প্রাণ বাঁচাতে গাজার বেশিরভাগ মানুষ এখন দক্ষিণে মিশর সীমান্তের রাফাহ শহরের দিকে ছুটছে।
Published : 01 Jan 2024, 11:08 PM
শুধু মানুষ নয় বরং গাজায় অনাহারে মরতে বসেছে চিড়িয়াখানার পশু-পাখিও। গাজার দক্ষিণের শহর রাফাহ তে ওই চিড়িয়াখানাটি ব্যক্তিমালিকানাধীন। সেখানকার গোমা পরিবার চিড়িয়াখানাটির মালিক।
গাজায় প্রায় ১২ সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলের অভিযান চলছে। গাজার উত্তরাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এবার ইসরায়েলি পদাতিক বাহিনী মধ্যাঞ্চলে অভিযান চালাচ্ছে। সেই সঙ্গে মিশর সীমান্তবর্তী দক্ষিণাঞ্চলে আকাশ হামলাতো চলছেই।
গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার বলতে গেলে সবাই এখন নিজ নিজ বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন। যদিও গাজার কোথাও এখন আর নিরাপদ নয় বলে বার বার সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। বেশিরভাগ মানুষ এখন দক্ষিণে মিশর সীমান্তের রাফাহ শহরের দিকে ছুটছে। ফলে শহরের রাস্তাঘাট, মাঠ বা খোলা জায়গা, কোথাও আর তিল ধারণের জায়গা নেই।
ইসরায়েলি বাহিনীর ধাওয়া খাওয়া বর্ধিত গোমা পরিবারের অনেক সদস্য গাজার নানা প্রান্ত থেকে এসে রাফাহর ওই চিড়িয়াখানায় আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। যেখানে খাঁচার ভেতর ক্ষুধার্ত বানর, সিংহ ও তোতা পাখিরা তীব্র অনাহারে খাবারের জন্য কাঁদছে।
আর ওই খাঁচাগুলোর পাশেই এক লাইনে প্লাস্টিকের তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছে মানুষ। গাজা সিটি থেকে পালিয়ে আসা আদেল গোমা বলেন, “যুদ্ধে অনেক পরিবার পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এখন আমাদের পরিবারের সবাই এই চিড়িয়াখানার ভেতর বসবাস করছে।
“আকাশের যুদ্ধবিমান থেকে আমাদের দিকে যা ছোড়া হয় তার থেকে চিড়িয়াখানায় এই পশুদের মধ্যে থাকা অনেক বেশি শান্তির।”
চিড়িয়াখানাটির মালিক আহমেদ গোমা বলেন, “ চারটি বানর এরইমধ্যে মারা গেছে। আরেকটি এতটাই দুর্বল হয়ে গেছে যে কখনো খাবার সামনে পেলেও সে নিজে নিয়ে আর খেতে পারে না।”
চিড়িয়াখানায় থাকা দুটি সিংহ শাবকের প্রাণে বেঁচে থাকা নিয়েও দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি। বলেন, “আমরা তাদের বাঁচিয়ে রাখতে শুধুমাত্র শুকনো রুটি পানিতে ভিজিয়ে খাওয়াচ্ছি। আর কোনো খাবার তাদের দিতে পারছি না। এখানকার অবস্থা সত্যিই খুব দুঃখজনক।”
সিংহ শাবক দুটোর মা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর খাবারের অভাবে নিজের ওজনের অর্ধেক হারিয়েছে। আগে সেটি প্রতিদিন মুরগির মাংস খেত। এখন সপ্তাহ ধরে অনাহারের পর শুধু শুকনো রুটি মেলে।
গত সপ্তাহে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছিল, গাজার বাসিন্দারা দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। পুরো জনগোষ্ঠী অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েল গাজায় সব ধরণের খাবার, ওষুধ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে।
এখন ইসরায়েলি বাহিনীর অনুমতি নিয়ে শুধুমাত্র ত্রাণের গাড়ি গাজায় প্রবেশ করতে পারে। তাও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। সেই ত্রাণ বিতরণ নিয়েও রয়েছে সংকট। নিরাপত্তা তল্লাশি, যুদ্ধক্ষেত্রে ত্রাণ নিয়ে যাতায়াত এবং তা বিতরণও কঠিন হয়ে উঠেছে। গাজার অনেক ফিলিস্তিনি এখন প্রতিদিন একবেলা খাবারও খেতে পান না।
রাফাহ চিড়িয়াখানার পশুচিকিৎসক সফিয়ান আবদীন বলেন, “প্রতিদিনই পশুপাখিগুলো মারা পড়ছে বা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।
“অনাহার, দুর্বলতা এবং রক্তশূন্যতা; এগুলো এখন পুরো গাজার সমস্যা। এখানে কোনো খাবার নেই।”