ইউক্রেইনের বাঁধ: স্থানচ্যুত মাইন নিয়ে উদ্বেগ, খেরসন ছাড়ছেন বাসিন্দারা

নিপ্রো নদীতে পানি বাড়তে থাকায় খেরসন অঞ্চলের বিভিন্ন অংশ থেকে কয়েক হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

নিউজ ডেস্ক
Published : 8 June 2023, 03:41 AM
Updated : 8 June 2023, 03:41 AM

ইউক্রেইনের দক্ষিণাঞ্চলে বড় একটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর ভেসে যাওয়া স্থলমাইনগুলোর অবস্থান শনাক্ত করার ক্ষেত্রে বিপর্যয়কর প্রভাব পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে রেড ক্রস।

নিপ্রো নদীতে পানি বাড়তে থাকায় খেরসন অঞ্চলের বিভিন্ন অংশ থেকে কয়েক হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই নদীটিই ওই অঞ্চলে রাশিয়া ও ইউক্রেইনের নিয়ন্ত্রিত অংশকে বিভক্ত করেছে।

এই কাখোভকা বাঁধে নাশকতা চালানো জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেইন পরস্পরকে দায়ী করেছে।  

ওই অঞ্চলে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা ওলেশকিতে বন্যার কারণে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।  

ওলেশকির নির্বাসিত কিইভপন্থি মেয়র ইয়েভেন রিশ্চুক গণমাধ্যম সাসপিলনাকে বলেছেন, তার ধারণা মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি হবে।

তবে রাশিয়া ও ইউক্রেইনের কর্মকর্তারা যেসব দাবি করেছেন বিবিসি তা স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করতে পারেনি বলে জানিয়েছে।

রেড ক্রসের অস্ত্র দূষণ ইউনিটের প্রধান এরিক টলেফসেন সতর্ক করে বলেছেন, স্থানচ্যুত মাইনগুলো শুধু খেরসনের বাসিন্দাদের জন্যই না, যারা তাদের সাহায্য করার জন্য আসবে তাদের জন্যও গুরুতর উদ্বেগ তৈরি করেছে। 

আন্তর্জাতিক এক বার্তা সংস্থাকে তিনি বলেছেন, “বিপদগুলো কোথায় আছে আমরা তা জানতাম, কিন্তু এখন জানি না। আমরা যা জানি তা হচ্ছে, সেগুলো স্রোতবরাবর নিচের দিকে কোথাও আছে।”

ইউক্রেইনের সামরিক বাহিনীর দক্ষিণ কমান্ডের মুখপাত্র নাতালিয়া হুমেনিউক ইউক্রেইনীয় টেলিভিশনকে বলেছেন, “(রাশিয়ার নিয়ন্ত্রিত এলাকায়) বহু স্থলমাইন স্থানচ্যুত হয়েছে, এগুলো ভাসমান মাইনে পরিণিত হয়েছে। এগুলো বড় ধরনের বিপদ।”

নিজের কথা ব্যাখ্যা করে তিনি জানান, এসব মাইন পানিতে ভাসমান আবর্জনা বা অন্য কিছুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে বিস্ফোরিত হতে পারে।

রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা নোভা কাখোভকায় নিপ্রো নদীর ওপরের এই বাঁধটি মঙ্গলবার ভোররাতে ধসিয়ে দেওয়া হয়। এতে বাঁধের উজানে থাকা কাখোভকা জলাধারের বিপুল পরিমাণ পানি দ্রুত গতিতে নদীটির নিম্নপ্রবাহ ধরে নামতে থাকায় আশপাশে বন্যা দেখা দেয়। পানি দ্রুত বাড়তে থাকায় হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়।

ইউক্রেইনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নদীর তীরবর্তী ৩০টি শহর ও গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে এবং অঞ্চলটির ইউক্রেইনের নিয়ন্ত্রণে থাকা রাজধানী খেরসনে প্রায় ২০০০ বাড়ি ডুবে গেছে। বন্যাকবলিত শহর ও গ্রামগুলোর মধ্যে ২০টি ইউক্রেইনের এবং ১০টি রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে আছে।

বিবিসি জানিয়েছে, এক নারী নিপ্রো নদীর রাশিয়া অধিকৃত পূর্বপাশ থেকে উদ্ধারকারী নৌকাযোগে খেরসনে এসে হাজির হন, মঙ্গলবার সকালে বাঁধ ধসের কথা জানার পর পরিস্থিতি কত দ্রুত নাজুক হয়ে উঠে তার বর্ণনা দেন তিনি।

কাতেরিনা ক্রুপিচ (৪০) নামের এই নারী বলেন, “আমরা আমাদের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিতে পেরেছিলাম, কিন্তু পানি বাড়ছিল। ওই সময় আমি বাজরা রান্না করছিলাম আর আমার পায়ের পাতা ইতোমধ্যে পানির নিচে ছিল। বন্যা খুব দ্রুত শুরু হয়ে যায়।

“আমরা যেন একদিনে পুরো জীবন যাপন করে ফেললাম।”

খেরসনে বুধবার রাতেই বাড়তে থাকা পানির স্তর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছার কথা ছিল। কর্মকর্তাদের শঙ্কা, কাখোভকা জলাধারের সব পানি কৃষ্ণ সাগরে গিয়ে পড়তে থাকায় পানির অভাবে কৃষিখাতে বিপর্যয়কর প্রভাব পড়বে।

আরও পড়ুন:

Also Read: নোভা কাখোভকা বাঁধ ধ্বংসে লাভ হল কার?

Also Read: ইউক্রেইনে বাঁধ ধসের আন্তর্জাতিক তদন্ত চায় তুরস্ক