অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরের শপিং মলে এ হামলায় ছুরিকাঘাতে ৬ জন নিহত এবং অন্তত ৮ জন আহত হয়েছে। হামলাকারীকে হত্যা করেছে পুলিশ।
Published : 13 Apr 2024, 10:10 PM
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরের পুলিশের ভাষ্যমতে, স্থানীয় সময় বেলা ৩ টা ১০ এর দিকে একবার শপিং মল ঘুরে গিয়েছিলেন হামলাকারী। এর কয়েকমিনিট পরই তিনি ফিরে এসে চালান তাণ্ডব।
সে সময়টিতে শপিং মল থেকে ছুটে ছুটে বেরিয়ে আসছিল কাতারে কাতারে মানুষ। সেই হই-হট্টোগোল যারা সচক্ষে দেখেছেন, তারা ঘটনার বর্ণনায় তুলে ধরেছেন হামলার ভয়াবহতা।
এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতের সেই তাণ্ডব শেষ হয়েছে এক নারী পুলিশ কর্মকর্তার সাহাসী পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে; যিনি পরে ‘হিরো’ তকমা পেয়েছেন।
শনিবার সিডনির বন্ডি এলাকায় এ হামলার ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিহত হয়েছে ৬ জন। তাদের ৫ জন নারী এবং একজন পুরুষ বলে পুলিশ জানিয়েছে। আহত হয়েছে শিশুসহ অন্তত ৮ জন। হামলাকারীকে গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ।
হামলার সময় দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে ক্যাফেতে ছিলেন এক বাসিন্দা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ-কে তিনি বলেন, “এটি ছিল স্রেফ হত্যাকাণ্ড।” তার চোখের সামনেই এক ব্যক্তিকে হঠাৎ নির্বিচারে মানুষজনকে ছুরিকাঘাত করতে দেখেন তিনি।
ভয়ে সিঁটিয়ে যাওয়া প্রত্যক্ষদর্শী এক নারী বলেন, “লোকটি উন্মাদের মতো ছুরি চালাচ্ছিল।’ একজন নারীকে রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন তিনি।
পুলিশ বলছে, হামলার অবসান ঘটে যখন ঘটনাস্থলে দায়িত্বে থাকা এক নারী পুলিশ ইন্সপেক্টর হামলাকারীর মুখোমুখি হন তখন। হামলাকারী ছুরি উঁচিয়ে ধরামাত্রই তাকে গুলি করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জেসন ডকসন বলেন, তিনি মানুষের চিৎকার-চেঁচামেচি শুনতে পান। বহু মানুষকে দৌড়াতে দেখেন। সবাই আত্মরক্ষার জন্য সেই নারী পুলিশ কর্মকর্তার পেছনে অবস্থান নেয়।
তখন হামলাকারী বড় একটি ছুরি নিয়ে এগিয়ে আসতে থাকেন। এরপর ডকসন কেবল শুনতে পান, “ছুরিটি ফেলে দিন”। এরপরই পুলিশ কর্মকর্তাটিকে হামলাকারীকে গুলি করতে দেখেন তিনি।
“যদি ওই পুলিশ কর্মকর্তা হামলাকারীকে গুলি না করতেন, তাহলে এ তাণ্ডব চলতেই থাকত,” বলেন ডকসন।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ নারী এই পুলিশ কর্মকর্তাকে ‘হিরো’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, “কোনও সন্দেহ নেই যে, তিনি তার দায়িত্ব পালন করে জীবন বাঁচিয়েছেন। ইউনিফর্ম পরা মানুষেরা বিপদের কাছে ছুটে যায়। বিপদ থেকে পালায় না।”
“আজ রাত আমাদের সবার জন্য, বন্ডি জংশনের বিপর্যয়কর সব দৃশ্য বর্ণনাতীত, বলে বোঝানোর মতো নয়”, বলেন আলবানিজ।
‘সবাই হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল’
বন্ডি সৈকতের কাছে হামলার ঘটনা ঘটা শপিং মলটির নাম ওয়েস্টফিল্ড মল। মলটি বেশ জনপ্রিয়। অন্যান্য দিনের মতো এদিনও সেখানে ছিল শত শত মানুষের ভিড়। বহু পরিবার,বহু শিশু সমাগম ছিল সেখানে।
কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন জনি নামের ৩৩ বছরের এক যুবক। একসময় তিনি তীব্র হট্টগোল শুনতে পান। পেছনে ফিরে দেখেন, এক নারী ও তার শিশুসন্তানের ওপর হামলা হয়েছে। ছুরিকাঘাতে ওই নারী আহত হয়েছিলেন। এতে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কেউ বুঝে উঠতে পারছিল যে না কী করা উচিত।
আহত নারী কোনোমতে কাছের একটি দোকানে ঢুকে পড়েন। এরপরই দোকানের কর্মচারীরা দরজা বন্ধ করে দেয়। সেখানে থাকা কয়েকজন ক্রেতা আহত নারীর রক্তপাত বন্ধের চেষ্টা করেন। তার অবস্থা বেশ খারাপ ছিল। তবে তার সন্তানের শরীরে আঘাত ততটা বেশি ছিল না।
বিবিসি-কে এক প্রত্যক্ষদর্শী ওলিন্ডার নেমার বলেন, “হামলার ঘটনা খুবই ভয়াবহ ছিল। আমি হামলাকারীকে ছুরি হাতে দৌড়াতে দেখি। লোকজন সব দৌড়াচ্ছিল,চেঁচামেচি করছিল। প্রথমে আমরা বুঝে উঠতে পারিনি কি হচ্ছে। তাই সবাইকে দৌড়তে দেখে আমরাও তাদের সঙ্গে দৌড় দেই।”