আসমা জাহাঙ্গীরকে পাকিস্তান ছাড়া করার হুমকি

বাংলাদেশে দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর নিয়ে পাকিস্তান সরকারের ‘দ্বৈতনীতির’ সমালোচনা করায় অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাকিস্তানিদের রোষের মুখে পড়েছেন মানবাধিকারকর্মী আসমা জাহাঙ্গীর।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2015, 12:15 PM
Updated : 26 Nov 2015, 12:45 PM

টুইটারে ‘আসমা জাহাঙ্গীরকে এখনই বের করে দাও’ (#DeportAsmaJahangirNow) হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে তার এই সমালোচনা করা হচ্ছে। তাকে পাকিস্তান থেকে বের করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।  

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে ঢাকায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার ইসলামাবাদ হাই কোর্টে সাংবাদিকদের সামনে নিজের মতামত তুলে ধরেন আসমা জাহাঙ্গীর।

তিনি বলেছিলেন, “পাকিস্তানের সামরিক আদালতে বা সৌদি আরবে অন্যায্যভাবে কাউকে ফাঁসিতে ঝোলানো হলে সরকারকে এতটা উতলা হতে দেখা যায় না, যতটা বাংলাদেশের বিরোধী দলের দুই রাজনীতিবিদের ক্ষেত্রে দেখা গেল।

“সরকার এই আচরণের মাধ্যমে শুধু এটাই প্রমাণ করল যে, বাংলাদেশে যাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে তারা আসলে ছিল রাজনৈতিক চর, তারা কাজ করছিল পাকিস্তানের স্বার্থের জন্য।”

তার এই বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া আসছে পাকিস্তানি অনেকের মধ্য থেকে।  

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টার দিকে আয়শা বেলুচ নামের একজন ওই হ্যাশট্যাগ (#DeportAsmaJahangirNow) ব্যবহার করে টুইট করেছেন, “আসমা জাহাঙ্গীরের দ্বৈতনীতির বিষয়টি আর গোপন নাই।”

এর আগের  টুইটে আয়শা বেলুচ বলেন, “তিনি বাংলাদেশকে এত বেশি ভালোবাসলে এখনও সেখানে যাননি কেন?”

আরেকটি টুইটে তিনি বলেছেন, “আসমা জাহাঙ্গীর তার প্রিয় বাংলাদেশের অবিচার নিয়ে কোনো কথা বলছেন না।”

আসমা জাহাঙ্গীর

বেলা পৌনে ১টার দিকে ফাতিমা আলি নামের একজন তার টুইটে আসমা জাহাঙ্গীরকে ‘সুপরিচিত বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে অভিহিত করে তাকে পাকিস্তান থেকে বের করে দেওয়ার দাবি জানান।

ফাতিমা আলি তার টুইটে আসমা জাহাঙ্গীরের পাশাপাশি পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত বেনজির ভুট্টোর স্বামী আসিফ জারদারিকেও  দেশটির ২০১৫ সালের ‘সুপরিচিত বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। একইসঙ্গে তাদের সবাইকে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

প্রায় একই সময়ে আরজে সাদিয়া সাত্তার নামে একজন তার টুইটে বলেছেন, “এত দেরি কেন? আমার মনে হয়, তাকে (আসমা জাহাঙ্গীর) আগেই দেশ থেকে বের করে দেওয়া উচিৎ ছিল।”

মেহেরিন নামে একজন তার টুইটে আসমা জাহাঙ্গীরকে উদ্দেশ করে বলেছেন, “বাংলাদেশে ফিরে যাও।”

ওয়ার্দা ফজল নামের আরেকজনও আসমা জাহাঙ্গীরকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ অভিহিত করেছেন। টুইটে তিনি বলেছেন, “তিনি (আসমা জাহাঙ্গীর) বিশ্বাসঘাতক। কারণ, তিনি সবসময় পাকিস্তান ও পাক আর্মির বিরুদ্ধে ভুয়া প্রোপাগান্ডা চালান।”

ফারহান খান নামে একজন আসমা জাহাঙ্গীরকে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার দাবি জানানোর পাশাপাশি বিষয়টিকে পাকিস্তানের জন্য গুরুতর হিসেবে অভিহিত করে এখনই তার সমাধান করার দাবি জানিয়েছেন।

আসমা জাহাঙ্গীরের বাবা মালিক গোলাম জিলানী একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তানে চালানো পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদ করে কারাগারে গিয়েছিলেন।

পশ্চিম পাকিস্তান আওয়ামী লীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি জিলানীকে বন্ধুর স্বীকৃতি দিয়ে সম্মাননা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। কয়েক বছর আগে বাবার হয়ে সেই পুরস্কার নিয়েছিলেন আসমা।     

টুইটারে বিরূপ আচরণের শিকার হওয়ার বিপরীতে স্বদেশি অনেকের সমর্থনও পাচ্ছেন এই মানবাধিকারকর্মী।

আসমা জাহাঙ্গীরের পক্ষেও টুইট হচ্ছে

#DeportAsmaJahangirNow ক্যাম্পেইনের পাল্টায় ‘আমরা আসমা জাহাঙ্গীরের পক্ষে’ (#WeStandWithAsmaJahangir) হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে সরব তারা।

বুশরা গহর নামে একজন #DeportAsmaJahangirNow ক্যাম্পেইকে ‘কাপুরুষোচিত’ অভিহিত করে তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

তার মতো আরেকজন সাবাউন খান দাঁড়িয়েছেন আসমা জাহাঙ্গীরের পাশে। টুইটে ভারতের কট্টরপন্থি হিন্দুদের দলের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামের তুলনা করে তিনি বলেছেন, “জামায়াতে ইসলাম হচ্ছে পাকিস্তানের শিবসেনা।”

আতিকা শাহীদ নামের একজন আসমা জাহাঙ্গীরকে পাকিস্তান থেকে বের দেওয়ার দাবির তীব্র সমালোচনা করে টুইটে বলেছেন,“আমরা তোমাকে ভালোবাসি। তুমি আমাদের গর্ব।”

আনুশে নূর ফাহিম নামে একজন #DeportAsmaJahangirNow ক্যাম্পেইনকে পাকিস্তানিদের করুণ মানসিক অবস্থার নিদর্শন হিসেবে অভিহিত করে ওই ধরনের মানসিকতার জন্য তার দুঃখ প্রকাশ করেছেন।