চীনের সামরিক বাহিনী প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদেশগুলোর বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলার প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন।
Published : 17 Aug 2018, 05:52 PM
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক বার্ষিক প্রতিবেদনে পেন্টাগন এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, চীন তাদের বোমারু বিমান অভিযানের আওতা বাড়াচ্ছে। বিমানগুলোকে আরো দূরে পাঠানোর সক্ষমতা বাড়াচ্ছে তারা।
মার্কিন কংগ্রেসকে দেওয়া এ প্রতিবেদনে চীনের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টিসহ দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যয় বরাদ্দ ২০১৭ সালে বেড়ে ১৯ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে বলেও জানানো হয়েছে। বলা হচ্ছে, এ ব্যয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ।
তবে চীন এ প্রতিবেদনের ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে চীনের টান টান উত্তেজনার এ সময়টিতে পেণ্টাগন দেশটির সামরিক সক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক উচ্চাকাঙ্খার সামগ্রিক মূল্যায়নের অংশ হিসাবে তাদের সামরিক কর্মকাণ্ড এবং বিশ্বে প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা সম্পর্কে এ সতর্কবার্তা দিল।
প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে
প্রতিবেদন বলছে, "গত তিন বছরে চীনের সশস্ত্র বাহিনী ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি’ (পিএলএ) সমুদ্রের ওপর তাদের বোমারু বিমান উড্ডয়ন এলাকা ত্বরিত গতিতে বাড়িয়েছে। পাশাপাশি তারা গুরুত্বপূর্ণ সাগর অঞ্চলগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানসহ অন্যান্য মিত্রদেশের বিরুদ্ধে হামলার প্রশিক্ষণও নিচ্ছে।”
উদাহরণস্বরূপ, ২০১৭ সালের অগাস্টে জাপানের ওকিনাওয়া দ্বীপের দক্ষিণে মায়াকো প্রণালীর ওপর দিয়ে চীনের সামরিক বাহিনীর ‘এইচ-সিক্সকে’ বোমারু বিমানের উড্ডয়ন এবং দিক পরিবর্তনের কথা জানিয়েছে পেণ্টাগন। বলা হয়েছে, বিমানটি প্রথবারের মত ওকিনাওয়ার পূর্ব দিকে উড়ার জন্য উত্তরে মোড় নেয় এবং আরো উত্তরে পশ্চিম জাপানের কিই উপদ্বীপের দিকে যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “এইচ-সিক্সকে বোমারু বিমানের এমন উড্ডয়নেই বোঝা যায় সেগুলো নিজস্ব আওতা থেকে আরো দূরে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের লক্ষ্যবস্তুর ওপর আঘাত হানতে সক্ষম।”
তবে এ বিমান উড়ানোর মধ্য দিয়ে চীন কী প্রমাণ করতে চাইছে তা স্পষ্ট নয় বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, “চীন পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের নানা টার্গেটে এবং গুয়ামসহ সামরিক ঘাঁটিগুলোতে আঘাত হানার সক্ষমতাও দেখাতে পারে।”
তাছাড়া, “চীনের এইচ-সিক্সকে বোমারু বিমান এর আগে দূরে উড়ে যাওয়ার যে পারদর্শীতা দেখিয়েছে তাতে ভবিষ্যতে এটি জাপানের চারপাশসহ ফিলিপাইন উপকূল এমনকি আরো দূরে ফিলিপাইন সাগরের ওপরও অভিযানে উড়ে যেতে পারে।”
শুধু বিমান হামলাই নয়, চীন তাদের স্থলবাহিনীকেও ‘লড়াই করা এবং জয় ছিনিয়ে আনার’ জন্য ঢেলে সাজাচ্ছে এবং আগামী ১০ বছরে দেশটির সামরিক বাজেট বেড়ে ২৪ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়াবে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন।
উদ্বেগটি কোনখানে?
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব বাড়তে থাকা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। যদিও এ অঞ্চলে ওয়াশিংটনের এখনো একটি বড় ভূমিকা আছে।
তারপরও এ অঞ্চলে সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ জায়গাটি হচ্ছে দক্ষিণ চীন সাগর। যার অধিকাংশ এলাকাই চীন ও অন্যান্য দেশগুলো দাবি করে আসছে।
দক্ষিণ চীন সাগর দিয়ে নৌ চলাচলের অধিকার প্রমাণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রায় নিয়মিতই ওই অঞ্চলে বিমান পাঠায়।
কিন্তু চীন সেখানকার বিতর্কিত দ্বীপগুলোতে সামরিক স্থাপনা গড়ে তুলছে এবং শক্তি বাড়াচ্ছে। বিভিন্ন প্রশিক্ষণে সেখানে চীনের বোমারু বিমানও অবতরণ করে।
চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনার আরেকটি কারণ তাইওয়ান। চীন তাইওয়ানকে বরাবরই তাদের একটি বিচ্ছিন্ন প্রদেশ বলে মনে করে।
পেন্টাগনের প্রতিবেদনে হুঁশিয়ার করে বলা হয়েছে, চীন হয়ত জোর করে তাইওয়ানকে তাদের সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে।
তাইওয়ানের পক্ষ থেকে যে কোনো তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের ঘোর বিরোধিতা করে আসছে চীন।
যুক্তরাষ্ট্র সেখানে হস্তক্ষেপ করলে চীন সঙ্গে সঙ্গে তা রুখে না দাঁড়িয়ে বরং স্বল্প সময়ের জন্য সীমিত আকারে একটি প্রবল যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জয় ছিনিয়ে আনার চেষ্টা নিতে পারে।
চীনের আস্থা অর্জনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭৯ সালে তাইওয়ানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। তারপরও তাইওয়ানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বজায় রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। আর এতেই চীন বিরক্ত।
তাছাড়া, জাপানেও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি আছে। জাপান এবং ফিলিপাইনের সঙ্গে চীনের আঞ্চলিক বিরোধ থাকার কারণে দেশটি এ নিয়েও ক্ষুব্ধ।
এসবকিছু বাদেও অসামরিক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একে অপরের পণ্যের ওপর পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ করা নিয়েও সম্প্রতি ঘোর বিরোধে জড়িয়েছে।