হতাহতদের বেশিরভাগই ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালা ও তামিলনাড়ুর বাসিন্দা।
Published : 13 Jun 2024, 04:21 PM
কুয়েতের দক্ষিণাঞ্চলীয় আহমাদি গভর্নরেটের মানগাফ এলাকায় বিদেশি শ্রমিক বসবাসের একটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৪৯ জনের মধ্যে ৪০ জনই ভারতীয় বলে জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বুধবার ভোর ৬ টায় এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ওই সময় ভবনটিতে থাকা অধিকাংশ শ্রমিকই ঘুমিয়ে ছিলেন। ঘুমের মধ্যেই অনেক আগুনের ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ভবনটির নিচের অংশ আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে এবং উপরের তলা থেকে ঘন কালো ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়।
বিবিসি-র তথ্য মতে, হতাহতদের বেশিরভাগই ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালা ও তামিলনাড়ুর বাসিন্দা। আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৫০ জন ভারতীয়। আহতদের মধ্যে ফিলিপিনো ও নেপালি শ্রমিকও রয়েছেন।
কুয়েতের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশই বিদেশি শ্রমিক। দেশটি অভিবাসী শ্রমের উপর বিশেষত নির্মাণ ও গার্হস্থ্য খাতে অত্যন্ত নির্ভরশীল।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো নিয়মিতভাবে তাদের জীবনযাত্রার মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ভবনটিতে ১৯৬ জন শ্রমিক ছিলেন এবং ধারণা করা হচ্ছে ভবনটিতে অতিরিক্ত জনাকীর্ণ হয়ে থাকতে পারে।
পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেন, অগ্নিকাণ্ডের সময় ভবনটিতে 'বিপুল সংখ্যক' মানুষ ছিলেন।
"কয়েক ডজন মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছিল, তবে দুর্ভাগ্যক্রমে আগুনের ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ার কারণে শ্বাসরোধ হয়ে অনেক লোক মারা গেছেন।"
তিনি আরও বলেন, এই ধরনের আবাসনে উপচে পড়া ভিড় সম্পর্কে প্রায়শই সতর্কতা জারি করা হয়।
কুয়েতের উপ-প্রধানমন্ত্রী শেখ ফাহাদ ইউসুফ আল-সাবাহ সম্পত্তির মালিকদের বিরুদ্ধে লোভের অভিযোগ এনে বলেছেন, “ভবনের মান লঙ্ঘনের কারণে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে।”
দেশটির ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আল-সাবাহ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, 'দুর্ভাগ্যজনকভাবে সম্পত্তির মালিকদের লোভের কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে।
"তারা নিয়ম লঙ্ঘন করেছে এবং এটি লঙ্ঘনের ফলাফল।”ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হতাহত ও তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'কুয়েত সিটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা খুব দুঃখজনক। যারা তাদের নিকটাত্মীয়দের হারিয়েছেন, তাদের প্রতি আমার সমবেদনা রইল। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।”
তিনি আরও বলেন, ভারতীয় দূতাবাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং তারা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে কুয়েতের উদ্দেশে রওনা হওয়া ভারতীয় সরকারের জুনিয়র মন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং বলেন, “নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে।
বিমানবাহিনীর একটি বিমান প্রস্তুত রয়েছে। লাশগুলো শনাক্ত করার সঙ্গে সঙ্গে স্বজনদের খবর দেওয়া হবে এবং আমাদের বিমানবাহিনী লাশগুলো নিয়ে আসবে।”
ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্য থেকে আসা মানিকান্দন নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসি তামিলকে বলেন, “এসব শ্রমিকের অনেকেই রাতের শিফটে ছিলেন।
তিনি বলেন, “যারা ভোরে ওই অ্যাপার্টমেন্টে ফিরেছেন, তাদের কেউ কেউ কাজ থেকে ফেরার পর রান্না করছিলেন। আগুন লাগার পর তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ভবনে বসবাসকারী লোকজন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।”