দু’সপ্তাহ আগে নিরাপত্তার অভাবে দক্ষিণ আফ্রিকায় পালিয়ে যান নানগাওয়া। বুধবারই তিনি জিম্বাবুয়েতে ফিরবেন।
মুগাবের উত্তরসূরি হিসাবে এমারসন নানগাওয়াকে বিবেচনা করা হলেও গত মাসে হঠাৎ করে সরকার ও দলীয় পদ থেকে তাকে বরখাস্ত করেন মুগাবে। স্ত্রী গ্রেস মুগাবেকে ক্ষমতার কেন্দ্রে নিয়ে আসতে নানগাওয়াকের মতো অভিজ্ঞ নেতাকে সরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
দলের উত্তরসূরি নিয়ে দ্বন্দ্বের মধ্যে গত সপ্তাহে সেনাবাহিনী জিম্বাবুয়ের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং মুগাবেকে করে গৃহবন্দি।
তার দুদিনের মাথায় সেনাবাহিনীর পাশাপাশি মুগাবের দল জিম্বাবুয়ের ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ পার্টির পক্ষ থেকেও জনপ্রিয়তা হারানো এই নেতাকে পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়। প্রথমে অস্বীকৃতি জানালেও শেষ পর্যন্ত প্রচণ্ড চাপের মুখে মুগাবে মঙ্গলবার পদত্যাগ করেন।
তার মেয়াদের শেষ সময়টুকুর দায়িত্ব পালন করতেই নানগাওয়া জিম্বাবুয়েতে ফিরছেন। নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিয়ে আগামী বছর সেপ্টেম্বরে নির্বাচনের সময় পর্যন্ত ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ পার্টির নেতৃত্ব দেবেন তিনি। দলটির এক মুখপাত্র একথা জানিয়েছেন।
বিবিসি জানায়, রাষ্ট্রপরিচালিত জিম্বাবুয়ে ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (জেডবিসি) শুক্রবারই নানগাওয়া শপথ নেবেন বলে নিশ্চিত করে জানিয়েছে।
যদিও জিম্বাবুয়ের সংবিধান মোতাবেক প্রেসিডেন্ট পদত্যাগের পর তার দায়িত্ব স্বাভাবিকভাবেই ভাইস প্রেসিডেন্টের ওপর অর্পিত হয়। সে অনুযায়ী এ পদে থাকা ফেলেকেজেলা ফোকোর ওপরই দায়িত্ব বর্তানোর কথা ছিল। যিনি মুগাবের পদত্যাগের পর আইনত দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট।
কিন্তু গ্রেস মুগাবের ঘনিষ্ঠ মিত্র ফোকোকেও জানু-পিএফ পার্টি বরখাস্ত করেছে এবং তিনি দেশেও নেই বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে তার অনুপস্থিতিতে নানগাওয়াকেই দল মনোনীত করেছে বলে জানিয়েছেন পার্লামেন্টের স্পিকার।
রাজনৈতিক বিচক্ষণতার কারণে দলে ‘ক্রকোডাইল’ নামে পরিচিত নানগাওয়া দেশে ফেরার আগে নির্বাসন থেকেই জনগণকে দেশের উন্নয়নে একতাবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার জিম্বাবুয়ের দৈনিক ‘নিউজ ডে’ কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “একত্রিত থেকে আমরা ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ পালাবদল নিশ্চিত করতে পারি। যাতে আমাদের গণতন্ত্র সুসংহত থাকে।”
এর আগে মুগাবে তার পদত্যাগের ঘোষণায় বলেছিলেন, শান্তিপূর্ণ এবং নির্বিঘ্নে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছেন।
গত ৩৭ বছর ধরে জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন মুগাবে।
১৯৮০ সালে ব্রিটিশ শাসন মুক্ত হওয়া জিম্বাবুয়ের স্বাধীনতার যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন মুগাবে; যিনি আফ্রিকার জাতির পিতাদের একজন।
স্বাধীনতার একজন যোদ্ধা হিসাবে ক্ষমতায় এসে জিম্বাবুয়ের ‘নেলসন ম্যান্ডেলা’ হিসাবে বীরোচিত সম্মান ও খ্যাতি পেয়েছিলেন তিনি।
তারপরও আফ্রিকায় অনেক মানুষের ধারণা, দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থেকে মুগাবে জিম্বাবুয়ের অর্থনীতি, গণতন্ত্র এবং বিচার ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। বিরোধীদের দমনে তিনি নৃশংসতার আশ্রয়ও নিয়েছেন।
সমালোচকরা বলে আসছেন, আধুনিক অর্থনীতি কিভাবে পরিচালিত হয় সে বিষয়টিই মুগাবে বোঝেন না। অর্থনীতির বিকাশ কিভাবে ঘটানো যাবে সে বিষয়টি তিনি কখনও গুরুত্ব দিয়ে ভাবেননি।
এখন ক্ষমতার পালাবদলে জিম্বাবুয়েতে সত্যিকারের পরিবর্তন আসবে কিনা বা নানগাওয়া অর্থনীতির চাকা সত্যিই ঘোরাতে পারবেন কিনা তা নিয়েও অনেকের সংশয় আছে।