নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদসহ প্রথম সারির কয়েকটি মার্কিন গণমাধ্যমকে ‘সবচেয়ে অসৎ এবং দুর্নীতিগ্রস্ত সংবাদমাধ্যম' আখ্যা দিয়ে ‘ফেইক নিউজ অ্যাওয়ার্ড’ ঘোষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
Published : 18 Jan 2018, 05:50 PM
যুক্তরাষ্ট্রের মূল ধারার সংবাদমাধ্যমগুলোর সমালোচনা করে আসা ট্রাম্প গত ৩ জানুয়ারি ‘ফেইক’ মিডিয়াগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কৃত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এবার তিনি তাদের নাম ঘোষণা করলেন।
বুধবার ট্রাম্প তার অতি পছন্দের টুইটারেই ‘ফেইক নিউজ অ্যাওয়ার্ড বিজেতাদের’ নাম ঘোষণা করেন। ‘পুরস্কারজয়ী’ শীর্ষ ১০ এর একটি তালিকাও তিনি দিয়েছেন নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির ওয়েবসাইটে। সেই ওয়েবসাইটের লিংকটি ট্রাম্প তার টুইটেও দিয়েছেন।
ট্রাম্প তার তালিকায় শীর্ষে রেখেছেন ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’কে। সেখানে নিয়মিত কলাম লেখক নোবেল পুরস্কারজয়ী অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগমানকেও তিনি রেখেছেন শীর্ষে।
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে এবিসি নিউজ, তৃতীয় স্থানে আছে সিএনএন এবং এরপর আছে যথাক্রমে ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’, ‘টাইম ম্যাগাজিন’ ও ‘নিউজউইক’ এর নাম।
সংবাদমাধ্যমগুলোকে আক্রমণের নিশানা করে ট্রাম্পের ৮ জানুয়ারিতেই এ অ্যাওয়ার্ড ঘোষণার কথা থাকলেও পরে তা পিছিয়ে ১৭ জানুয়ারি করা হয় বলে জানিয়েছে ‘দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট’ পত্রিকা।
পুরস্কার ঘোষণার পর রিপাবলিকন পার্টির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, “২০১৭ সালজুড়ে পক্ষপাতমূলক, অসততাপূর্ণ এবং পুরোপুরি ভুয়া খবর প্রচার হয়েছে। খবরাখবরগুলো খতিয়ে দেখা গেছে, গণমাধ্যমগুলো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে যে সমস্ত সংবাদ প্রচার করেছে তার ৯০ শতাংশই ছিল নেতিবাচক।”
ভোটে ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পরের দিন নিউ ইয়র্ক টাইমসের নিয়মিত কলামে অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগমান লিখেছিলেন, “ট্রাম্পের জয় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনবে।”
ওদিকে, ‘এবিসি নিউজ’ এর সাংবাদিক ব্রায়ান রসের করা একটি ভুয়া খবরেরও উল্লেখ রয়েছে তালিকায়। ওই বিস্ফোরক খবরটি ছিল ট্রাম্পের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিনের বিরুদ্ধে। এতে বলা হয়েছিল, ফ্লিনকে ক্রেমলিনের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পর সাংবাদিক রসকে সেটি শুধরে নিতে বাধ্য করা হয় এবং কাজ থেকে চার সপ্তাহের জন্য সাসপেন্ডও করা হয়।
ট্রাম্প এবং তার ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়রের হাতে উইকিলিক্সের হ্যাক হওয়া নথিপত্র ছিল দাবি করে একটি সংবাদ লেখনীর জন্য সিএনএনকে তালিকার উপরের দিকে রাখা হয়েছে। ১০ টির মধ্যে চারটি ‘পুরস্কারই’ পেয়েছে এই সংবাদমাধ্যম।
আলাবামায় সিনেট নির্বাচনের আগে ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের বড় ধরনের সমাবেশে কোনো গণজোয়ার ছিল না- এমন প্রতিবেদনের জন্য অ্যাওয়ার্ডের তালিকায় উঠে এসেছে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার নাম।
ওভাল অফিস থেকে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের আবক্ষ মূর্তি সরানো নিয়ে প্রতিবেদনের জন্য টাইম ম্যাগাজিন এবং পোলিশ ফার্স্ট লেডি মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে করমর্দন করেননি- এ প্রতিবেদনের জন্য ‘নিউজউইক’ ফেইক নিউজের খেতাব পেয়েছে।
সবশেষে ‘ভুয়া খবরের পুরস্কার’ ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার সঙ্গে আঁতাতের বিষয়টিই সবচেয়ে বড় ধাপ্পাবাজি হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে।
রিপাবলিকান পার্টির সিনেটর জন ম্যাককেইন এবং জেফ ফ্লেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
এ মাসের শুরুর দিকে কয়েকজন বিশেষজ্ঞও ট্রাম্পকে এ ধরনের অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা না করার ব্যাপারে সতর্ক করে বলেছিলেন, এমন পদক্ষেপে সরকারী নীতিমালার জাতীয় মানদণ্ড ক্ষুন্ন হবে এবং ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করে যাওয়া কর্মকর্তারা বিব্রত হবেন।