পাঁচ হাজার বছর আগের লিপস্টিকের সন্ধান

এই আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে দ্রুত পরিবর্তন হওয়া ব্রোঞ্জ যুগে নারী সৌন্দর্যের রূপ কেমন ছিল সে সম্পর্কে নতুন করে আলোকপাত হবে বলে মনে করেন গবেষকরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2024, 04:05 PM
Updated : 13 March 2024, 04:05 PM

আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগেও লিপস্টিকে ঠোঁট রাঙাতেন নারীরা। বর্তমান ইরানের দক্ষিণাঞ্চলে একটি প্রাচীন কবরস্থান থেকে উদ্ধার এক শিশি লিপস্টিক নিয়ে গবেষণার পর গবেষকরা দাবি করেছেন, এটিই এখন পর্যন্ত সন্ধান পাওয়া সবচেয়ে প্রাচীন লিপস্টিক।

গবেষকদের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, একটি পাথরের শিশিতে রাখা গাঢ় লাল রঙের ওই লিপ-পেইন্ট ২০০১ সালে একটি প্রাচীন কবরের ভেতর খুঁজে পাওয়া যায়। এতদিন ধরে এটি নিয়ে গবেষণা চলেছে এবং শেষ পর্যন্ত এটি কী তা জানা গেছে।

তবে এটি আধুনিক লিপস্টিকের মত নয়। খুব সম্ভবত এটি ব্রাশ দিয়ে ব্যবহার করতে হতো বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের নিয়ে গঠিত গবেষক দলটি।

তারা বলেন, “এই আবিষ্কার দ্রুত পরিবর্তন হওয়া ব্রোঞ্জ যুগে নারী সৌন্দর্যের রূপ কেমন ছিলেন সে বিষয়ে নতুন করে আলোকপাত করবে।”

এই গবেষকদলের একজন ইতালির ইউনিভার্সিটি অব পাদুয়া-র প্রত্নতত্ত্বের অধ্যাপক মাসিমো ভিদালে বিবিসিকে বলেন, আমার জানা মতে, এই লিপস্টিক ‘৫০০০ বছর আগের অভিজাত শ্রেণীর নারীরা’ ব্যবহার করতেন।

পাথরের শিশিতে থাকা ওই কসমেটিক পেস্ট দক্ষিণ-পূর্ব ইরানের কেরমান প্রদেশের হালিল নদীর কাছে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দের একটি কবরস্থানের ভেতর ছিল। ওই অঞ্চলে বন্যা কারণে মাটির নিচে চাপা পড়া কবরস্থান এবং কবরে থাকা অনেক প্রত্নবস্তু বেরিয়ে আসে। লিপস্টিকের ওই শিশিটি সেরকম একটি কবরে পাওয়া যায়। ইরানি কর্তৃপক্ষ প্রত্নবস্তুগুলো উদ্ধারের আগে সেগুলো লুটেরাদের হাতে পড়েছিল।

বিশ্লেষকরা এই আবিষ্কারকে ব্রোঞ্জ যুগের ‘প্রভাবশালী’ মারহাসি সভ্যতার সঙ্গে যুক্ত করেছেন। ওই সময়ে মেসোপটেমিয়ার একটি অংশে মারহাসি সভ্যতা বিকাশ লাভ করেছিল।

অধ্যাপক ভিদালে বলেন, “আমরা এর আগে অন্যান্য বোতলে যে ধূসর, গাঢ় বস্তু পেয়েছি এটা তা থেকে অনেকটাই ভিন্ন ছিল। যা আমাদের অবাক করেছে।

“যখন আমরা সেটির মুখে একটি ছেনি প্রবেশ করাই, একটি আলগা, গাঢ় ধূসর-বেগুনি রঙের পাউডার জাতীয় বস্তু ছড়িয়ে পড়ে।”

গবেষকরা শুকনো ওই পাউডার পরীক্ষা করে সেটির মধ্যে মূলবান আকরিক লৌহবিশেষ পদার্থ পায়। যেটি ‘একটি গাঢ় লাল রঙের পেস্ট তৈরি করে’।

ওই গুঁড়ো ভজ্য তেল বা মোমের মত পদার্থের সঙ্গে মেশালে সেটি ‘আধুনিক যুগে লিপস্টিক যেমন হয় ঠিক তেমন আকার ধারণ করে’ বলে জানান অধ্যাপক ভিদালে।

ব্রোঞ্জ যুগের পর ওই অঞ্চলে সমাজ ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন এসেছে। ইরানের আধুনিক ধর্মতন্ত্রে এ ধরণের প্রসাধনীর ব্যবহার অনুৎসাহিত করা হয়।

গবেষকরা বলেন, কিন্তু অতীতের ওই সময়ে ‘অভিজাতরা নিজেদের আভিজাত্য এবং সর্বসেরা অবস্থান’ প্রদর্শনের জন্য প্রসাধনী ব্যবহার করতেন।

‘দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজ ব্যবস্থার কারণে নারীদের উপর সামাজিক যে চাপ বাড়ছিল’ তাতে সে সময়ে নারীদের দেখতে সুন্দর হওয়ার প্রয়োজন ছিল বলেও মনে করেন গবেষকরা।

এই লিপস্টিকটিকে বিশ্বের সবচেয়ে পুরাতন লিপস্টিক বলে দাবি করার আগে সতর্ক ছিলেন অধ্যাপক ভিদালে। কারণ, ওই সময় থেকেও আগের কিছু আবিষ্কার হওয়ার সম্ভাবনা সব সময়ই থেকে যায়।

“তবে, আমরা এটা বলতেই পারি যে আমাদের খুঁজে পাওয়া লিপস্টিকটি প্রাচীনতম গুলোর একটি। আমার জানা মতে, ৫০০০ বছর আগের ইরানে অভিজাত শ্রেণীতে নারীরা তারকা ছিলেন। যদিও ভবিষ্যৎ গবেষণা এ বিষয়ে আরো অনেক কিছু জানাবে।”