“আমরা চাই এমন একজন নেতা যে আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবে, শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গেও কাজ করতে পারবে এবং যুদ্ধ শেষ করতে পারবে,” বলেছেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ।
Published : 03 Mar 2025, 12:06 PM
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নীতির সঙ্গে একমত এমন শীর্ষ রিপাবলিকানরা ভলোদিমির জেলেনস্কিকে দুটি পথের মধ্যে যে কোনো একটি বেছে নিতে বলেছেন- হয় রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ নিয়ে অবস্থান বদলাতে হবে, না হয় ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হবে।
হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে জেলেনস্কির তুমুল বাকবিতণ্ডার পর রিপাবলিকানদের এমন অবস্থান জেলেনস্কির ওপর চাপ আরও তীব্রতর করছে, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এদিকে রোববার লন্ডনে এক বৈঠকে ইউরোপের নেতারা জেলেনস্কির প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। বৈঠকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার ইউরোপের প্রতিরক্ষা জোরদারে এগিয়ে আসতে অন্যদের প্রতি জোরাল আহ্বান রেখেছেন।
শুক্রবার ওভাল অফিসে ট্রাম্প ও ভ্যান্সের সঙ্গে জেলেনস্কির ওই বিবাদের কারণে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্টকে আগেভাগে হোয়াইট হাউজ ছাড়তে হয়েছে; দুই দেশের মধ্যে যে খনিজ চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল, শেষ পর্যন্ত তাও হয়নি।
সেদিনের বাকবিতণ্ডায় জেলেনস্কিকে সবচেয়ে বেশি আক্রমণ করেছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স, যা যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমা মিত্রদের স্তম্ভিত করে দিয়েছে। পাশাপাশি যুদ্ধের পরবর্তী ধাপে কী হতে যাচ্ছে, তিন বছর আগে রাশিয়ার শুরু করা যুদ্ধটি ট্রাম্প আদৌ থামাতে পারবেন কিনা, উঠছে সেসব প্রশ্নও।
শুক্রবারের বৈঠকে জেলেনস্কি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘খুনী’ ও ‘সন্ত্রাসী’ অ্যাখ্যা দিয়ে বলেন, রুশ প্রেসিডেন্টই ২০১৯ সালে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে ইউক্রেইনের ওপর হামলা চালান।
তবে ট্রাম্প মিত্রদের কাছে এসব যুক্তি খুব একটা গুরুত্ব পাচ্ছে না, তারা চাচ্ছেন- যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধ বন্ধ।
ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধের আলোচনার জন্য জেলেনস্কি আদৌ প্রস্তুত কিনা, তা নতুন মার্কিন প্রশাসনের কাছে পরিষ্কার নয়।
ট্রাম্প চাইছেন ভূখণ্ড ছাড়ের বিনিময়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর নেতৃত্বে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার মাধ্যমে মস্কো ও কিইভের মধ্যে স্থায়ী শান্তি, বলেছেন ওয়াল্টজ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট কি জেলেনস্কির পদত্যাগ দেখতে চান, এমন প্রশ্নের জবাবে এ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সিএনএনের ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ অনুষ্ঠানে বলেন, “আমরা চাই এমন একজন নেতা যে আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবে, শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গেও কাজ করতে পারবে এবং যুদ্ধ শেষ করতে পারবে।”
“যদি এটা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তার দেশে চলমান যুদ্ধ থামানোর লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত, তাহলে তা আমাদের জন্য সত্যিকারের একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে,” বলেছেন তিনি।
শুক্রবার সাংবাদিকদের সামনে জেলেনস্কি যে ধরনের বাদানুবাদ করেছেন, এরপর যুক্তরাষ্ট্র আদৌ আর তার সঙ্গে কাজ করতে পারে কিনা, এমন প্রশ্ন তুলেছেন সাউথ ক্যারোলাইনা থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান সেনেটর, ট্রাম্পের অন্যতম কট্টর সমর্থক ও ইউক্রেইন বিষয়ক উপদেষ্টা লিন্ডসে গ্রাহাম।
রোববার একই ধরনের বার্তা এসেছে কংগ্রেসের শীর্ষ রিপাবলিকান, প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসনের কাছ থেকেও।
“কিছু তো অবশ্যই বদলাতে হবে। হয় তার (জেলেনস্কি) হুঁশে ফিরতে হবে এবং কৃতজ্ঞ হয়ে আলোচনার টেবিলে ফিরে আসতে হবে, নয়তো এটি করার জন্য অন্য কাউকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিতে হবে।
“সত্যি বলতে কী, আমিও পুতিনকে পরাজিত দেখতে চাই। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ। কিন্তু এই সংঘাতের ক্ষেত্রে, আমাদের অবশ্যই এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হবে,” এনবিসির ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বলেন জনসন।
রিপাবলিকানদের অবস্থানের পুরোপুরি বিপরীত অবস্থান হচ্ছে ডেমোক্র্যাটদের। ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে যেভাবে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন, তা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তারা।
তাদেরই একজন কানেটিকাটের সেনেটর ক্রিস মারফি, তিনি হোয়াইট হাউজকে মিত্র গণতান্ত্রিক দেশগুলোর বদলে রাশিয়ার দিকে হেলতে দেখে খুবই ক্ষুব্ধ।
“যা হচ্ছে তা পুরোপুরি লজ্জাজনক। হোয়াইট হাউজ ক্রেমলিনের একটি শাখায় পরিণত হয়েছে। ওই বৈঠকের পেছনে অজুহাত ছিল পুতিনের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ইতিহাস নতুন করে লেখা, যেন ইউক্রেইনকে পুতিনের হাতে তুলে দেওয়া যায়। এটা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সর্বনাশা,” সিএনএনের ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ অনুষ্ঠানে বলেছেন তিনি।
হোয়াইট হাউজের বৈঠকটি ‘অ্যামবুশ’ ছিল এমন ভাষ্যকে ‘পুরোপুরি মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ওয়াল্টজ। বলেছেন, অবস্থান বদলাবে কি না সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়ভার মার্কিন প্রশাসন ইউক্রেইনীয়দের ওপরই ছেড়ে দিয়েছে।
“আমরা ফের তাদের সঙ্গে বসবো, যখন তারা শান্তির জন্য প্রস্তুত হবে,” এবিসির ‘দিজ উইক’ অনুষ্ঠানে এমনটাই বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক রুবিও।
শুক্রবারের ওই বৈঠকের পর তার সঙ্গে জেলেনস্কি বা ইউক্রেইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহার কোনো কথা হয়নি বলেও তিনি জানান।
“কেউই এখানে দাবি করছে না যে ভ্লাদিমির পুতিন এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেতে যাচ্ছেন। কিন্তু আপনি যদি তাদের গালাগাল করেন, শত্রুভাবাপন্ন হন, তাহলে তাদেরকে আলোচনার টেবিলে আনতে পারবেন না,” মস্কোর সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন রুবিও।