ভারত যত ইচ্ছা রাশিয়ার তেল কিনতে ‍পারে: যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী

তেল বিক্রি থেকে রাশিয়ার রাজস্ব আয় হ্রাসের লক্ষ্যে পশ্চিমাদেশগুলো রাশিয়ার তেলের দামের সর্বোচ্চ সীমা (প্রাইস ক্যাপ) নির্ধারণ করে দিতে চাইছে।

রয়টার্স
Published : 12 Nov 2022, 02:40 PM
Updated : 12 Nov 2022, 02:40 PM

ভারত যদি পশ্চিমা বীমা, আর্থিক এবং সামুদ্রিক পরিষেবাগুলো থেকে দূরে সরে গিয়ে রাশিয়ার তেল কেনা অব্যাহত রাখতে চায় ততে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন।

বলেছেন, ভারত চাইলে রাশিয়ার কাছ থেকে যত খুশি তেল কিনতে পারে। এমনকি জি-৭ রাশিয়ার তেলের দামে যে সীমা বেঁধে দিতে যাচ্ছে তার থেকে বেশি দামে।

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো গভীর করার লক্ষ্যে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের ফাঁকে শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেন ইয়েলেন।

তেল বিক্রি থেকে রাশিয়ার রাজস্ব আয় হ্রাসে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার তেলের দামের সর্বোচ্চ সীমা (ক্যাপ) নির্ধারণ করে দিতে চাইছে। যা বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমিয়ে রাখতে সহায়তা করবে বলেও মনে করেন ইয়েলেন।

শিগগির ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার তেলের দামের উপর আরোপ করা ওই ক্যাপ কার্যকর করবে এবং রাশিয়া যদি বেঁধে দেওয়া ওই দামে তেল বিক্রি করতে রাজি না হয় তবে ইইউ দেশটির কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ করে দেবে।

ইয়েলেন বলেন, ‘‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন যখন রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করে দেবে তখন দেশটি এখন যে পরিমাণ তেল বিক্রি করতে পারছে সেই পরিমাণ তেল বিক্রি করাও তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।

‘‘তারা (রাশিয়া) এখন হন্যে হয়ে ক্রেতা খুঁছে এবং অনেক ক্রেতা পশ্চিমা পরিষেবাগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।”

চীনের বাইরে ভারতই এখন রাশিয়ার তেলের সবচয়ে বড় ক্রেতা।

বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশগুলোর সংগঠন জি৭ এবং অস্ট্রেলিয়া মিলে রাশিয়ার তেলের দামে যে সীমা নির্ধারণ করে দেয়ার (ক্যাপ) পরিকল্পনা করেছে তার চূড়ান্ত বিস্তারিত আগামী ৫ ডিসেম্বরের আগেই আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ইয়েলেন বলেন, ‘‘ওই ক্যাপ আরোপ করার পর ভারত, চীন এবং রাশিয়ার ক্রুডের অন্যান্য বড় ক্রেতারা এখন মস্কোকে তেলের জন্য যে দাম দিচ্ছে তা কমিয়ে ফেলতে বাধ্য হবে।

‘‘দরকষাকষির মাধ্যমে রাশিয়ার তেল বিক্রি হতে চলেছে এবং ভারত, আফ্রিকা বা চীন ওই দরকষাকষি করছে দেখ আমরা খুশি হব। সব ঠিকই আছে।”

তবে রাশিয়ার তেল কিনতে হলে ভারত পশ্চিমা বীমা, আর্থিক এবং সামুদ্রিক পরিষেবাগুলো ব্যবহার করতে পারবে না বলেও জানান ইয়েলেন।

রয়র্টাসকে তিনি বলেন, ‘‘ভারত বা ভারতের ব্যক্তিমালিকানাধীন তেল কোম্পানিগুলো যতদিন পর্যন্ত পশ্চিমা পরিষেবা ব্যবহার করবে না ততদিন পর্যন্ত তারা যেকোনো দামে রাশিয়ার তেল কিনতে পারবে। এজন্য তাদের অন্য পরিষেবা খুঁজে নিতে হবে বা অন্য কোনো উপায় বের করতে হবে।”

তেল বিক্রি থেকে রাশিয়ার রাজস্ব আয় হ্রাস করতেই দেশটির তেলের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার সীদ্ধান্ত হয়েছে। ইউক্রেইনে আক্রমণের জেরে রাশিয়ার অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত করে দেশটিকে যু্দ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য করতে পশ্চিমারা এই পরিকল্পনা করেছে।

এছাড়া, রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের উপর থাকা বীমা, সামুদ্রিক পরিষেবা এবং পশ্চিমা দেশগুলোর ব্যারেল প্রতি তেলের যে দাম নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে সেগুলোও থাকবে না।

রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী উরালস ক্রুডের দাম ব্যারেল প্রতি সর্বোচ্চ গড়ে ৬৩ থেকে ৬৪ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

রাশিয়া থেকে বেশি বেশি তেল কেনা প্রসঙ্গে গত সপ্তাহে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, নিজেদের লাভের কথা বিবেচনা করেই ভারত রাশিয়ার তেল কেনা অব্যাহত রাখবে।

ইয়েলেন বক্তব্যের পর রয়টার্স থেকে এ বিষয়ে ভারতের মত জানতে দেশটির অর্থমন্ত্রী ও জ্বালানিমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে হয়েছিল। কিন্তু তাদের পাওয়া যায়নি।

তবে কয়েকজন ভারতীয় কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, রাশিয়ার তেলের দামে ক্যাপ নির্ধারণ করলে তার ফল কী হতে পারে তা নিয়ে কোনো পরীক্ষা হয়নি। তাই বিষয়টি নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।

এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘‘আমার মনে হয় না আমরা রাশিয়ার তেলের দামের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দেয়ার বিষয়টি অনুসরণ করবো। এ বিষয়ে আমরা অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, বেশিরভাগ দেশ এটার সঙ্গে মানিয়ে নেবে এবং কারোই রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করা উচিত হবে না।’’

তিনি আরো বলেন, সরবরাহ ও দামে স্থিতিশীলতা বজায় থাকা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

প্রাইস ক্যাপ নির্ধারণের পর ক্রেতাদের যেন ট্যাঙ্কার, বীমা বা অন্যান্য পরিষেবা পেতে অসুবিধায় পড়তে না হয় তাই রাশিয়ার সর্ববৃহৎ তেল রপ্তানিকারক কোম্পানি রোজনেফ্ত ট্যাঙ্কার পরিবহন ব্যবসা আরো বাড়াচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে ইয়েলেন বলেন, প্রাইস ক্যাপ নির্ধারণের পর এমনকি যদি রাশিয়ার ট্যাঙ্কার, চীনের ট্যাঙ্কার এবং পুরাতন নৌবহর, বাতিল হয়ে পড়ার ট্যাঙ্কার ও পুনরায় পতাকাবাহী জাহাজগুলো মিলেও তেল পরিবহন শুরু করে। তারপরও বর্তমানে মূল্যছাড় ছাড়াই যে তেল রাশিয়া বিক্রি করছে সেই পরিমাণ তেল বিক্রি করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে বলেই বিশ্বাস ইয়েলেনের।