Published : 04 May 2025, 07:09 PM
২০০ বারের বেশি সাপের কামড় খেয়েছেন। প্রায় ২০ বছর ধরে গোখরাসহ বিশ্বের ভয়ঙ্কর বিষধর নানা সাপের বিষ ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে ঢুকিয়েছেন ৭০০ বারের বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের সেই ব্যক্তির রক্তই এখন সাপের বিষের ‘অতুলনীয়’ এক প্রতিষেধক হয়ে উঠেছে। ফ্রিডের রক্তে পাওয়া অ্যান্টিবডি প্রাণীর ওপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তা বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীকে সাপের মারাত্মক বিষ থেকে রক্ষায় কাজ করেছে, বলছেন বিজ্ঞানীরা।
একসময়কার ট্রাক মেকানিক এই ব্যক্তির নাম টিম ফ্রিড। পরে তিনি সাপ নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। শুরুতে তিনি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চেয়েছিলেন, যাতে সাপ ধরার সময় নিজেকে রক্ষা করা যায়। তার সেই প্রচেষ্টা তিনি ইউটিউবে রেকর্ডও করে রাখতেন।
তবে ওই চেষ্টায় ফ্রিড পুরোপুরি সফল হননি। কারণ, গোখরো সাপের কামড়ে দু’বার কোমায় চলে গিয়েছিলেন তিনি। অবশ্য সে যাত্রায় রক্ষা পান ফ্রিড।
এরপরও তিনি থামেননি। ফ্রিড পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক কিছু সাপ যেমন: মাম্বা, কোবরা, তাইপান ও ক্রেইটের মতো প্রজাতি থেকে বিষ সংগ্রহ করে নিজের শরীরে তা ঢুকিয়েছেন।
ফ্রিডের ১৮ বছরের এই চেষ্টাই তার দেহে তৈরি করেছে সাপের বিষের প্রতিষেধক। নিজের দেহের রক্তেই যা তৈরি হয়েছে। ফ্রিডের কথায়, “আমি এটা করেছি তাদের জন্য, যারা হাজার হাজার মাইল দূরে সাপের কামড়ে মারা যান।”
বিবিসি জানায়, সাপের বিষ কাটাতে বর্তমানে যে সব অ্যান্টিভেনম বা থেরাপি চালু আছে, তা সাধারণত নির্দিষ্ট প্রজাতির সাপের বিষের ক্ষেত্রে কার্যকর। অর্থাৎ, কাউকে যে সাপ কামড়েছে, সেই প্রজাতির সাপের জন্য তৈরি অ্যান্টিভেনমই তাকে দিতে হয়।
কিন্তু টিম ফ্রিডের রক্তের অ্যান্টিবডি সার্বজনীনভাবে সব ধরনের প্রজাতির সাপের বিষের প্রতিষেধক (অ্যান্টিভেনম) তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।
সাপের কামড়ে প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজারের মতো মানুষের মৃত্যু হয় এবং এর তিনগুণেরও বেশি মানুষ অঙ্গ কেটে ফেলা বা স্থায়ী পঙ্গুত্বের শিকার হয়।
বর্তমানে অ্যান্টিভেনম তৈরি করা হয় ঘোড়ার মতো প্রাণীর দেহে সাপের বিষের ছোট ছোট ডোজ ইনজেকশন প্রয়োগ করে। সেই বিষের বিরুদ্ধে প্রাণীটির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অ্যান্টিবডি তৈরি করে, যা সংগ্রহ করে থেরাপি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
কিন্তু বিষ এবং অ্যান্টিভেনম বা বিষনাশীকে একসঙ্গে মিশিয়ে দিতে হয়, কারণ একেক প্রজাতির সাপের বিষ একেক রকম হয়।
আবার একই প্রজাতির সাপের মধ্যেও অঞ্চল ভেদে বিষে পার্থক্য থাকে। যেমন: ভারতের সাপ থেকে তৈরি বিষনাশী শ্রীলঙ্কার একই প্রজাতির সাপে বিষের বিরুদ্ধে কম কার্যকর হয়।
এ সমস্যার সমাধান করতে বিজ্ঞানীরা খুঁজছিলেন এমন এক ধরনের অ্যান্টিবডি যা সব ধরনের সাপের বিষের ক্ষেত্রেই কাজ করবে। এ সময়ই বায়োটেক কোম্পানি সেন্টিভ্যাক্সের প্রধান নির্বাহী ড. জ্যাকব গ্লানভিল খুঁজে পান টিম ফ্রিডকে।
জ্যাকব বলেন, "আমি ভাবলাম, বিশ্বে কারও দেহে এমন ‘ব্রডলি নিউট্রিলাইজিং অ্যান্টিবডি’ তৈরি হয়ে থাকলে তা টিমের দেহেই হয়ে থাকবে। তাই আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রথম ফোনেই বললাম, বিষয়টা অদ্ভুত শোনালেও, আপনার কিছু রক্ত পেলে খুব ভাল হত।”
ফ্রিড এতে রাজি হন এবং গবেষণাটি নৈতিক অনুমোদন পায়। কারণ, এ গবেষণায় তাকে আরও বিষ দেওয়া হয়নি, কেবল তার রক্ত নেওয়া হয়েছে।