিলম্বে কাজে ফেরার আহ্বান জানান।
এরপরও শুক্রবার সহিংস বিক্ষোভ হয়েছে। দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় মাওলামাইন শহরে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে তিনজন আহতও হয়েছে।
এদিন জেনেভায় জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত জুলিয়ান ব্রেথওয়েইট মিয়ানমারের এমপি’দের পক্ষ থেকে চিঠি পড়ে শোনান এবং একটি তদন্ত চালিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসার চেষ্টায় সমর্থন দেওয়ার জন্য মানবাধিকার পরিষদকে আহ্বান জানান।
ব্রেথওয়াইট বলেন, সামরিক অভ্যুত্থানের পরিণতিতে মিয়ানমারের বেসামরিক সরকারের নেতারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চলছে, মানুষের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, ইন্টারনেট, মোবাইল পরিষেবার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এর আগে একই বিশেষ অধিবেশনে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের মিয়ানমার বিষয়ক তদন্ত কর্মকর্তা থমাস এন্ড্রু বলেছিলেন, তদন্তকারীদের মিয়ানমারে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে সেখানে বিক্ষোভকারীদের ওপর তাজা গোলাবারুদ ব্যবহারের বহু খবর, এমনকী এর প্রমাণ হিসাবে ছবিও পাওয়া যাচ্ছে।
এন্ড্রু বলেন, মিয়ানমারের জনগণ আশা নিয়ে জাতিসংঘের দিকে চেয়ে আছে। তাই কাগজে কেবল একটি বিবৃতি দেওয়া নয় বরং এর চেয়ে বেশিকিছু করা প্রয়োজন। নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে জাতিসংঘকে মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করাসহ অস্ত্র রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা এবং সামরিক নেতাদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান রক্তপাতহীন হলেও গণবিক্ষোভ দমনে বলপ্রয়োগ করছে জান্তা। বিক্ষোভে পুলিশ প্রথমে জলকামান এবং পরে রাবার বুলেট ব্যবহার করেছে। গত মঙ্গলবার এক নারী গুলিবিদ্ধ হয়। ওইদিনই প্রথম বিক্ষোভে রক্ত ঝরেছে।
নেপিডোর বিক্ষোভে মাথায় গুলিবিদ্ধ নারীর চিকিৎসা যে হাসপাতালে হয়েছে সেখানকার এক চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, এক্স-রে রিপোর্ট অনুযায়ী ওই নারীর মাথায় ‘তাজা গুলিবিদ্ধ হয়েছে’। রাবার বুলেট বিদ্ধ আরও তিনজনের চিকিৎসা চলছে।
এছাড়াও, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রাতে চিকিৎসা পেশায় জড়িতদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে এবং আন্দোলনে জড়িত থাকা নিয়ে তাদেরকে জেরা করা কিংবা আটক করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে। ফেইসবুকে শেয়ার হওয়া কয়েকটি ভিডিওতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর বচসার দৃশ্যও দেখা গেছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ের হিসাবে, মিয়ানমারে ১ ফেব্রয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত ৩৫০ জনেরও বেশি মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছে।