মেরিল্যান্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাল্টিমোর বন্দরে জাহাজ চলাচল স্থগিত থাকবে।
Published : 27 Mar 2024, 09:31 PM
যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরে জাহাজের ধাক্কায় সেতু ধসের ঘটনায় বিশ্বব্যাপী পণ্য সরবরাহে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পণ্য সরবরাহে ব্যাঘাত এবং দেরি হওয়া নিয়ে আমদানি ও রপ্তানিকারকদের উদ্বেগ বেড়েছে।
মেরিল্যান্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাল্টিমোর বন্দরে জাহাজ চলাচল স্থগিত থাকবে। গতবছর এই বন্দর দিয়ে ৪ কোটি ৭০ লাখ টন বিদেশি পণ্য পরিবহন হয়েছিল।
‘দ্য ইনস্টিটিউট অব এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড’ এর মহাপরিচালক মার্কো ফোরজিওন বিবিসি-কে বলেছেন, এই স্থগিতাদেশ বিশ্বব্যাপী পণ্য সরবরাহে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
গত মঙ্গলবার প্রথম প্রহরের দিকে একটি কন্টেইনারবাহী জাহাজের ধাক্কায় বাল্টিমোরের ঐতিহাসিক ফ্রান্সিস স্কট কি ব্রিজের একাংশ ধসে পড়ে। আড়াই কিলোমিটারের বেশি লম্বা সেতুটির পিলারে কন্টেইনারবাহী জাহাজটি ধাক্কা মেরেছিল।
কর্মকর্তারা জানান, জাহাজটিতে ‘বৈদ্যুতিক গোলযোগ’ দেখা দিয়েছিল এবং সেতুর সঙ্গে সংঘর্ষের কয়েক মুহূর্ত আগে সেটি সহায়তা চেয়ে জরুরি বার্তা পাঠিয়েছিল।
৪৭ বছর পুরানো সেতুটির সঙ্গে যে জাহাজের সংঘর্ষ হয় সেটি সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী জাহাজ দ্য ডালি। পোর্ট ব্রিজ থেকে সেটি মঙ্গলবার স্থানীয় সময় ০০:৪৫টার দিকে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল।
বিবিসি জানায়, বাল্টিমোর বন্দর যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ব্যস্ত বন্দর। দেশটির সর্বাধিক গাড়ি আমদানি এবং কয়লা রপ্তানির কাজে বহুল ব্যবহৃত বন্দর এটি।
গত বছর ৭ লাখ এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইইউ দেশগুলোর ব্র্যান্ড কোম্পানির ৫০ হাজারের বেশি কার এবং অন্যান্য গাড়ি বাল্টিমোর বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কো ফোরজিওন।
এই বন্দরে জাহাজ চলাচল স্থগিত হওয়ায় তাই গ্রাহকদের গাড়ি পরিবহণে বিলম্ব এবং অন্যান্য পণ্য রপ্তানি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহনমন্ত্রী পিট বুটিগিগ বলেছেন, “নিঃসন্দেহে বন্দরটি স্থগিতের দীর্ঘস্থায়ী ও বড় ধরনের প্রভাব পড়বে সরবরাহ ব্যবসায়। বন্দরটি আবার খুলতে কতদিন লাগবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়।”
উত্তর-পূর্ব যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে ছোট কন্টেইনার বন্দরগুলোরও অন্যতম বাল্টিমোর বন্দর। গতবছর চতুর্থ প্রান্তিকে ২৬৫,০০০ কন্টেইনার আনা-নেওয়া হয়েছে এই বন্দর দিয়ে। কন্টেইনার শিপিং বিশেষজ্ঞ লার্স জেনসেন একথা বলেছেন।
বন্দরটি বন্ধ থাকার কারণে এখন বাল্টিমোর অভিমুখে যাওয়া কন্টেইনারগুলো সম্ভবত বড় বন্দরগুলোতে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেনসেন।
এছাড়াও বাল্টিমোর তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) উল্লেখযোগ্য রপ্তানিকারক বন্দর। ফলে বিশ্বে গ্যাস রপ্তানিতে বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে আশঙ্কা করা হয়েছিল। কিন্তু চিসাপিক বে’র এলএনজি গ্যাস টার্মিনাল বলেছে,সেতু ধসের কারণে তাদের কার্যক্রম ব্যাহত হয়নি।
জাহাজ চলাচল ছাড়াও বাল্টিমোর বন্দরে ১৫ হাজার মানুষ কাজ করে। দুর্ঘটনার কারণে ড্যানিশ শিপিং কোম্পানি মেয়ার্স্ক এই বন্দরে আগামী দিনগুলোতে সব পরিষেবা বন্ধ রাখবে বলে জানিয়েছে।
বন্দর বন্ধ থাকার কারণে কয়লা রপ্তানিতে বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে গ্রাহকদের সতর্ক করে দিয়েছে বিভিন্ন রেল ও কয়লা কোম্পানি।