চীনে করোনাভাইরাসে মৃত্যু তিনশ ছাড়ালো

এক দিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক আক্রান্তের মধ্য দিয়ে চীনে নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, প্রাণ গেছে তিনশর বেশি মানুষের।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Feb 2020, 04:09 AM
Updated : 2 Feb 2020, 06:00 AM

ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও গণপরিবহন বন্ধ করেও এ ভাইরাসের দ্রুত বিস্তার ঠেকানো যাচ্ছে না, আটকানো যাচ্ছে না অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা।  

চীনের বাইরে প্রথম এ ভাইরাসে মৃত্যুর খবর এসেছে ফিলিপিন্স থেকে, তিনি চীনেরই একজন নাগরিক।  

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, শনিবার একদিনেই নতুন করে ২ হাজার ৫৯০ জনের শরীরে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাতে চীনে এ পর্যন্ত আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৩৮০ জনে। আরও ৪৫ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে চীনে এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০৪ জনে।

শনিবার যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের সবাই এবং যাদের মধ্যে নতুন করে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, তাদের অধিকাংশই হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা। এ প্রদেশের উহান শহরের একটি সি ফুড মার্কেট থেকেই গতবছরের শেষে নভেল করোনাভাইরাস ছড়ানো শুরু হয়। 

 

নভেল করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে উহানসহ বেশ কয়েকটি শহর বার্যত অবরুদ্ধ করে রেখেছে চীন। গণপরিবহন বন্ধ রাখায় ছয় কোটি মানুষের চলাচল হয়ে পড়েছে সীমিত। বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের চীন থেকে সরিয়ে নিচ্ছে জারি করছে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা।

এয়ারলাইন্সগুলো চীনের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট কমিয়ে দিচ্ছে বা বন্ধ করে দিচ্ছে। শঙ্কিত কয়েকটি দেশ তাদের সীমান্তেও চীনাদের জন্য কড়াকড়ি আরোপ করেছে। সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া সম্প্রতিক সময়ে চীন ভ্রমণ করা বিদেশিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

রাশিয়াও চীনাদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। হুবেইতে থাকা রুশ নাগরিকদের সোম ও মঙ্গলবার সরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স ও টিএএসএস।

হুবেই থেকে সরিয়ে নেওয়া জার্মানির শতাধিক নাগরিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা শনিবার ফ্রাঙ্কফুর্টে পৌঁছেছেন। ২৫০ জনের মতো ইন্দোনেশীয় নাগরিককেও হুবেই থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে বিচ্ছিন্নতার মুখে পড়ছে চীন, তাতে বড় ধরনের ধাক্কার মুখে পড়ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির এই দেশটি। যদিও গত সপ্তাহে বৈশ্বিক সতর্কতা জারি করার সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বাণিজ্য বা ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপের প্রয়োজনের নেই বলে জানিয়েছিল।

এত কিছুর পরও দুই ডজনের বেশি দেশ ও অঞ্চলে অন্তত ১৩০ জনের দেহে নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ধরা পড়ছে। চীনের বাইরে প্রথমবারের মত ফিলিপিন্সে এ ভাইরাসে একজনের মৃত্যুর খবর শনিবার নিশ্চিত করেছে দেশটির সরকার।

চীনের বাইরে আক্রান্তদের অধিকাংশই সম্প্রতি হুবেই ভ্রমণ করেছেন অথবা সেখান থেকে ফিরেছিলেন। কয়েকটি দেশে তাদের মাধ্যমে এ ভাইরাস অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়েছে, যারা কখনও চীনে যাননি।

ফিলিপিন্স সরকার জানিয়েছে, সেখানে এ পর্যন্ত দুজনের মধ্যে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পরেছিল, তাদের মধ্যে ৪৪ বছর বয়সী এক চীনা নাগরিক শনিবার মারা গেছেন। ওই চীনা নাগরিক সম্প্রতি উহান থেকেই ফিলিপিন্সে গিয়েছিলেন।

নভেল করোনাভাইরাস

মধ্য চীনের উহান শহরে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর নতুন এক করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। একে বলা হচ্ছে নভেল করোনাভাইরাস বা ২০১৯-এনসিওভি।

২০০২ সালে সার্স এবং ২০১২ সালের মার্সের মত একই পরিবারের সদস্য নভেল করোনাভাইরাস সাধারণ ফ্লুর মত হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়াতে পারে, ছড়াতে পারে মানুষ থেকে মানুষে।

করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। উপসর্গগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মত।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরোনো রোগীদের ক্ষেত্রে ডেকে আনতে পারে মৃত্যু।

নভেল করোনাভাইরাস এর কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনো তৈরি হয়নি। ফলে এমন কোনো চিকিৎসা এখনও মানুষের জানা নেই, যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। আপাতত একমাত্র উপায় হল, যারা ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন বা এ ভাইরাস বহন করছেন- তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।