তিনি ষোড়শ শতাব্দীর আদিবাসী নেতা গুয়াইকাইপুরো ও ভেনেজুয়েলার প্রয়াত সাবেক প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজের নামে শপথ নেন।
Published : 11 Jan 2025, 02:39 PM
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে টানা তৃতীয়বারের মতো শপথ নিয়েছেন নিকোলাস মাদুরো। তিনি প্রায় ১২ বছর ধরে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। এই সময়টি গভীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটের জন্য চিহ্নিত হয়ে আছে।
শুক্রবার ভেনেজুয়েলার রাজধানী কারাকাসের জাতীয় পরিষদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন মাদুরো। তিনি ষোড়শ শতাব্দীর আদিবাসী নেতা গুয়াইকাইপুরো ও ভেনেজুয়েলার প্রয়াত সাবেক প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজসহ অন্যান্য কয়েকজনের নামে শপথ নেন।
শপথ নেওয়ার পর তিনি বলেন, “আমার নতুন রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শান্তির, সমৃদ্ধির, সমতা এবং নতুন গণতন্ত্রের সময়কাল হবে।”
এ সময় তিনি সংবিধান সংস্কারের লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠন করার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, “এটি করা সম্ভব কারণ ভেনেজুয়েলা শান্তিপূর্ণভাবে এর জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণ সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতার পূর্ণ অনুশীলন করে।”
রয়টার্স জানায়, ১২৫টি দেশের প্রায় ২০০০ জন অতিথি এ শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বলে দেশটির সরকার জানিয়েছে। তাদের মধ্যে ভেনেজুয়েলার ঘনিষ্ঠ মিত্র কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগেল দিয়াজ কানেল, নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট দানিয়েল ওর্তেগা রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষের স্পিকার বিচেস্ল্যাভ ভলোদিন অন্যতম।
সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট মাদুরোকে ‘অভিনন্দন’ জানিয়েছেন প্রতিবেশী দেশ বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট লুয়িস আরসে।
মাদুরোর শপথ নেওয়ার দিনটিতেই তাকে গ্রেপ্তারের জন্য তাদের প্রস্তাবিত পুরস্কারের অর্থমূল্য পূর্বের এক কোটি ৫০ লাখ থেকে বাড়িয়ে দুই কোটি ৫০ লাখ ডলার করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। তারা মাদুরোর বিরুদ্ধে মাদক পাচারের অভিযোগে এনে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
এর পাশাপাশি ভেনেজুয়েলার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডিওসদাদো কাবেইওকে গ্রেপ্তারের জন্যও বাড়িয়ে দুই কোটি ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে ওয়াশিংটন। আর দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদ্রিনোর জন্য বড়িয়ে এক কোটি ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে তারা। এর পাশাপাশি ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানির প্রধানসহ আরও আট কর্মকর্তারা বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র ২০২০ সালে মাদুরো ও তার সরকারের অন্যান কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মাদক পাচার ও দুনীর্তির অভিযোগ এনে এসব গ্রেপ্তারি পরোয়ান জারি করে। কিন্তু মাদুরো ও সহকর্মীরা এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। পশ্চিমা দেশগুলো এবং দেশটির বিরোধীদের করা অভিযোগের নিন্দা জানিয়েছেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের নিষেধাজ্ঞাকে ‘অবৈধ’ ও ‘সাম্রাজ্যবাদী’ অ্যাখ্যা দিয়ে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট তার দেশের অর্থনৈতিক পতনের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোকে দায়ী করেন।
ছয় বছর মেয়াদি টানা দুই মেয়াদে ২০১৩ সাল থেকে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে আছেন মাদুরো। ২০২৪ এর জুলাইতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত ও নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ। নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিতর্ক চলায় তার শপথ নিতে ছয় মাস দেরি হল।
বিভিন্ন দেশের আহ্বান সত্ত্বেও ভেনেজুয়েলার নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ মাদুরোর জয় নিশ্চিত করার বিস্তারিত পরিসংখ্যান কখনোই প্রকাশ করেনি। ফলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাদুরোর জয় নিয়ে বিভিন্ন মহলের সন্দেহ নিরসন হয়নি। বিশ্বের অনেকগুলো দেশ তাকে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোরও আহ্বান জানিয়েছে।
রয়টার্স জানায়, নির্বাচনের পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত থাকা আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিরা বলেছেন, ভোট গণতান্ত্রিক ছিল না। ভেনেজুয়েলার বিরোধীদল দাবি করেছে, নির্বাচনে তাদের প্রার্থী এদমুন্দো গনসালেস ব্যাপক ভোটে জয়ী হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ গনসালেসকেই দেশটির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
নির্বাচনের পরে সেপ্টেম্বরে গনসালেস দেশ ছেড়ে স্পেনে চলে যান। তার মিত্র মারিয়া করিনা মাচাদো ভেনেজুয়েলার কোথাও আত্মগোপন করে আছেন। আর দেশটির বিরোধীদলীয় অন্যান্য শীর্ষ নেতা ও প্রতিবাদকারীদের জেলে ভরেছে মাদুরো সরকার।
গনসালেস এখন দুই আমেরিকা মহাদেশজুড়ে ঝটিকা সফর করছেন। তিনি ভেনেজুয়েলায় ফিরে যাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু শুক্রবার সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা এক ভিডিওতে মাচাদো আভির্ভূত হয়ে বলেছেন, এখন তার (গনসালেসের) দেশে ফেরার উপযুক্ত সময় নয়।
বিরোধী দলের বিরুদ্ধে ‘ফ্যাসিবাদী’ চক্রান্ত উস্কে দেওয়ার অভিযোগ করেছে ভেনেজুয়েলা সরকার। গনসালেস দেশে ফিরলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা। গনসালেসকে গ্রেপ্তারের জন্য এক লাখ ডলার পুরস্কারও ঘোষণা করেছে ভেনেজুয়েলার কর্তৃপক্ষ।