ভারতের নেওয়া পদক্ষেপের পাল্টায় পাকিস্তান কী কী ব্যবস্থা নিতে পারে তা ঠিক করতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ইসলামাবাদে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক ডেকেছেন।
Published : 24 Apr 2025, 05:51 PM
কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর ভারত সিন্ধু নদীর পানি বন্টন চুক্তি স্থগিতের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে ‘পানি যুদ্ধ’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন পাকিস্তানের এক মন্ত্রী।
পেহেলগামে মঙ্গলবারের হামলার প্রতিক্রিয়ায় পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে দূরত্ব যে আরও বাড়তে যাচ্ছে, পাকিস্তানি মন্ত্রীর মন্তব্যে তারই ইঙ্গিত মিলছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগাম এলাকায় মঙ্গলবার বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছে, যাকে প্রায় দুই দশকের মধ্যে ভারতে বেসামরিকদের ওপর সবচেয়ে বড় হামলা বলা হচ্ছে।
বুধবার ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, হামলার সঙ্গে সীমান্তের ওপারের যোগসাজশ বিষয়ে নিরাপত্তা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিকে অবহিত করা হয়েছে এবং নয়া দিল্লি ছয় দশক পুরনো নদীর পানি বন্টন চুক্তি স্থগিত এবং পাকিস্তানের সঙ্গে থাকা একমাত্র স্থল সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দিচ্ছে।
“বেপরোয়াভাবে ভারতের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত পানি যুদ্ধের শামিল; এটি একটি কাপুরুষোচিত, অবৈধ পদক্ষেপ,” বুধবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এমনটাই বলেন পাকিস্তানের বিদ্যুৎ মন্ত্রী আওয়াইজ লেখারি।
পেহেলগামে জঙ্গি হামলার সঙ্গে পাকিস্তানি যোগসাজশ নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কূটনীতিক মিস্ত্রি বিস্তারিত কিছু বলেননি, কোনো তথ্যপ্রমাণও দেননি।
বুধবার নয়া দিল্লি যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তার মধ্যে পাকিস্তান থেকে তার প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে আনা এবং ইসলামাবাদ মিশনে কর্মীসংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ করার সিদ্ধান্তও আছে।
ভারত নয়া দিল্লির পাকিস্তান দূতাবাসের শীর্ষ কর্মকর্তাকে তলব করে পাকিস্তান মিশনের সব প্রতিরক্ষা উপদেষ্টাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণার নোটিস এবং তাদেরকে ভারত ছাড়তে ৭ দিন সময়ও বেঁধে দিয়েছে।
হামলায় ভারতের প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে বিরোধীদের জানাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এরই মধ্যে সর্বদলীয় বৈঠকও ডেকেছেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার কয়েকশ বিক্ষোভকারীকে নয়া দিল্লির পাকিস্তান দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করতে, স্লোগান দিতে ও পুলিশের ব্যারিকেডে ধাক্কা দিতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
ভারতের নেওয়া পদক্ষেপের পাল্টায় পাকিস্তান কী কী ব্যবস্থা নিতে পারে তা ঠিক করতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ইসলামাবাদে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক ডেকেছেন বলে এক্সে এক পোস্টে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশহাক দার।
১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সিন্ধু পানি বন্টন চুক্তি হযেছিল। সেসময় এ চুক্তিতে সই করেছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু আর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান। পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯৬৫, ১৯৭১ ও ১৯৯৯ সালের যুদ্ধেও এ চুক্তি টিকে ছিল, যা এবার অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে গেল।
পেহেলগামে জঙ্গি হামলার আগেই পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ ছিল; ২০১৯ সালে নয়া দিল্লি কাশ্মীরের আধা-স্বায়ত্তশাসন মর্যাদা বাতিল করার পর পাকিস্তান ভারতের দূতকে বহিষ্কার করে এবং এখন পর্যন্ত নয়া দিল্লিতে কোনো রাষ্ট্রদূতও পাঠায়নি।
ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই পুরো কাশ্মীর নিজেদের বলে দাবি করলেও দুই দেশই আলাদা দুটি খণ্ড শাসন করছে। কাশ্মীরের কিছু অংশ চীনের দখলেও আছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তার দল বিজেপি কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলকে বড় অর্জন এবং মুসলিম অধ্যুষিত অশান্ত অঞ্চলটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে বলে দেখানোর চেষ্টা করছিল, মঙ্গলবারের হামলা তাতে জোর ধাক্কা দিয়েছে।
ভারত দীর্ঘদিন ধরেই কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ডে পাকিস্তানের সম্পৃক্ততা আছে বলে দাবি করে আসছে। অন্যদিকে ইসলামাবাদ বলছে, তারা কাশ্মীরিদের স্ব-শাসনের অধিকারের পক্ষে কেবল কূটনীতিক ও নৈতিক সমর্থনই দিচ্ছে।