করোনাভাইরাস মহামারী আরও সমতাসহ মানসম্পন্ন বিশ্ব গড়ে তুলতে কয়েক প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে সেরা সুযোগ নিয়ে হাজির হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
Published : 19 Jul 2020, 06:46 PM
শনিবার নেলসন ম্যান্ডেলা ফাউন্ডেশনের বার্ষিক বক্তৃতায় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে অসাম্যের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ায় শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোকে অভিযুক্ত করেছেন তিনি।
অনলাইনে দেওয়া বক্তৃতায় গুতেরেস আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও বিস্তৃতভাবে এবং ন্যায্যতা অনুযায়ী ক্ষমতা, সম্পদ ও সুযোগের ভাগাভাগি নিশ্চিতে নতুন বিশ্ব ব্যবস্থাপনার উপর জোর দিয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
“সাত দশকেরও আগে যে দেশগুলি শীর্ষে উঠে এসেছিল তারা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিতে ক্ষমতার সম্পর্ক পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলি বিবেচনা করতে অস্বীকার করছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের গঠন ও ভোটের অধিকার এবং ব্রেটন উডস পদ্ধতির বোর্ডগুলি এর উদাহরণ,” বলেন তিনি।
“বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে অসাম্যের শুরু হয় শীর্ষ অবস্থান থেকে; প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের জন্য এই অসাম্য নিয়েই আমাদের কথা বলা উচিত,” বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্ব ব্যাঙ্ক ব্রেটন উডস পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
তিনি বলেন, “আমরা যে সমাজগুলো নির্মাণ করেছি মহামারী এক্সরে ফিল্মের মতোই তার ভঙ্গুর কঙ্কালের ফাটলগুলো উন্মোচিত করেছে।
“সব জায়গায় বিরাজমান ভ্রান্ত ধারণা ও মিথ্যাচার প্রকাশ করে দিচ্ছে এটি: মুক্তবাজার সবাইকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারবে সেই মিথ্যা; বিনাবেতনের সেবামূলক কাজ কাজ না, সেই কল্পকাহিনী; আমরা বর্ণবাদ-উত্তর বিশ্বে বাস করছি সেই বিভ্রম; সেই অতিকথা যে আমরা সবাই একই নৌকায় আছি,” ভার্চুয়াল বক্তৃতায় বলেন গুতেরেস।
“কারণ আমরা যখন একই সাগরে ভাসছি, এটি পরিষ্কার যে কিছু লোক বিলাসবহুল প্রমোদতরীতে আছেন আর অন্যরা ভাসমান খড়কুটা আঁকড়ে ধরে আছেন,” বলেছেন পর্তুগালের সাবেক এ সমাজতন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী।
মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাস এরই মধ্যে বিশ্বের অন্তত এক কোটি ৪৩ লাখেরও বেশি মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়েছে, প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ৬ লাখেরও বেশি মানুষের।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় জাতিসংঘ দরিদ্র দেশগুলোর জন্য ধনী দেশগুলোর কাছে এক হাজার ৩০ কোটি ডলার চাইলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ১৭০ কোটি ডলার পেয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
গুতেরেস বলেছেন, ধনী দেশগুলো উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
পরিবর্তিত বিশ্বে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা এবং সার্বজনীন ন্যূনতম আয় নিশ্চিতের সম্ভাব্যতাসহ সামাজিক নিরাপত্তা জাল ও নতুন সামাজিক সুরক্ষা নীতিমালা প্রয়োজন বলেও মত তার।
“আমরা কি বিশৃঙ্খলা, বিভেদ ও অসাম্যের ভেতর নিমজ্জিত থাকবো? নাকি অতীতের ভুলগুলো ঠিক করে সবার ভালোর জন্য একসঙ্গে অগ্রসর হবো? এখনই সময় বিশ্বনেতাদের এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার,” বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।