ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে মুসলিম দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) চুক্তি করার পর এবার অন্যান্য মুসলিম দেশকেও এই দলে ভেড়াতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।

>> দ্যনিউ ইয়র্ক টাইমস
Published : 27 August 2020, 10:55 AM
Updated : 27 August 2020, 11:10 AM

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এরই মধ্যে সুদান  এবং বাহরাইন সফর করেছেন।

প্রতিবেশী আরব ও মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক গড়ে দেওয়ার মিশনে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের তালিকার শীর্ষে আছে এই দুই দেশ। যদিও মার্কিন কর্মকর্তারা জানেন রাতারাতি একাজ হবে না।

এজন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত ১৩ অগাস্ট  যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প,  ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং আবু ধাবির যুবরাজ মোহাম্মদ আল নাহিয়ান এক যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে দুই দেশের ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তিতে পৌঁছেনোর কথা জানায়।

পরষ্পরের সঙ্গে টেলিফোন লাইন চালু করার মধ্য দিয়ে ইসরায়েল এবং ইউএই সম্পর্ক স্বাভাবিক করার যাত্রাও শুরু করেছে।

এবার প্রথমবারের মত তেল আবিব থেকে আবু ধাবি সরাসরি বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালুর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। যার উদ্বোধন করতে আগামী সোমবার ইসরায়েলের ফ্ল্যাগ ক্যারিয়ার ‘ইআই এআই’ এর প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট নিয়ে আবু ধাবি যাওয়ার কথা।

ওই ফ্লাইটে ইসরায়েলের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা থাকবেন। তাদের সঙ্গ দিতে আগামী সপ্তাহে ইসরায়েলে কূটনৈতিক দল পাঠাবেন ট্রাম্প। যে দলের নেতৃত্ব দেবেন হোয়াইট হাউজের জ্যোষ্ঠ উপদেষ্টা এবং ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার।

ইসরায়েলের কূটনৈতিক দল সেখানে বিমান পরিবহন, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং ব্যাংকিং খাতে আরও সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করবে। দ্বিপক্ষীয় চুক্তিও সই হওয়ার কথা।

সোমবার ‘ইআই এআই’র ফ্লাইট কূটনীতিকদের নিয়ে কোথা থেকে ছাড়বে বা কোন পথ ব্যবহার করবে সে বিষয়ে কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করেননি।

জর্ডানের সঙ্গে ইআই এআই-র নিয়মিত ফ্লাইট যোগাযোগ আছে। কিন্তু আবু ধাবি যেতে হলে হয় তাদের ইরাকের না হয় সৌদি আরবের আকাশ সীমা ব্যবহার করতে হবে। যেটার অনুমতি এখন পর্যন্ত ইআই এআই-র নেই। ইরাকের প্রধানমন্ত্রী গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। হয়ত সেখানে এ বিষয়ে সবুজ সংকেত পাওয়া গেছে।

যদি ১৩ অগাস্টের চুক্তি (আব্রাহাম অ্যাকর্ড) সম্পূর্ণ কার্যকর হয় তবে মিশর ও জর্ডানের পর ইউএই হবে তৃতীয় আরব রাষ্ট্র যাদের সঙ্গে ইসলায়েলের পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হবে। দুই দেশ রাষ্ট্রদূত পাঠাবে এবং দূতাবাস থাকবে।

আব্রাহাম অ্যাকর্ড মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নেবে বলেই আশা সব পক্ষের। ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের বিশাল অংশ নিজেদের দখলে নেওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করতে রাজি হওয়ার পর আমিরাত দেশটির সঙ্গে এ চুক্তি সই করেছে।

হোয়াইট হাউস চাইছে অন্যান্য আরব এবং মুসলিম দেশগুলোও একই পথ অনুসরণ করুক। যেটি কার্যত ইরানের বিরুদ্ধেই একটি ইসরায়েলি-আরব জোটশক্তি হিসাবে গড়ে উঠবে। এ তালিকায় শীর্ষে আছে সুদান, বাহরাইন এবং ওমান।

ইসরায়েলের সঙ্গে উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর কোনও কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও ইরানের আঞ্চলিক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ থাকার কারণে ইসরায়েলের সঙ্গে এই দেশগুলোর অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ আছে।

১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা ঘোষণার পর ১৯৭৯ সালে মিশর এবং ১৯৯৪ সালে জর্ডানের সঙ্গে চুক্তি সই করে ইসরায়েল। ইরান এবং ফিলিস্তিন ১৩ অগাস্টে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে হওয়া ইসরায়েল-আমিরাতের চুক্তি নিয়ে ক্ষোভে প্রকাশ করেছে।

তবে ফিলিস্তিনকে পাশ কাটিয়ে হলেও যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল-আরব সখ্য গড়ে তুলতে আগ্রহী। তাই সুদানসহ অন্য দেশগুলোকে এ পথে আনার চেষ্টা পুরোদস্তুরভাবেই করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও তেল আবিব থেকে সুদানের ওমদুমানে তার বিমান ভ্রমণের ছবি পোস্ট করে টুইটারে লেখেন, “আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আমরা ইসরায়েল থেকে সুদানে প্রথম সরকারিভাবে বিরতিহীন ফ্লাইটে আছি।”

সেখান থেকে পরে বাহরাইনে উড়ে গিয়ে তিনি টুইটারে লেখেন, “আব্রাহাম অ্যাকর্ড দেখিয়ে দিয়েছে শান্তি অর্জন করা সম্ভব। এই সুযোগ লুফে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”