পাকিস্তানের মানবাধিকারকর্মী আসমা জাহাঙ্গীর আর নেই

বাংলাদেশের বন্ধু, পাকিস্তানের মানবাধিকারকর্মী আইনজীবী আসমা জাহাঙ্গীর মারা গেছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2018, 10:37 AM
Updated : 11 Feb 2018, 12:22 PM

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রোববার হাসপাতালে যাওয়ার পর তার মৃত্যু হয় বলে পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডননিউজ জানিয়েছে।

আসমা জাহাঙ্গীরের বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।

নিজেদের জীবনকে হুমকির মধ্যে ঠেলে দিয়ে একাত্তরে নির্যাতিত বাঙালির পক্ষে যেসব পাকিস্তানি দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের অন্যতম ছিলেন আসমার বাবা মালিক গোলাম জিলানী।

১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের পর তার মুক্তি দাবিতে জেনারেল ইয়াহিয়াকে খোলা চিঠি লেখেন তিনি। এজন্য কারাবরণ করতে হয় তাকে।

২০১৩ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ানো ৬৯ জন বিদেশি বন্ধুকে সম্মাননা দেওয়া হয়। তার মধ্যে যে ১৩ জন ছিলেন পাকিস্তানি ছিলেন, তাদের এক মালিক গোলাম জিলানী।

আসমা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে শেখ হাসিনা, বাবা মালিক গোলাম জিলানীর সম্মাননা নিতে ঢাকায় আসেন তিনি।

ওই সময় বাবার সম্মাননা সনদ নেন তার মেয়ে আসমা জাহাঙ্গীর, মানবাধিকার আন্দোলনের এই নেত্রী বাংলাদেশেও পরিচিত মুখ।

মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে সংঘটিত বর্বরতার জন্য পাকিস্তান রাষ্ট্রকে ক্ষমা চাওয়ানোর দাবিতে সোচ্চার ছিলেন আসমা জাহাঙ্গীর।

বাংলাদেশে দুই যুদ্ধাপরাধীর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর নিয়ে পাকিস্তান সরকারের ‘দ্বৈতনীতির’ সমালোচনা করায় অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাকিস্তানিদের রোষের মুখেও পড়েছিলেন তিনি।

ডন লিখেছে, চূড়ান্ত নিপীড়ন ও নির্যাতনের মুখেও অটল এই আইনজীবী মানবাধিকার রক্ষায় বরাবরই সোচ্চার ছিলেন। পাকিস্তানকে আরও গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রের পরিণত করার সংগ্রামে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

সংগ্রামের শিখরে যার চরিত্র

১৯৫২ সালে লাহোরে জন্ম নেওয়া আসমা জাহাঙ্গীর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি নেন। তিনি আইনজীবী ১৯৮০ সালে লাহোর হাই কোর্টে এবং ১৯৮২ সালে সুপ্রিম কোর্টে হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। পরে তিনি নারী হিসেবে প্রথম সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্টও হন।

সামরিক শাসক জিয়াউল হকের আমলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে গিয়ে ১৯৮৩ সালে তিনি কারাবন্দি হন। ২০০৭ সালে আইনজীবীদের আন্দোলনেও তিনি সক্রিয় ছিলেন, এবং তাকে গৃহবন্দি করা হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ বাবা মালিক গোলাম জিলানীর পক্ষে নেন পাকিস্তানের মানবাধিকার নেত্রী আসমা জাহাঙ্গীর।

হিউম্যান রাইটস কমিশন অব পাকিস্তান এবং উইমেন’স অ্যাকশন ফোরাম প্রতিষ্ঠায় তিনি যৌথ অংশীদার ছিলেন।

২০১০ সালে হিলাল-ই-ইমতিয়াজ ও সিতারা-ই-ইমতিয়াজসহ একাধিক সম্মাননা পেয়েছেন। মানবাধিকার সংস্কৃতির উন্নয়নে ভূমিকার জন্য তিনি ইউনেসকো/বিলবাও পুরস্কারও এবং ফরাসি সরকারের দে লা লিজিঅঁ ডি অনার পুরস্কার পান।

তিনি ২০১৪ সালে রাইট লাইভলিহুড অ্যাওয়ার্ড ও ২০১০ সালে ফ্রিডম অ্যাওয়ার্ড পান।