২২১টি শিশু ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে, তার ভেতর ১৬টি ঘটনায় ভুক্তভোগীর বয়স পাঁচ বছরের কম, নির্যাতিত শিশুর বয়স মাত্র ১, এমনটা পাওয়া গেছে ৪টি ঘটনায়।
Published : 04 Mar 2025, 09:19 PM
সুদানে সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর মধ্যে চলমান যুদ্ধে পাঁচ বছরের কম বয়সী অনেক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অনুসন্ধানে উঠে আসা তথ্যের বরাত দিয়ে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ।
মঙ্গলবার তাদের শেয়ার করা তথ্য উঠে এসেছে সুদানে যৌন সহিংসতার শিকারদের সহায়তা করা দেশীয় সংস্থাগুলোর সংকলিত এক তথ্যভাণ্ডার থেকে। এতে দেখা গেছে গত বছর শিশু ধর্ষণের ২২১টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। তার মধ্যে ১৬টি ঘটনায় ভুক্তভোগীর বয়স পাঁচ বছরের কম; এই ঘটনাগুলোর মধ্যে চারটিতে নির্যাতিত শিশুর বয়স মাত্র এক।
নির্যাতনের শিকার হওয়াদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশই ছেলে, তথ্যভাণ্ডারে এমনটাই মিলেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
তথ্যভাণ্ডারে আফ্রিকার দেশটির সব অঞ্চলের ঘটনার উল্লেখ থাকলেও এই সংখ্যা প্রকৃত পরিস্থিতির তুলনায় নগণ্য বলেই মনে করছেন একাধিক মানবাধিকার ও দাতা সংস্থার কর্মীরা।
নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, প্রতিশোধজনিত ভয় ও চিকিৎসা সুবিধার ঘাটতির কারণে অনেক ঘটনা নথিভুক্তই হয় না, বলছেন তারা।
কয়েক ভুক্তভোগীকে উদ্ধৃত করে ইউনিসেফ জানিয়েছে, ধর্ষণের ফলে অনেকে গর্ভবতীও হয়ে পড়েন, এ কারণে পরে তাদেরকে পরিবার থেকে বিতাড়িত হওয়াসহ নানান কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীনও হতে হয়ে হয়েছে।
অন্য নারীদের সঙ্গে বন্দি থাকা নির্যাতিত এক নারী বলেছেন, “প্রায়ই রাত নয়টার পর, চাবুক হাতে থাকা একজন দরজা খুলে ঢোকে, এরপর বন্দি কোনো এক মেয়েকে বেছে নিয়ে অন্য ঘরে নিয়ে যেত। আমি সেই ছোট মেয়েটির কান্না আর চিৎকার শুনতে পেতাম।”
“তাদের ছাড়া হতো ভোরের দিকে, প্রায় সংজ্ঞাহীন অবস্থায়,” বলেন তিনি।
এই শিশু ধর্ষণের জন্য কারা দায়ী তা বলেনি ইউনিসেফ, তারা যুদ্ধরত দুই পক্ষকেই আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে।
আরএসএফ ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য আসেনি।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, “এক বছরের শিশুরা সশস্ত্র পুরুষদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে—এমন ঘটনা যে কারো বিবেককে নাড়া দেওয়ার কথা। এই ধরনের বর্বর ঘটনা বন্ধে অতি জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।”
বেসামরিক নেতৃত্বের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে আগে ২০২৩ সালের এপ্রিলে সুদানের সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে ওঠে, তাদের রক্তক্ষয়ী সংঘাত লাখ লাখ মানুষকে উদ্বাস্তুত পরিণত করে, তীব্র করে ক্ষুধা ও মানবিক সংকট।
এদিকে জাতিসংঘের একটি তথ্য-অনুসন্ধানকারী মিশনও সুদানে যৌন সহিংসতার মাত্রাকে ‘বিস্ময়কর’ বলে অভিহিত করেছেন।
তারা যেসব ঘটনার কথা শুনেছেন, বেশিরভাগের জন্যই আরএসএফ ও তাদের মিত্ররা দায়ী বলে মিশনটির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলো থেকে তথ্য পাওয়া কঠিন বলে স্বীকারও করে নিয়েছে তারা।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক সম্প্রতি বলেছেন, সুদানে নথিভুক্ত ধর্ষণের ঘটনার অর্ধেকের বেশিই দলবদ্ধ ধর্ষণ, যা ইঙ্গিত দেয় সেখানে যৌন সহিংসতাকে ‘যুদ্ধাস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
রয়টার্স দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার একাধিক নারীর কাছ থেকে জানতে পেরেছে যে, আরএসএফ ও তাদের মিত্র আরব মিলিশিয়ারাই তাদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে।
আরএসএফ এর আগে জানিয়েছিল, তারা যৌন সহিংসতার অভিযোগগুলো তদন্ত করে দেখবে এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনবে।