গত সপ্তাহে ইউক্রেইন ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হয়েছে, ট্রাম্প এখন এতে পুতিনের সমর্থন আদায়ে চেষ্টা করছেন। এর মধ্যেও মস্কো ও কিইভ আকাশপথে একে অপরের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
Published : 17 Mar 2025, 12:44 PM
মস্কোতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের মধ্যে ‘ইতিবাচক’ বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেইনে যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে আলোচনায় মঙ্গলবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলার পরিকল্পনা করছেন তিনি।
“আমি মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে কথা বলবো। সপ্তাহান্তে অনেক কাজ হয়েছে। যুদ্ধ থামাতে পারি কিনা, দেখতে চাই আমরা। হয়তো পারবো, হয়তো পারবো না। কিন্তু আমাদের বেশ ভালো সম্ভাবনা আছে বলে আমার মনে হয়,” ফ্লোরিডা থেকে ওয়াশিংটনে ফেরার পথে এয়ার ফোর্স ওয়ানে থাকা সাংবাদিকদের ট্রাম্প এ কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
গত সপ্তাহে ইউক্রেইন ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হয়েছে, ট্রাম্প এখন এ প্রস্তাবে পুতিনের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন। এর মধ্যেও মস্কো ও কিইভ আকাশপথে একে অপরের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
রুশ সেনারা তাদের পশ্চিমাঞ্চলীয় কুর্স্ক থেকে ইউক্রেইনীয় সেনাদের হটিয়ে দেওয়ার পথেও অনেকখানি এগিয়ে গেছে। মাসকয়েক আগে আচমকা এক আক্রমণে ইউক্রেইনীয় বাহিনী রাশিয়ার এ এলাকাটির দখল নিয়েছিল।
যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় কী কী ছাড় বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমরা ভূমি নিয়ে কথা বলবো, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে কথা বলবো। আমার মনে হয়, ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয় পক্ষের মধ্যেই এগুলো ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। আমরাও এগুলো নিয়ে কথা বলছি, কিছু সম্পদ ভাগাভাগির বিষয়ও আলোচনায় আছে।”
এর আগে মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে দেশে ফেরা মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ চলতি সপ্তাহেই ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে ফোনালাপ হবে বলে ধারণা দিয়েছিলেন।
“চলতি সপ্তাহেই দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে ফোনালাপ হবে বলে আশা করছি, এদিকে আমরা ইউক্রেইনীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ, আলাপ-আলোচনাও চালিয়ে যাচ্ছি,” রোববার সিএনএনকে এমনটাই বলেন উইটকফ।
বৃহস্পতিবার রাতে পুতিনের সঙ্গে হওয়া বৈঠককে ‘ইতিবাচক’ বলেও অভিহিত করেন এ মার্কিন দূত।
শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছিলেন, “এই ভয়াবহ, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসানের বেশ ভালো সম্ভাবনা আছে।”
একই পোস্টে কুর্স্কে চারদিক থেকে আটকে পড়া হাজারও সেনার জীবন বাঁচাতে রুশ প্রেসিডেন্টের প্রতি অনুরোধও করেন ট্রাম্প।
তার ওই অনুরোধের প্রেক্ষিতে পুতিন বলেন, ট্রাম্পের সম্মানে তিনি ওই সেনাদের নিষ্কৃতি দিতে রাজি আছেন, যদি তারা আত্মসমর্পণ করে।
যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে রুশ প্রেসিডেন্টের কী প্রস্তাব, উইটকফের মাধ্যমে তা ট্রাম্পের কাছে পাঠানে হয়েছে বলে শুক্রবার জানিয়েছে ক্রেমলিন। সংঘাত বন্ধে একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার ব্যাপারে ‘সতর্ক আশাবাদও’ ব্যক্ত করেছে তারা।
এদিকে রোববার মার্কিন গণমাধ্যমে পৃথক পৃথক অনুষ্ঠানে উইটকফ, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ বলেছেন, যুদ্ধের চূড়ান্ত শান্তিপূর্ণ সমাধান তো অনেক দূর, রাশিয়ার যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার আগে এখনও কিছু চ্যালেঞ্জের সমাধান করা বাকি আছে।
রাশিয়া এখন ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চলের যে বিস্তৃত এলাকা দখলে রেখেছে, তা মস্কোকে দিয়ে কোনো শান্তি চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র তাতে রাজি হবে কিনা, এবিসিতে এমন প্রশ্নের জবাবে উইটকফ বলেন, “আমরা কী ইউক্রেইনের মাটির প্রতিটি ইঞ্চি থেকে প্রত্যেক রাশিয়ারকে বের করতে পারবো?”
যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা ‘বাস্তবতার’ ভিত্তিতেই হতে হবে, বলেছেন তিনি।
সিবিএসের অনুষ্ঠানে রুবিও বলেছেন, চূড়ান্ত শান্তি চুক্তির জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেইন উভয়কেই প্রচুর পরিশ্রম ও ছাড় দিতে হবে।
“যতক্ষণ তারা একে অপরের দিকে গোলা ছুড়তে থাকবে ততক্ষণ এই আলোচনাগুলো শুরু করাই তো কঠিন হবে,” বলেছেন তিনি।
যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো না গেলে, মস্কো ও কিইভের মধ্যে এই সংঘাত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেওয়ারও সম্ভাবনা আছে বলে ট্রাম্প বারবারই সতর্ক করে আসছেন।
যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে গত সপ্তাহে তার প্রশাসন আরও কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।
শনিবার ট্রাম্প জানান, তিনি ইউক্রেইন ও রাশিয়ার জন্য যে বিশেষ দূত নিয়োগ দিয়েছিলেন, সেই জেনারেল কিথ কেলোগের দায়িত্ব কমিয়ে তাকে এখন কেবল ইউক্রেইন বিষয়ক দূতের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।
শান্তি আলোচনা থেকে কেলোগকে বাদ দিতে রুশ কর্মকর্তাদের চাহিদার প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রাশিয়ার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে মার্কিন জ্বালানি লেনদেনের অনুমতি দেওয়া একটি লাইসেন্স গত সপ্তাহে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে জানিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেইন নিয়ে শান্তি চুক্তিতে পৌঁছাতে পুতিনের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে।
আগের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পথ অনুসরণ করে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় এমনকী রাশিয়ার প্রধান প্রধান তেল কোম্পানি ও তেলক্ষেত্র পরিষেবা কোম্পানিগুলোর ওপরও সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার কথা বিবেচরা করছে, বলেছে বিষয়টি সম্বন্ধে অবগত একটি সূত্র।
আরও পড়ুন
পুতিনের সঙ্গে আলোচনা 'ফলপ্রসূ', যুদ্ধ বন্ধের সুবর্ণ সুযোগ আছে: ট্রাম্প
রাশিয়া ও ইউক্রেইনের আকাশ হামলা অব্যাহত, যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা অনিশ্চিত
কুর্স্কে ইউক্রেইনীয় সেনারা আত্মসমর্পণ করলে তাদের নিষ্কৃতি দেবেন পুতিন