প্রিন্স হ্যারির ‘গোস্ট রাইটার’, কে এই মোররিঙ্গার?

ব্রিটিশ প্রিন্স হ্যারির স্মৃতিকথা ‘স্পেয়ার’-এ ধনী, রাজপরিবারের সদস্য, আর বিখ্যাত যাদের নাম এসেছে, সেখানে মার্কিন ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিক জেআর মোররিঙ্গারকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2023, 03:53 AM
Updated : 12 Jan 2023, 03:53 AM

সাংবাদিকতায় পেয়েছেন সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুলিৎজার পুরস্কার; তার জীবনের গল্প থেকে হয়েছে সিনেমা, সেখানে অভিনয় করেছেন হলিউড তারকা বেন অ্যাফ্লেক।

পরিচালক জর্জ ক্লুনির সাথেও তার পরিচয় ছিল। বলা হয়, ক্লুনিই তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন তার সর্বশেষ কাজের মূল চরিত্রের সঙ্গে।

তবে ব্রিটিশ প্রিন্স হ্যারির স্মৃতিকথা ‘স্পেয়ার’-এ ধনী, রাজপরিবারের সদস্য, আর বিখ্যাত যাদের নাম এসেছে, সেখানে মার্কিন ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিক জেআর মোররিঙ্গারকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

মোররিঙ্গার আসলে হ্যারিকে ‘সাহায্য করেছেন’ বইটি লিখতে। আরও স্পষ্ট করে বললে, তিনিই ‘স্পেয়ার’ এর গোস্ট রাইটার।

কোথাও ছাপ না রেখে সেলিব্রেটিদের স্মৃতিকথায় আবির্ভূত হওয়ার ঘটনা মোহরিঙ্গারের জন্য এটাই প্রথম নয়। এর আগে বিশ্বের সাবেক এক নম্বর টেনিস তারকা আন্দ্রে আগাসির স্মৃতিকথা ‘ওপেন’ লিখে দিয়েছিলেন মোররিঙ্গার। বিশ্বখ্যাত কোম্পানি নাইকির সহ-প্রতিষ্ঠা ফিল নাইটের আত্মজীবনী ‘শু ডগ’ লিখতেও তিনি সাহায্য করেছিলেন।

২০২১ সালে পেইজ সিক্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, প্রিন্স হ্যারির স্পেয়ারের খুঁটিনাটি লেখায় ‘সহযোগিতার’ জন্য মোররিঙ্গার পেয়েছেন ১০ লাখ ডলার।

‘ওপেন’ লেখার জন্য আগাসির সঙ্গে কাজ করার সময় মোররিঙ্গার লাস ভেগাসে উড়ে গিয়েছিলেন, এই তারকা ক্রীড়াবিদের সঙ্গে কাটিয়েছিলেন পুরো আড়াইশ ঘণ্টা সময়। তিনি আগাসির মনের ভেতরটা বুঝতে চেয়েছিলেন, সেজন্য সিগমুন্ড ফ্রয়েড আর কার্ল ইয়ুংয়ের লেখা বইগুলো তাকে পড়তে হয়েছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মোররিঙ্গার বলেছিলেন, ফ্রয়েড পড়ে তার দারুণ উপকার হয়েছিল, বিশেষ করে ফ্রয়েডের ‘সিভিলাইজেশন অ্যান্ড ডিসকন্টেন্ট’ বইটি, আর তার ‘ডেথ ইন্সটিঙ্কট’ ধারণাটি।

মোররিঙ্গারের ভাষায়, “আগাসির ব্যক্তিত্বের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল তার ‘আত্মধ্বংসী’ মনোভাব। (ফ্রয়েড পড়ে) আমি বুঝতে পারি যে, এটা যে তার চরিত্রের একটি সহজাত অংশ হতে পারে, সেই ধারণাটিকেই আমি দূরে ঠেলে দিচ্ছিলাম।”

আগাসির মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ করে যে পর্যবেক্ষণ মোররিঙ্গারের তুলে ধরেছেন, এখন প্রিন্স হ্যারির ক্ষেত্রেও তেন কিছু বিষয় সামনে আসছে। তারা দুজনই জটিল মনোগঠনের মানুষ, দুজনেরই বাবার সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনের ইতিহাস আছে।  

বিবিসি লিখেছে, মোররিঙ্গারের এই দৃষ্টিভঙ্গি হয়ত তার নিজের বাবার সঙ্গে সম্পর্কের জটিলতা থেকেও উদ্ভূত হতে পারে।

মোররিঙ্গার ২০০৫ সালে প্রকাশিত তার নিজের আত্মজীবনী দ্য টেন্ডার বারে তার শৈশবের ঘটনাপ্রবাহের ওপর আলো ফেলেছেন। লং আইল্যান্ডে তিনি বড় হয়েছেন মায়ের কাছে, স্থানীয় একটি পাবের নিয়মিত মদখোরদের মধ্যে তিনি খুঁজে ফিরছিলেন ‘বাবার মত’ একজন আঙ্কল চার্লিকে।  

তার নিজের বাবা ছিলেন আগের দিনের এফএম রেডিওর ‘রক অ্যান্ড রোল ডিজে’ । সংসার আর সন্তানকে ফেলে চলে গিয়েছিলেন তিনি।

এনপিআরের সাংবাদিক টেরি গ্রসকে এক সাক্ষাৎকারে মোররিঙ্গার বলেছিলেন, সে সময় রেডিওই ছিল তার বাবার কথা শোনার একমাত্র সুযোগ। সে কারণে তিনি সবসময় তার এফএম রেডিতে বাবার কণ্ঠ খোঁজার চেষ্টা করতেন।

“আমি তখন বুঝতাম না যে, প্রতিদিন তার কাজের একটি নির্দিষ্ট শিফট ছিল। প্রতিদিনই আমি বাড়ির বাইরে সিঁড়িতে বসে থাকতাম। তার কণ্ঠ শোনার জন্য ‍খুব ধীরে ধীরে রেডিওর নব ঘুরিয়ে যেতাম।”

২০২১ সালে মোররিঙ্গারের আত্মজীবনী দ্য টেন্ডার বার অবলম্বনে একই নামে একটি সিনেমা বানান জর্জ ক্লুনি। বেন অ্যাফ্লেক সেখানে অভিনয় করেন মোররিঙ্গারের ‘আঙ্কল চার্লির’ ভূমিকায়।

তরুণ মোররিঙ্গার ভর্তি হন ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে, পরে নিউ ইয়র্ক টাইমসে নিউজ অ্যাসিসটেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর কলোরাডোতে রকি মাউন্টেইন নিউজ এবং লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসে কাজ করেন ১৯৯৪ সালে। ২০০০ সালে অ্যালাবামার একটি বিচ্ছিন্ন এলাকার সঙ্গে ফেরি পারাপার শুরুর সময় টানাপড়েন নিয়ে ‘ক্রসিং ওভার’ শিরোনামে ফিচার লিখে তিনি পুলিৎজার পুরস্কার পান।

টেন্ডার বার এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের হয়ে স্মৃতিলেখা লিখে দেওয়া ছাড়াও আমেরিকার কুখ্যাত ব্যাংক ডাকাত উইলি সাটনকে নিয়ে উপন্যাস লিখেছেন মোররিঙ্গার, সেই বইয়ের নাম দিয়েছেন ‘সাটন’।

ভালো স্মৃতিকথা লেখকরা কেবল ভালোই লেখেন না, যার স্মৃতিকথা তারা লেখেন, তাদের ভেতরেই যেন তারা মিশে যান, কোনো রকম জানান না দিয়ে।

মোররিঙ্গারের বইয়ের এজেন্ট ম্যাডেলিন মোরেল তার সম্পর্কে অবজারভারকে বলেন, “তিনি এমনই একজন প্রতিভাবান লেখক… আমি নিশ্চিত, সবাই তার মত হতে চাইবে। অন্যের হয়ে বই লেখা খুবই কঠিন, সেটা এমনভাবে লিখতে হয় যেন অন্য কেউ লিখে দিচ্ছে সেটা কোনোভাবে মনে না হয়।”

গোস্ট রাইটারদের মধ্যে ‘সেরা একজন’ বিবেচিত হলেও তাদের থাকতে হয় পাদপ্রদীপের বাইরে। ২০০৯ সালে আগাসির ওপেন প্রকাশিত হওয়ার সময় মোররিঙ্গার নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছিলেন, “ধাত্রী তো আর বাচ্চার সাথে হাসপাতাল থেকে বাসায় যায় না।”

আরও খবর

Also Read: প্রিন্স হ্যারির ‘স্পেয়ার’: রাজপরিবারের রহস্যের পর্দা উন্মোচন