দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে গোটা বিশ্বে।
Published : 18 Sep 2022, 12:27 AM
ছয় মাস গড়িয়ে সাত মাসে গড়াল রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ।
যুদ্ধের গত কয়েকদিনে রুশ বাহিনীর দখলে থাকা বিশাল এলাকা পুনরুদ্ধার করে বড় সফলতা পেয়েছে ইউক্রেইনীয় বাহিনী। তবে রাশিয়া বলছে, তারা সৈন্যবাহিনী পুনর্গঠন করছে এবং এখনও ইউক্রেইনের এক-পঞ্চমাংশ এলাকা দখলে রেখেছে।
দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে গোটা বিশ্বে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার উপর বিধিনিষেধের পাহাড় চাপানোয় ডলারের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের মূল্য বেড়ে গেছে।
যুদ্ধে ইউক্রেইনের রাজধানী কিইভসহ বিস্তৃত এলাকা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানি দেখলেও শুরু থেকেই তারা রুশ বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো পেছন থেকে দেশটিকে যুদ্ধের রসদ জোগাচ্ছে।
তবে থেমে থেমে এতদিন ধরে চলা যুদ্ধে কার কী অর্জন, তা নিয়ে তুলনামূলক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে বিবিসি।
যুদ্ধের ধরনে কী বদলাল?
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনের রাজধানী কিইভজুড়ে হামলা চালায় রাশিয়া। রুশ সেনাবাহিনী ইউক্রেইনের পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণেও আক্রমণ চালায়।
গত এপ্রিলে রুশ বাহিনী কিইভ অভিমুখের যাত্রা থেকে ফিরে গেলে ইউক্রেইন বাহিনী সেখানকার বিশাল এলাকা পুনরুদ্ধার করে।
সেসময় রাশিয়া ইউক্রেইনের পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণে তার সামরিক বাহিনীর অপারেশন অব্যাহত রেখেছে এবং বিশাল এলাকা দখল করেছে। তবে সেপ্টেম্বরের শুরুতে নাটকীয়ভাবে যুদ্ধ পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়ে যায়।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি চূড়ান্ত আক্রমণে রুশ বাহিনীকে হটিয়ে দিয়েছে ইউক্রেইন। শুধু খারকিভ শহরের চারপাশে ৩ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে বলে তারা দাবি করেছে।
ইউক্রেইন বলছে, সেপ্টেম্বরেই তারা রাশিয়ার কাছ থেকে ৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকার বেশি পুনরুদ্ধার করেছে, যা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।
রুশ বাহিনীর সামরিক রসদ সরবরাহের প্রধান কেন্দ্র ইজিয়ুম ও কুপিয়ানস্ক শহর দুটি গত ১০ সেপ্টেম্বর পুনরুদ্ধার করেছে ইউক্রেইন, যা দেশটির জন্য কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। দক্ষিণের খেরসন অঞ্চলে ইউক্রেনের পাল্টা হামলাও চলছে।
দ্য ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়ার (আইএসডব্লিউ) বলছে, ইউক্রেইনের সেনারা রুশ বাহিনীর একটি ‘বড় অপারেশনে পরাজয়’ ঘটিয়েছে।
রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের জাস্টিন ব্রঙ্ক বলেছেন, খারকিভে রাশিয়ান অবস্থান ‘সম্পূর্ণ পতন’ হয়েছে।
“গত এপ্রিলে কিইভ থেকে পশ্চাদপসরণের পর আমরা রুশদের থেকে সবচেয়ে নাটকীয় পরিবর্তনটি দেখেছি।”
রাশিয়া কী করছে?
ইজিয়ুম ও কুপিয়ানস্ক থেকে তার বাহিনী সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রাশিয়া।
তারা বলছে, সৈন্যবাহিনীকে ‘পুনর্গঠিত’ করতে তাদের এই কৌশলগত প্রত্যাহার। তবে ওই সকল এলাকায় হামলা অব্যাহত রাখা হবে।
বিবিসি লিখেছে, ইজিয়ুম ও কুপিয়ানস্ক ছেড়ে যাওয়ার সময় রুশ বাহিনী বিশাল সামরিক সরঞ্জাম ও গোলাবারুদ ফেলে গেছে বলে মনে হচ্ছে।
এখনও রাশিয়ার দখলে কতখানি?
আইএসডব্লিউ বলছে, রাশিয়া এখনও ইউক্রেইনের ২০ শতাংশ দখলে রেখেছে।
এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলের দনবাসের বিশাল এলাকা এবং দক্ষিণে দেশটির মূল ভূখণ্ডের অংশ রয়েছে। এ ছাড়া ২০১৪ সাল থেকে রাশিয়ার দখলে থাকা ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ রয়েছে।
দনবাস মূলত রুশ ভাষাভাষীদের এলাকা এবং ২০১৪ সালে ক্রাইমিয়া দখল করলে রুশসমর্থিত বাহিনীগুলো এর এক-তৃতীয়াংশ এলাকা দখল করে নেয়। ফলে এখানে তথাকথিত দুটি গণপ্রজাতন্ত্র সৃষ্টি হয়।
লভিভসহ ইউক্রেইনের পশ্চিমে রুশ মিসাইল আঘাত হেনেছে। কিন্তু সেটি দখলে রুশ বাহিনীর কোনো চেষ্টা নেই।
রাশিয়া কী চায়?
শুরু থেকেই রাশিয়া তার আক্রমণকে যুদ্ধ বলছে না। দেশটির দাবি, ইউক্রেইনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চলছে রুশ বাহিনীর।
ক্রেমলিন বলেছে, ‘সবকিছু ঠিকঠাক বাস্তবায়ন’ না হওয়া পর্যন্ত তার অভিযান চলবে। ফেব্রুয়ারিতে আক্রমণ শুরু সময়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন, তার লক্ষ্য ‘ইউক্রেইনকে নিরস্ত্রীকরণ করা’।
যুদ্ধের একটি উদ্দেশ্য ইউক্রেইন যেন পশ্চিমা প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটোতে যোগদান না করে, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা। তবে দৃশ্যত রাশিয়ার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল, ইউক্রেইন দখল করা এবং সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা।
যাহোক, এখন ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণে দখলের ব্যাপারে রাশিয়া তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা সীমিত করেছে বলে মনে হচ্ছে।
ইউক্রেইন কী চায়?
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তার মূল লক্ষ্য ইউক্রেইন থেকে সমস্ত রুশ সেনাকে হটিয়ে দেওয়া এবং গোটা ইউক্রেইন দখলমুক্ত করা।
রাশিয়ার কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করা অঞ্চলগুলো নিজেদের দখলে ধরে রাখতে আরও অর্থ ও অস্ত্র সরঞ্জামের জন্য আবেদন করেছেন জেলেনস্কি। ইউক্রেইনীয় বাহিনী পশ্চিমা দেশগুলো থেকে আসা অস্ত্রের চালান ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে।
প্রাণহানি কত?
যুদ্ধে উভয়পক্ষেরই ক্ষতি হয়েছে, যদিও সঠিক সংখ্যা বা পরিমাণ জানা যায়নি।
ইউক্রেইনের দাবি, তাদের আক্রমণে ৫০ হাজারেরও বেশি রাশিয়ান সেনা নিহত হয়েছে। অন্যদিকে অগাস্টের শেষে তারা বলছে, সংঘাত শুরুর পর থেকে তারা প্রায় ৯ হাজার সামরিক কর্মকর্তাকে হারিয়েছে।
রাশিয়া খুব কমই তার সৈন্যদের নিহতের তথ্য প্রকাশ করে। মার্চে তারা বলেছিল, আক্রমণ শুরুর পর থেকে ১ হাজার ৩৫১ জন রুশ সেনা নিহত হয়েছে।
জুলাই মাসে মার্কিন কর্মকর্তাদের অনুমান ছিল, যুদ্ধে প্রায় ১৫ হাজার রুশ সেনার মৃত্যু হয়েছে।
যুদ্ধে বেসামরিক মানুষেরও মৃত্যু হয়েছে। সেপ্টেম্বরের শুরুতে জাতিসংঘ বলেছে, ৫ হাজার ৭০০ এরও বেশি বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। তবে সেই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।