কৃষ্ণসাগর দিয়ে শস্য রপ্তানি চুক্তি নবায়নে নতুন শর্ত রাশিয়ার

চুক্তির পর এ পথে ৩ মাসে এক কোটি টন শস্য ও খাদ্যপণ্য ইউক্রেইন থেকে বিদেশে গেছে।

রয়টার্স
Published : 12 Nov 2022, 08:37 PM
Updated : 12 Nov 2022, 08:37 PM

কৃষ্ণ সাগর দিয়ে ইউক্রেইনের খাদ্যশস্য রপ্তানি অব্যাহত রাখার মেয়াদ বাড়াতে এখন পর্যন্ত চুক্তি হয়নি বলে জানিয়েছে রাশিয়া; এক্ষেত্রে নিজেদের 'মূল বিষয়টিকে' সামনে আনার কথাও বলছে তারা।

জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে চলমান আলোচনায় দেশটির কৃষি খাতে অর্থায়নকারী সরকারি রোসেলখব্যাংককে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার বাইরে এনে, সুইফট নেটওয়ার্কে আবার যুক্ত করার দাবি তুলেছে।

আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তিন মাস আগে হওয়া শস্য চুক্তি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে, যা থেকে গত অক্টোবরের শেষদিকে ইউক্রেইনের ড্রোন হামলার কারণে একবার সরে আসার ঘোষণা দিয়েছিল। যদিও স্থগিতের ঘোষণার চার দিনের মাথায় আবার চুক্তিতে ফিরেছিল রাশিয়া।

শনিবার রাশিয়ার উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ভার্সিনিনকে উদ্ধৃত করে দেশটির সংবাদ সংস্থা তাস জানায়, জেনেভাতে জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে শুক্রবার বৈঠক হয়েছে। এতে কার্যকর ও বিস্তারিত আলোচনা হলেও চুক্তি নবায়নের বিষয়টির সমাধান হয়নি বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

Also Read: ইউক্রেইনের শস্য রপ্তানি করিডোরের `শক্তিশালী সুরক্ষা’ চান জেলেনস্কি

Also Read: ইউক্রেইন থেকে শস্য রপ্তানির চুক্তিতে ফিরছে রাশিয়া

Also Read: কৃষ্ণসাগর দিয়ে শস্য রপ্তানি চুক্তি থেকে সরল রাশিয়া

রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটিকে আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনের নেটওয়ার্ক সুইফটের সঙ্গে আবার যুক্ত করা না হলে এ বিষয়ে অগ্রগতির সম্ভাবনা শূন্য বলে জানিয়েছেন ভার্সিনিন।

রয়টার্স লিখেছে, যুদ্ধ শুরুর পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির কৃষি খাতের বাণিজ্যিক লেনদেন ও অর্থায়নকারী ব্যাংকটিকে সুইফট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।

জাতিসংঘ বলছে, যুদ্ধের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া কৃষ্ণসাগর দিয়ে রপ্তানি শুরু করতে জুলাইয়ের চুক্তির পর এখন পর্যন্ত এক কোটি টন শস্য ও অন্যান্য খাদ্যপণ্য ইউক্রেইন থেকে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। বৈশ্বিক খাদ্য সংকটকালীন পরিস্থিতিতে তা বেশ কাজে আসে।

তবে রাশিয়া বারবার অভিযোগ করে আসছে পশ্চিমা আর্থিক নিষেধাজ্ঞার কারণে তার শস্য ও সার রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। সরাসরি বিধিনিষেধ না থাকলেও নিষেধাজ্ঞার কারণে রপ্তানিকারকদের সঙ্গে লেনদেনের পথ বন্ধ থাকায় অর্থায়ন, বন্ধর ব্যবহার, বীমা, পণ্য পাঠানো ও আমদানি-রপ্তানিসহ আর্থিক প্রক্রিয়া একপ্রকার বন্ধই হয়ে গেছে।

বিশ্ব বাজারে নিজেদের শস্য ও সার রপ্তানির পথ খোলা রাখতে রাশিয়া আগে থেকে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে শস্যের জাহাজ চলাচল চালু রাখার কথা বলে আসছিল।

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ইউক্রেইনের শস্যের চালান পরিবহন এবং রাশিয়ার কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি ‘স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া’ একটি সমন্বিত প্যাকেজের অংশ।

শুক্রবারের বৈঠকের বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে রাশিয়ার খাদ্যপণ্য ও সারের নিরবচ্ছিন্ন প্রবেশাধিকারই শুধু ঊর্ধ্বমুখী দ্রব্যমূল্যকে স্থিতিশীল করতে পারে।

শুক্রবার জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কৃষ্ণসাগর দিয়ে শস্য রপ্তানির উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে উভয়পক্ষ আলোচনার টেবিলে রয়েছে এবং এজন্য কার্যকরি আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

তবে রাশিয়ার মন্ত্রী ভার্সিনিনকে উদ্ধৃত করে দেওয়া বক্তব্যে বলা হয়, তাদের কৃষি খাতের অর্থায়নকারী ব্যাংকটিকে সুইফট নেটওয়ার্কে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি এক্ষেত্রে ‘মূল বিষয়’।

“এটা ছাড়া, অবশ্যই আমরা খুব স্বাভাবিকভাবেই এগোতে পারি না,” তিনি বলেন। তবে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা এটিকে মুখ্য বিষয় হিসেবে ‘বিবেচনা’ করার আশ্বাস দিয়েছে বলে তিনি জানান।

ইউক্রেইনে সামরিক আগ্রাসনের কারণে গত জুনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার এ ব্যাংকটিকে সুইফট থেকে বাদ দেয়।

গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেইনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হলে কৃষ্ণসাগর অবরোধ করেছিল রাশিয়া। তাতেই বিশ্বজুড়ে খাদ্যশস্যের দামে উল্লম্ফন দেখা দেয়। শস্যের জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেইনের ওপর নির্ভরশীল অনেক দরিদ্র দেশে দেখা দেয় খাদ্য সংকট। এরপরই আন্তর্জাতিক উদ্যোগে হয়েছিল ওই শস্য সরবরাহ চুক্তি।

গত জুলাইয়ে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় শস্য রপ্তানি চুক্তিটি সই করেছিল ইউক্রেইন ও রাশিয়া। এ চুক্তির আওতায় যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেইনে রপ্তানির জন্য আটকা পড়ে থাকা শস্য প্রথম রপ্তানি করা শুরু হয়। এরপর ইউক্রেইন থেকে ৯০ লাখ টন গম, সূর্যমুখী পণ্যসহ ভোজ্য তেল রপ্তানি করা হয়েছিল। এতে বিশ্বজুড়ে খাদ্যশস্যের দাম কমে আসে।

কিন্তু চলতি সপ্তাহেই রাশিয়া জানায়, কিইভ তাদের কৃষ্ণসাগরের নৌবহরে ড্রোন হামলা চালিয়েছে; যে নৌযানগুলোতে হামলা হয়েছে সেগুলো ওই শস্য রপ্তানির করিডোরের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্বে ছিল।

এই হামলাকে কারণ দেখিয়ে মস্কো জানিয়েছিল, তারা আর ওই করিডোর দিয়ে যাতায়াত করা বেসামরিক জাহাজের নিরাপত্তা দিতে পারবে না। এ কারণে শস্য রপ্তানি চুক্তি ৩০ অক্টোবরের প্রথমে স্থগিতের ঘোষণা দিলেও চার দিন পর আবার চুক্তিতে ফেরার কথা জানায়।

তবে সেসময় রাশিয়া চুক্তি স্থগিত করলেও জাতিসংঘ, তুরস্ক এবং ইউক্রেইন মিলে শস্য জাহাজ চলাচল অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা করেছিল।