সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, হিজাব ও বোরকা পরা প্রায় ২০-২৫ জন আফগান নারী রাজধানীতে বিক্ষোভ করছেন।
Published : 22 Dec 2022, 10:56 PM
মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পথ বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া পাঁচ নারীকে গ্রেপ্তার করেছে তালেবান।
সেইসঙ্গে তিনজন সাংবাদিককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানায় বিবিসি। তাখার প্রদেশেও এ নিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত মঙ্গলবার তালেবান সরকারের উচ্চশিক্ষামন্ত্রী এক চিঠিতে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নারীদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে না দেওয়ার নির্দেশনা জারি বলেছেন, এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে।
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে তালেবান শাসনে আফগানিস্তানে নারীদের শিক্ষার সুযোগ আরও সীমিত হয়েছে। দেশটিতে মাধ্যমিক পর্যায়ের বেশিরভাগ স্কুলে আগেই ছাত্রীদের পড়ানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বিবিসি জানায়, মঙ্গলবার ওই নিষেধাজ্ঞা জারির পর বুধবারই দেশটির বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শত শত নারীকে ক্যাম্পাসে প্রবেশে বাধা দেন নিরাপত্তারক্ষীরা।
এ বিষয়ে তালেবানের শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, তাদের আলেমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম এবং পরিবেশ মূল্যায়ন করেছেন এবং ‘যথাযথ পরিবেশ তৈরি’ না হওয়া পর্যন্ত নারীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া নিষেধ থাকবে।
যার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের কিছু ভিডিও বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা গেছে। ভিডিতে দেখা যায়, হিজাব ও বোরকা পরা প্রায় ২০-২৫ জন আফগান নারী কাবুলের রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল করছেন। তাদের হাত ব্যানার এবং তারা স্লোগান দিচ্ছেন।
প্রথমে বিক্ষোভকারীদের দলটি দেশটির সর্ববৃহৎ এবং অভিজাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাবুল ইউনিভার্সিটির সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শনের পরিকল্পনা করেছিল।
কিন্তু তালেবান প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়টির সামনে প্রচুর সংখ্যায় নিরাপত্তরক্ষী মোতায়েন করলে তাদের সেই পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে হয়।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন নারী বিবিসি-কে বলেন, বিক্ষোভে সময় তালেবান প্রশাসনের নারী কর্মকর্তারা তাদের মারধর করেছেন এবং কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আরও বলেন, তাকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়। শেষ পর্যন্ত কোনো রকমে পালিয়ে তিনি গ্রেপ্তার হওয়া এড়ান।
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন তালেবানের নারী সদস্য ঢুকে গিয়েছিল। তারা আমাদের কয়েকজনকে মারধর করে, কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।”
আরেকজন জানান, গ্রেপ্তারের পর দুইজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে আরও কয়েকজন এখনও আটক আছেন।
মেয়েদের উচ্চশিক্ষার পথ বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে হওয়া বিক্ষোভে পুরুষরাও সমর্থন দিয়েছেন। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে প্রায় ৫০ জন অধ্যাপক প্রতিবাদ স্বরূপ পদত্যাগ করেছেন।
সেইসঙ্গে বেশ কয়েকজন পুরুষ শিক্ষার্থী প্রতিবাদ হিসেবে পরীক্ষায় অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
২০২১ সালে অগাস্টে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পশ্চিমা সমর্থিত সরকারকে উৎখাত করে দ্বিতীয়বারের মত আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে তালেবান।
সেসময় তারা বলেছিল, যুগের আধুনিকায়নের সঙ্গে তাল মেলাতে তারা এবার তাদের কট্টর শাসন ব্যবস্থার অনেক নিয়মই শিথিল করবেন।
কিন্তু তারা সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি।বরং দিন দিন তারা তাদের আগের শাসন ব্যবস্থাতে ফিরে যাচ্ছে।
আফগানিস্তান: মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ বন্ধই করে দিল তালেবান