হাতাহাতির ঘটনায় ভারতীয় জনতা পার্টির অভিযোগ, তাদের দুই এমপি জখম হয়েছেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর ধাক্কায়।
Published : 20 Dec 2024, 09:37 PM
ভারতীয় সংবিধান প্রণেতা বি আর আম্বেডকরকে নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিতর্কিত মন্তব্যকে ঘিরে পার্লামেন্ট ভবন চত্বরে ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি)-সঙ্গে বিরোধীদল কংগ্রেস সদস্যদের ধস্তাধস্তি হয়।
এর জেরেই এফআইআর হয়েছে বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে। বিজেপির অভিযোগ, তাদের দুই সাংসদকে আঘাত করেছেন তিনি। দিল্লির পার্লামেন্ট স্ট্রিট থানায় গিয়ে প্রথমে বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর, বাঁশুরি স্বরাজ অভিযোগ দায়ের করেন রাহুলের বিরুদ্ধে।
এরপর বিজেপি’র অভিযোগের ভিত্তিতে রাহুলের বিরুদ্ধে দিল্লি পুলিশের এফআইআর দায়ের হয় বলে জানিয়েছে ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ পত্রিকা। একাধিক ধারায় রাহুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
এর মধ্যে আছে- ন্যায় সংহিতার ১০৯ ধারা ( খুনের চেষ্টার অভিযোগ), ১১৫ ধারা (ইচ্ছাকৃতভাবে গুরুতর জখম করার অভিযোগ)-সহ ১১৭,১২৫, ১৩১, ৩৫১ ধারা। এতে হাতাহাতি কাণ্ডে রাহুলের বিপত্তি আরও বাড়ল।
বৃহস্পতিবার সকালে নতুন পার্লামেন্ট ভবনের মকর দ্বারে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন কংগ্রেস এবং বিজেপি এমপি’রা। তাতে উড়িষ্যার বালাসোরের এমপি প্রতাপ ষড়ঙ্গীর মাথা ফেটেছে। জখম হন উত্তরপ্রদেশের ফারুখাবাদের এমপি মুকেশ রাজপূতও।
বিজেপি-র অভিযোগ, দুই এমপি’ই জখম হয়েছেন রাহুল গান্ধীর ধাক্কায়। মুকেশ রাজপুতকে ধাক্কা মারেন রাহুল। তিনি পড়ে যান প্রতাপ ষড়ঙ্গীর উপর। ষড়ঙ্গীর মাথা ফেটে রক্ত ঝরে। মুকেশও আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি।
সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলছেন, “রাহুল গান্ধীর ধাক্কায় দুই বিজেপি সাংসদ গুরুতর জখম হয়েছেন। কোনও সাংসদ কীভাবে সংসদ চত্বরে বল প্রয়োগ করতে পারেন? কোন আইন এটার অনুমতি দেয়। আপনি কি কুংফু-ক্যারাটে অন্য সাংসদদের মারধর করার জন্যই শিখেছেন?”
তবে বিরোধীদল কংগ্রেস বলছে ভিন্ন কথা। কংগ্রেস সাংসদ মানিকম ঠাকুরের অভিযোগ, তাদের এমপি’রা সংসদে ঢুকতে গেলে বিজেপি এমপি’রা বাধা দেন। রাহুল গান্ধী বলেন, “আমি সংসদে ঢুকতে গেলে বিজেপি সাংসদরা ঘিরে ধরেন। আমাকে ধাক্কা দেওয়া হয়।”
রাহুলের বিরুদ্ধে এফআইআর করার প্রসঙ্গে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেছেন, “রাহুল আমার বড় ভাই। ধাক্কাধাক্কি করা তার স্বভাব নয়। যে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, কেউ তা বিশ্বাস করে না। আমি তার বোন হয়ে তা জানি। সারাদেশও জানে।”
কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এফআইআর প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে, আম্বেডকর সম্পর্কে শাহের অবমাননাকর মন্তব্যের জেরে রাজনৈতিক ভাবে বিপাকে পড়েছে বিজেপি। এ পরিস্থিতিতে নজর ঘোরাতেই রাহুলের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় সংবিধানের ৭৫ বছর নিয়ে এক ভাষণে অমিত শাহ ভারতের সাবেক মন্ত্রী ও সংবিধানের স্থপতি বি আর আম্বেডকর সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করে বসেন। তিনি বলেছিলেন, এখন নতুন একটা ফ্যাশন হয়েছে। সব বিষয়েই বার বার আম্বেডকর, আম্বেডকর করা হচ্ছে। এতবার সৃষ্টিকর্তার নাম নিলে সাত জন্ম পর্যন্ত স্বর্গলাভ হত।
শাহের এই মন্তব্যের পর থেকেই আম্বেডকর অবমাননার অভিযোগ তুলে তার বিরুদ্ধে সরব হয় কংগ্রেস-সহ অন্যান্য বিরোধীদলগুলো। বৃহস্পতিবারও অমিত শাহের সেই মন্তব্যকে ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয় পার্লামেন্টে। আর তা থেকেই ঘটে ধস্তাধস্তির ঘটনা।
এখন বিজেপি’র এফআইআর-এর ভিত্তিতে দিল্লি পুলিশ কী ব্যবস্থা নিতে পারে? পুলিশ প্রথমে দু'জন সাংসদের বয়ান রেকর্ড করবে। এরপর ঘটনার ভিডিও খতিয়ে দেখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তাছাড়া, পুলিশ ঘটনার সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ ও মোবাইল ফুটেজের পাশাপাশি সাংবাদিকদের ক্যামেরায় রেকর্ড করা ভিডিও সংগ্রহ করতে পারে।