লোহিত সাগরে জাহাজে ইয়েমেনের হুতি গোষ্ঠীর হামলার রাশ টানতে ইরান কাজ না করলে চীনের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য সম্পর্ক ক্ষতির মুখে পড়বে- সতর্ক করেছে বেইজিং।
Published : 26 Jan 2024, 04:59 PM
লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতে ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুতি গোষ্ঠীর হামলার রাশ টানতে ইরানকে চাপ দিচ্ছে চীন। ইরান লাগাম টানতে না পারলে তাদেরকে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে হবে বলে বেইজিং সতর্ক করেছে।
ইরানের চারটি সূত্র এবং সংশ্লিষ্ট একজন কূটনীতিক একথা জানিয়েছেন। ইরানি সূত্রগুলো জানায়, লোহিত সাগরে হুতি হামলা এবং ইরানের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যের বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি বেইজিং ও তেহরানে বেশ কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে।।
ইরানের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই আলোচনা সম্পর্কে বলেছেন, “মূলত চীন (ইরানকে) বলেছে, আমাদের স্বার্থ যদি কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তা তেহরানের সঙ্গে আমাদের ব্যবসায় প্রভাব ফেলবে। তাই হুতিদের সংযম দেখাতে বলুন”।’
তবে হুতি হামলার লাগাম টানতে না পারলে ইরান-চীন বাণিজ্য কীভাবে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সে বিষয়ে চীনের কর্মকর্তারা সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি বলে জানিয়েছে চার ইরানি সূত্র।
গত একদশক ধরে ইরানই চীনের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। তবে তাদের বাণিজ্য সম্পর্কে ওঠা-নামাও আছে।
বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক জলপথ লোহিত সাগর। কিন্তু গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশকরে এই জলপথে ইসরায়েলগামী বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতে হামলার ঘোষণা দেয় ইয়েমেনের হুতি গোষ্ঠী।
তারা একের পর এক বিভিন্ন জাহাজে হামলা চালিয়ে আসছে। এতে ওই পথে জাহাজ চলাচল বিঘ্নিত হয়ে বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে শিপিং ব্যয়।
জাহাজ চলাচল নিরাপদ রাখতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ এ জলপথে সক্রিয় নৌ-টহল শুরু করে এমরকী ইয়েমেনে হুতিদের একাধিক নিশানায় কয়েক দফা হামলাও চালিয়েও হুতি হামলা বন্ধ করতে পারেনি। বরং হুতিরা আরও বেশিমাত্রায় লোহিত সাগরের পশ্চিমা বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতে হামলার অঙ্গীকার করেছে।
ইরানি সূত্রগুলো জানিয়েছে, চীন স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছে, চীন সংশ্লিষ্ট কোনো জাহাজে হামলা হলে বা চীনা স্বার্থ কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে, বেইজিং তেহরানকে নিয়ে খুবই হতাশ হবে।
ইরানের অপরিশোধিত তেলের বড় ক্রেতা চীন। দেশটির তেল পরিশোধনাগারগুলো গত বছর ইরানের অপরিশোধিত তেলের মোট ৯০ শতাংশ একা কিনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেক কাস্টমার কমে যাওয়ায় চীনের তেল কোম্পানিগুলো ইরানের তেল ডিসকাউন্টে কিনে মুনাফা করে থাকে।
ইরানের এক কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ইরানের কাছে চীন গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গাজা, লেবানন, সিরিয়া, ইরাকের বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং ইয়েমেনের হুতিদের ওপর ইরানের নিয়ন্ত্রণ আঞ্চলিক জোট ও বিভিন্ন বিষয়ে ইরানের ভূমিকা মুখ্য হয়ে উঠেছে।
লোহিত সাগরে হুতি হামলা নিয়ে চীন-ইরান আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “চীন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর আন্তরিক বন্ধু এবং এ অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা এগিয়ে নিতে এবং অভিন্ন উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
“আমরা দৃঢ়ভাবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে তাদের কৌশলগত স্বাধীনতা জোরদার করা, আঞ্চলিক নিরাপত্তা সমস্যা সমাধানে একতাবদ্ধ করা এবং সহযোগিতা করাকে সমর্থন করি।”
তবে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।