ভারতে বিচারের মুখে অনলাইনে মুসলিম নারী ‘বিক্রি’ করা সেই যুবক

আদালতে অমকেশ্বর ঠাকুর (২৫) নামের এ যুবকের বিচারের জন্য অনুমতি দিয়েছেন দিল্লির লেফটেন্যান্ট-গভর্নর ভিকে সাক্সেনা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Dec 2022, 02:16 PM
Updated : 12 Dec 2022, 02:16 PM

ভারতের গতবছর ৮০ জনের বেশি মুসলিম নারীকে অনলাইনে ‘বিক্রি’ করতে অ্যাপ তৈরি করে তাতে এই নারীদের ছবি দেওয়ায় অভিযুক্ত যুবকের বিচার করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আদালতে অমকেশ্বর ঠাকুর (২৫) নামের এ যুবকের বিচারের জন্য অনুমতি দিয়েছেন দিল্লির লেফটেন্যান্ট-গভর্নর ভিকে সাক্সেনা। এরপরই পুলিশ ওই ঘোষণা দিল বলে জানিয়েছে বিবিসি।

২০২১ সালের জুলাইয়ে গিটহাব ওয়েব প্লাটফরমে ‘সুলি ডিলস’ নামের একটি উন্মুক্ত অ্যাপ চালু করা হয়। এর মাধ্যমে প্রকাশ্যে আনা হয় বেশকিছু ছবি, বিশেষ করে মুসলিম নারীদের প্রোফাইল তৈরি করে তাদেরকে বর্ণনা করা হয় ‘ডিলস অব দ্য ডে’ হিসেবে।

অমকেশ্বর ঠাকুর গ্রেপ্তার হন ২০২২ সালের জানুয়ারিতে। তবে মার্চ মাসে তিনি জামিন পান।

কম্পিউটারের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের ওপর ডিগ্রি আছে অমকেশ্বরের। তাকে দিল্লি পুলিশ মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর সিটি থেকে গ্রেপ্তার করে। এরপর ভারতীয় দণ্ডবিধি, তথ্য প্রযুক্তি আইন এবং ভারতের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৬ ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।

১৯৬ ধারায় ব্যক্তি নয়, বরং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কেউ অপরাধ করলে সেটি এই ধারায় পড়ে। এই ধারাটি সাধারণত সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় এবং এতে কেন্দ্রীয় সরকার বা রাজ্য সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন হয়।

অমকেশ্বর ঠাকুরের সঙ্গে নিরাজ বিষ্ণুই (২০) নামের আরেকজনও গ্রেপ্তার হয়েছেন। বিষ্ণুই তৈরি করেছেন ‘বুলি বাঈ’ নামে আরেকটি অ্যাপ। এতেও আপলোড করা হয় শতাধিক মুসলিম নারীর ছবি। এই অ্যাপটিও করা হয়েছিল গিটহাব প্লাটফর্মে।

দুটি অ্যাপেই আদতে কোনও নারী বিক্রি না হলেও এটি ছিল মুসলিম নারীদের জন্য মান, মর্যাদাহানিকর। বিশেষ করে ওইসব স্পষ্টভাষী মুসলিম নারীদের জন্য যারা প্রধানমন্ত্রী মোদীর আমলে হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদের উত্থান নিয়ে সমালোচনায় সরব হয়েছেন।

তবে মোদীর দল বিজেপি ও তার সরকার এমন সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করেছে। সমালোচকরা বলছেন, ভারতে মেরুকরণের রাজনীতির আবহে কয়েক বছরের মধ্যে মুসলিম নারীদের বিরুদ্ধে অনলাইনে ট্রল বা বিদ্রুপ করা আগের চেয়ে বেশি বেড়েছে।

ভারতে অনলাইনে হয়রানি নিয়ে ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, কোনও নারী যত বেশি সোচ্চার তারই টার্গেট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এর মাত্রা ধর্মীয় সংখ্যালঘু নারী এবং পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে অনেক বেশি।

সুলি ডিলস এবং বুলি বাঈ অ্যাপসে যেসব মুসলিম নারীদের ছবি বা প্রোফাইল পোস্ট করা হয়েছিল, তারা সবাই ছিলেন সমালোচনায় সরব। এর মধ্যে ছিলেন সাংবাদিক, অধিকারকর্মী, শিল্পী এবং গবেষকও।