“ওর অপরাধ একটাই—সে ফিলিস্তিনি এক নারীকে বিয়ে করেছে,” বলেছেন ওই গবেষকের বাবা।
Published : 25 Mar 2025, 12:49 PM
শ্বশুরের হামাস সংশ্লিষ্টতাকে কারণ দেখিয়ে ভারতীয় এক পোস্ট ডক্টরাল গবেষকের ভিসা বাতিল করে তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।
বদর খান সুরি নামের এই ভারতীয়র বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ, তার সঙ্গে জ্ঞাত অথবা সন্দেহভাজন এক সন্ত্রাসী, হামাসের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
বিবিসি লিখেছে, দেড় দশক আগে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কনফ্লিক্ট স্টাডিজে পড়াশোনা করার সময় দিল্লি থেকে যাওয়া এক ত্রাণ বহরের সঙ্গে গাজায় যান সুরি। সেখানেই পরিচয় হয় মাফেজ সালেহর সঙ্গে।
মার্কিন নাগরিক সালেহ সেসময় গাজায় অনুবাদক ও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছিলেন। পরিচয় হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই বিয়ে করেন তারা। তাদের বিয়ের সংবাদ ভারতের গণমাধ্যমেও স্থান পেয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সালেহর বাবা একসময় হামাসনেতা ইসমাইল হানিয়ার উপদেষ্টা ছিলেন। যদিও পরের দিকে তিনি গাজা সরকারের দায়িত্ব ছেড়ে দেন এবং ২০১১ সালে শান্তি এবং সংঘাত প্রশমনে তাগাদা দিতে হাউজ অব উইজডম নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন বলে আদালতে দেওয়া সালেহর জবানবন্দিতে বলা হয়েছে।
বিয়ের পর প্রায় এক দশক দিল্লিতে কাটানোর পর সুরি-সালেহ দম্পতি যুক্তরাষ্ট্রে যান। সুরি ওয়াশিংটনের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবে যোগ দেন।
প্রায় তিন বছর ধরে ভার্জিনিয়ায় বসবাসরত এ ভারতীয়কে সোমবার রাতে তার বাড়ির বাইরে থেকে আটক করা হয়।
কর্তৃপক্ষ ভিসা বাতিল করলেও পরে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ার ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পরপরই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ফিলিস্তিনপন্থিদের ওপর খড়্গহস্ত হওয়ার ঘোষণা দেন। এরই মধ্যে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মিছিল করা একাধিক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে রঞ্জিনী শ্রীনিবাসন নামে এক ভারতীয় শিক্ষার্থীও আছে।
সুরির আইনজীবী জানিয়েছেন, আপাতত তিনি অভিবাসন আদালতের শুনানির তারিখের জন্য অপেক্ষা করছেন।
আনন্দবাজার বলছে, মার্কিন প্রশাসন সুরির বিরুদ্ধে একটি বিশেষ ধারায় ব্যবস্থা নিয়েছে। এ ধারায়, যেসব অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘ক্ষতিকর’ বলে বিবেচিত হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চাইলে তাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করতে পারে।
সুরি বৈধভাবে শিক্ষার্থী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। তার মার্কিন স্ত্রীর ফিলিস্তিন সংযোগের কারণেই এখন তাকে নিশানা বানানো হচ্ছে, ভাষ্য আইনজীবীর।
ত্রাণবহরের সঙ্গে যাওয়ার পর আর একবারই সুরি গাজায় গিয়েছিলেন, তাও নিজের বিয়েতে।
নম্রভাষী, লাজুক, কঠোর পরিশ্রমী সুরিকে আটক ও তার ভিসা বাতিলের ঘটনা ভারতে তার শিক্ষক ও সহপাঠীদের স্তম্ভিত করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
“ও খুবই পরিশ্রমী, ভদ্র স্বভাবের ছাত্র ছিল। যুদ্ধ নিয়ে মতামত দেওয়া অপরাধ নয়। এটা তো তার গবেষণারই অংশ,” বলেছেন জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক।
ভারত দীর্ঘদিন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে জোরাল ভূমিকা রেখে এলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের সঙ্গে ইসরায়েলের কৌশলগত যোগাযোগ বেড়েছে। যে কারণে, এখন তাদেরকে তেল আবিবের হামলার কড়া প্রতিবাদ করতে খুব একটা দেখা যায় না। তবে ভারতজুড়ে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়ে নিয়মিত বিক্ষোভ-সমাবেশ দেখা যায়।
ইসলামাবাদ ভ্রমণ পাস নিা দেওয়ায় ২০১০ সালের ডিসেম্বরে দিল্লি থেকে গাজার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া ত্রাণবহরটি পাকিস্তান হয়ে যেতে পারেনি। বাধ্য হয়ে সুরিদের যেতে হয়েছিল ইরান, তুরস্ক, সিরিয়া, মিশর ঘরে।
ওই ত্রাণ বহরের অন্যতম সংগঠক ফিরোজ মিথিবোরওয়ালা বলেন, “আমাদের আলোচনায় ও (সুরি) সবসময় সেক্যুলার অবস্থানই নিতো। সে কোনোভাবেই ডানপন্থি ঘরানার নয়।”
সুরির বাবার আশা শেষ পর্যন্ত আদালতে ন্যায়বিচার পাবে তার ছেলে।
“এই অভিযোগগুলো কেবল কথার কথা, একেবারেই ভিত্তিহীন। ও হামাস তো দূর বিয়ে ছাড়া ফিলিস্তিনের সঙ্গেও কোনোভাবে জড়িত নয়। তার অপরাধ একটাই—সে একজন ফিলিস্তিনি নারীকে বিয়ে করেছে,” বলেছেন তিনি।