মধ্য আমেরিকার দেশগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থীদের আশ্রয় প্রার্থনা ঠেকাতে নতুন আরেক নিয়ম ঘোষণা করেছে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রসাশন।
Published : 16 Jul 2019, 11:31 PM
এ নিয়মে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পথে শরণার্থীরা প্রথম যে দেশ হয়ে আসবে সেই দেশেই আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। ফলে নিয়মটি যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় প্রার্থনার ক্ষেত্রে শরণার্থীদের জন্য এক নতুন বাধার দেয়াল হয়ে দাঁড়াল।
বিবিসি জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন সোমবার ‘নিরাপদ তৃতীয় দেশ’-এ শরণার্থীদের আশ্রয় খোঁজার এ নিয়ম ঘোষণা করেছে এবং মঙ্গলবার থেকে তা কার্যকর হচ্ছে।
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের এ বিধান কর্যকরী হবে কিনা বা শরণার্থীদের জন্য তা কতটা নিরাপদ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা বলা হলেও নতুন শরণার্থী নীতিতে কিছু আইনি জটিলতাও আছে।
বিবিসি জানায়, নতুন নিয়মটি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস অনুমোদিত নয়। কেবলমাত্র বিচার বিভাগ এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ যৌথভাবে এ নিয়ম ঘোষণা করেছে। ফলে মার্কিন ফেডারেল আদালতে নিয়মটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
অন্যের ঘাড়ে দায়িত্ব দেওয়া:
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে জড় হওয়া শরণার্থীদের বেশিভাগই এসেছে মধ্য আমেরিকার দেশ, বিশেষ করে সহিংসতা-বিক্ষুব্ধ হন্ডুরাস ও এল সালভাদর থেকে।
তাদের বেশিরভাগই এসেছে ভূমির উপর দিয়ে, নানা দেশে হয়ে। যুক্তরাষ্ট্র এ শরণার্থীদেরকে তাদের নিজ দেশের বাইরে তারা প্রথম যে দেশে পা রাখছে সেখানেই আটকে দিতে চাইছে।
যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি, যেহেতু তাদের অভিবাসন ব্যবস্থা উপচে পড়ছে তাই তারা তাদের নীতিতে এ পরিবর্তন আনছে। যদিও অন্যান্য দেশকেও বিশাল এই শরণার্থীর ঢল সামাল দিতে হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এ নিয়মের কারণে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হবে মেক্সিকো ও গুয়াতেমালাকে। কারণ, দেশ দুটি যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে অবস্থিত।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর পক্ষ থেকে বলা হয়, “মেক্সিকোতে এরইমধ্যে তাদের সক্ষমতার অতিরিক্ত শরণার্থী জড় হয়েছে। শরণার্থীদের জন্য বিদেশি সাহায্যও অপ্রতুল। এমনকি তাদের অভিবাসন সংস্থাগুলো আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন যাচাই-বাছাই করতেও অক্ষম।”
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র এরইমধ্যে ‘মাইগ্রেন্ট প্রোটেকশন প্রোটকল’ (এমপিপি) প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু করেছে। ওই প্রকল্প ‘মেক্সিকোতে থাকো’ নামেও পরিচিত। ওই প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে শুনানি চলাকালে আশ্রয় প্রার্থনা করা ব্যক্তিদের মেক্সিকোতে থাকতে বাধ্য করা হয়।
কে ‘নিরাপদ দেশ’ ঠিক করবে?
নানা কারণে নিজদেশ থেকে পালানো শরণার্থীরা স্বাভাবিকভাবেই অন্য যে দেশ নিরাপদ মনে করবে সে দেশেই আশ্রয় প্রার্থনা করবে। কিন্তু কে নিরাপদ দেশ ঠিক করে দেবে?
মধ্য আমেরিকার দেশগুলোর শরণার্থীরা প্রায়ই তাদের প্রতিবেশী দেশের সন্ত্রাস চক্রের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। শরণার্থীদের অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়ে চক্রগুলো তাদের দলে ভেড়ায়।
সংবাদমাধ্যমেও ইতোমধ্যে এ ধরনের খবর আসতে শুরু করেছে। ওইসব শরণার্থী যুক্তরাষ্ট্র তথা দক্ষিণের দেশগুলোতে আশ্রয় পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে উত্তরের বিভিন্ন দেশের পথে যাত্রা করছে। অথচ সেখানে তাদের জীবন তাদের নিজ দেশের তুলনায় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।
এছাড়া, কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র কোনো দেশকে নিরাপদ ঘোষণাও করতে পারে না।
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে এ ধরনের চুক্তি আছে। তাই যখন কোনো শরণার্থী কানাডা হয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশের চেষ্টা করে তখন তাদের কানাডার অভিবাসন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
গুয়াতেমালার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জিমি মোরালেস এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু দেশটির সাংবিধানিক আদালত সোমবার ওই আলোচনার পথ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়।
কারণ, যখন কোনো দেশের নিজেদের নাগরিকরাই অন্য দেশে শরণার্থী হচ্ছে, তখন ওই দেশকে নিরাপদ বলে কোনো চুক্তি করা যায় না।
সেদিক দিয়ে গুয়াতেমালা এবং মেক্সিকো উভয় দেশের নাগরিকরাই উন্নত জীবনের আশায় দেশ ছাড়ছেন।