ইসরায়েলের হামলার পর ওই অঞ্চলের স্যাটেলাইট ছবিগুলোতে ইরানের ক্ষয়ক্ষতি পরিস্থিতির একটা ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
Published : 27 Oct 2024, 03:16 PM
ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ কর্মসূচির অংশ ছিল-এমন একটি পরিত্যক্ত ভবনে ইসরায়েলি বিমান আঘাত হেনেছে বলে এক মার্কিন গবেষক জানিয়েছেন। এর পাশাপাশি তিনি ও আরেক গবেষক জানান, ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য কঠিন জ্বালানি মিশ্রণের জন্য ব্যবহার করা একটি স্থাপনায়ও আঘাত হানা হয়েছে।
শনিবার ইরানের রাজধানী তেহরান ও পশ্চিমাঞ্চলীয় দু’টি প্রদেশের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। ইহুদি দেশটি প্রায় ১০০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে এ হামলা চালানোর দাবি করলেও ইরান চার সেনা নিহতের পাশাপাশি ‘সীমিত ক্ষয়ক্ষতি’ হয়েছে বলে জানিয়েছে।
তবে ইসরায়েলের হামলার পর ওই অঞ্চলের স্যাটেলাইট ছবিগুলোতে ইরানের ক্ষয়ক্ষতি পরিস্থিতির একটা ধারণা পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছিল।
এরপর বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবিগুলো পৃথকভাবে জাতিসংঘের সাবেক অস্ত্র পরিদর্শক ডেভিড অলব্রাইট ও ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সিএনএ-র সহযোগী গবেষণা বিশ্লেষক ডেকার এভেলেথের কাছে পৌঁছায়। এসব ছবি বিশ্লেষণ করে ইরানের কোন কোন স্থাপনা ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা মূল্যায়ন করেন তারা।
তারা রয়টার্সকে জানান, ইসরায়েল তেহরানের কাছে পার্চিনে ইরানের বিশাল সামরিক কমপ্লেক্সের বেশ কয়েকটি ভবনে হামলা চালিয়েছে।
এভেলেথ জানান, তেহরানের কাছে খোজিরে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রেও আঘাত হেনেছে।
ইরান খোজিরের ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রটির ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছে বলে রয়টার্স জুলাইয়ে খবর প্রকাশ করেছিল।
এভেলেথ বলেন, “ইসরায়েলি হামলায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন সক্ষমতা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।”
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইসরায়েলি জঙ্গি বিমানগুলো তেহরানের কাছে ও ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দু’টি প্রদেশে ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা ও অন্যান্য সামরিক এলাকায় আঘাত হেনেছে।
ইরান ১ অক্টোবর ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে দুই শতাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল। তার প্রতিশোধ নিতে শনিবার ইরানে পাল্টা হামলা চালায় ইসরায়েল।
ইরানের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো ইলাম ও খুজেস্তান প্রদেশের সীমান্তে এবং তেহরানের চারপাশে থাকা রাডারগুলোতে আঘাত হানতে ‘অতি হালকা বোমা’ ব্যবহার করেছে।
সামাজিক মাধ্যম এক্স এ করা পোস্টে অলব্রাইট জানান, বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট ছবিগুলোতে দেখা গেছে যে ইসরায়েল পার্চিনে তালেগান ২ নামের একটি ভবনে আঘাত হেনেছে। এই ভবনটি ইরানের পরিত্যক্ত পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ কর্মসূচী আমাদ পরিকল্পনা চলাকালে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালাতে ব্যবহার করা হতো।
জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, ইরান ২০০৩ সালে পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ কর্মসূচী বন্ধ করে দেয়। কিন্তু ইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ কর্মসূচীর কথা স্বীকার করেনি।
গবেষণা গোষ্ঠী ইনস্টিটিউট ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটির প্রধান অলব্রাইট এক্স এ জানান, তালেগান ২ ভবনে ইরান পারমাণবিক কর্মসূচীর গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা উপাদান রেখে দিয়েছিল।
তবে ইসরায়েলি বিমান হামলার আগে ইরান সম্ভবত প্রধান উপাদানগুলো সরিয়ে নিয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, “যদি ওই ভবনে কোনো উপাদান নাও থাকে তারপরও ভবিষ্যৎ পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ সম্পর্কিত কার্যক্রমের জন্য ভবনটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”
অলব্রাইট রয়টার্সকে জানান, পার্চিনের স্যাটেলাইট ছবিগুলোতে দেখা গেছে তালেগান ২ ভবন থেকে ৩২০ মিটার দূরে তিনটি ভবন ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভবনের মধ্যে দুইটিতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য কঠিন জ্বালানি মিশ্রণ প্রস্তুতের কাজে ব্যবহার করা হতো।
কোন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে অলব্রাইট এসব স্যাটেলাইট ছবি সংগ্রহ করেছেন তা প্রকাশ করেননি।
এভেলেথ জানান, বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট প্রতিষ্ঠান প্ল্যানেট ল্যাব থেকে পাওয়া একটি ছবিতে দেখা গেছে ইসরায়েল পার্চিনের বিশাল সামরিক স্থাপনাটির তিনটি কঠিন জ্বালানি মিশ্রণ করার ভবন ও একটি গুদাম ধ্বংস করে দিয়েছে।
প্ল্যানেট ল্যাবের ছবিগুলোতে দেখা গেছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় খোজিরের কমপ্লেক্সে দু’টি ভবন ধ্বংস হয়েছে। এখানেও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য কঠিন জ্বালানির মিশ্রণ প্রস্তুত করা হতো বলে জানান এভেলেথ।
রয়টার্স বিভিন্ন ছবি পর্যালোচনা করে দেখেছে, ওই ভবনগুলো আবর্জনার স্তূপ দিয়ে ঘেরা রয়েছে।
আরও পড়ুন: