হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজেস বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে ‘সুযোগ দেবেন না’।
Published : 13 Feb 2025, 12:37 PM
ইসরায়েল চলতি বছরের মাঝামাঝি ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালাতে পারে বলে আভাস পেয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট বুধবার এ খবর দিয়েছে।
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের এমন প্রিএম্পটিভ বা প্রতিরোধমূলক হামলা ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পিছিয়ে যেমন দিতে পারে, তেমনি মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি এবং বিস্তৃত যুদ্ধের ঝুঁকিও সৃষ্টি করতে পারে, জো বাইডেন প্রশাসনের শেষ ও ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের শুরুর দিকে একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এমনটাই ধারণা দেওয়া হয়েছে।
তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবেদনটির সত্যতা যাচাই করে দেখতে পারেনি বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
হোয়াইট হাউজ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
ইসরায়েলের সরকার, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ, মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা এবং জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালকের কার্যালয়ও এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।
হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজেস বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে ‘সুযোগ দেবেন না’।
“যদিও তিনি ইরানের সরকারের সঙ্গে আমেরিকার দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলির শান্তিপূর্ণ সমাধানে আলোচনাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন, কিন্তু ইরান যদি চুক্তি করতে শিগগিরই আগ্রহী না হয় তাহলে তিনিও অনির্দিষ্টকালের জন্য অপেক্ষা করবেন না,” পোস্টকে এমনটাই বলেছেন তিনি।
জানুয়ারির শুরুর দিকে মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ও জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের গোয়েন্দা অধিদপ্তর ইরানে ইসরায়েলের সম্ভাব্য হামলা নিয়ে মোটামুটি বিস্তৃত গোয়েন্দা প্রতিবেদন দিয়েছে।
এতে সতর্কবার্তা দিয়ে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ইরানের ফোরডো ও নাতানজ পরমাণু স্থাপনায় হামলার চেষ্টা চালাতে পারে।
গোয়েন্দা সংস্থার কার্যক্রম সম্বন্ধে অবগত একাধিক বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, গত বছরের অক্টোবরে ইরানে বোমা হামলায় তেহরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং দেশটি পরবর্তী যে কোনো আক্রমণ মোকাবেলায় অরক্ষিত ছিল বলে বিশ্বাস ইসরায়েলের।
গাজায় ইসরায়েলের নির্মম আক্রমণকে কেন্দ্র করে গত বছর ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত যুদ্ধের ঝুঁকি সৃষ্টি করেছিল।
মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলোতে ইরানে ইসরায়েলের সম্ভাব্য দুটি হামলার আভাস দেওয়া হয়েছে, যার প্রতিটিতে যুক্তরাষ্ট্রকে আকাশপথে পুনরায় জ্বালানি ভরার সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য দিতে হবে।
সম্প্রতি ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখতে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে চান তিনি। সশস্ত্র সংঘাতের বদলে ইরানও চুক্তি করতে চায় বলেই তার বিশ্বাস।
“প্রত্যেকেই মনে করছে ইসরায়েল আমাদের সহায়তা কিংবা আমাদের অনুমোদন নিয়ে ইরানের ভেতরে বোমা মেরে তছনছ করে দেবে। এটা না হোক তাই চাচ্ছি আমি,” সোমবার প্রচারিত সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে এমনটাই বলতে শোনা গেছে।
বারাক ওবামা আমলের যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিনিময়ে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত রাখার চুক্তিতে পৌঁছেছিল।
কিন্তু ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্ররোচনায় ট্রাম্প ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে ওই চুক্তি থেকে বের করে আনেন ও তেহরানের ওপর আগের নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনর্বহাল করেন।
এরপর থেকে ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পূর্ণোদ্যমে চালু রেখেছে, বলছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থা।
পরমাণু আলোচনা ফের শুরুর পথ বের করতে ইরান, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের জেনিভায় বৈঠকও করেছে, জানুয়ারিতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে এমনটাই বলেছিলেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি।