ভূমিকম্পে নিহতদের অন্ত্যষ্ট্যিক্রিয়ায় পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে লাশ। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়াদের গৃহস্থালি জিনিসপত্র দিয়ে খুঁড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
Published : 06 Nov 2023, 11:03 PM
নেপালের পশ্চিমাঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে গেছে বাড়িঘর। গৃহহীন হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। বাইরে ঠান্ডার মধ্যে তারা রাত কাটাচ্ছে। ভূমিকম্পে নিহতদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে মৃতদেহ। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে থাকাদের থালা, বাটি ও গৃহস্থালি জিনিসপত্র দিয়ে খুঁড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
গত শুক্রবার রাতে নেপালে ছয় দশমিক চার মাত্রার ভূমিকম্পে দেড় শতাধিক জন নিহত এবং তিন শতাধিক জন আহত হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে জানিয়েছিল, ভূমিকম্পটি ছিল পাঁচ দশমিক ছয় মাত্রার।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় জাজারকোট ও পশ্চিম রুকুম জেলা। ভূমিকম্পে স্বজন হারানো একজন বিবিসি-কে বলেন, ‘আমরা বিপন্ন অবস্থায় বেঁচে আছি। আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। কোনও খাবার নেই, আশ্রয় নেই। আমাদের সাহায্য প্রয়োজন।”
জাজারকোটের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোয় নিহত মানুষদের গণসৎকার করা হচ্ছে। জাজারকোটের চিউরি গ্রামের থুলি ভেরি নদীর পাড়ে দেখা গেছে শোকার্ত মানুষের হাহাকার।
সেখানে নারী ও শিশুসহ ১৩ জনের শেষকৃত্যে সমবেত হয় শোকার্তরা। এর মধ্যে কেউ কেউ শোকে কাতর হয়ে মূর্ছা যান। তাদেরকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিউড়ি গ্রামে এদের লাশ একসঙ্গে দাহ করা হয়। ছয়টি মৃতদেহ একটি চিতার ওপর এবং বাকিগুলো আলাদা চিতায় রাখা হয়। শুক্রবার রাতে তারা সবাই প্রাণ হারান।
চিউড়ির বাসিন্দাদের মধ্যে হিরে কামি তার স্ত্রী এবং দুই সন্তান মারা গেছে। তার প্রতিবেশী এবং স্বজনদের ধারণা, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া গেলে হিরে কামিকে হয়ত বাঁচানো যেত। হিরে কামির লাশও পোড়ানো হয়।
তার আত্মীয় হাট্টিরাম মাহার বলেন, তিনি ধ্বংসস্তুপ থেকে হিরে কামিকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। তিনি জানান, ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকাদের উদ্ধার করতে গ্রামবাসীরা থালা, বাটি ও গৃহস্থালির জিনিসপত্র - যে যা পেয়েছে তা দিয়েই ধ্বংসাবশেষ খুঁড়ে তাদের বের করে আনার চেষ্টা করেছে।
হিরে কামির শবদাহতে সামিল হন তার বন্ধু হরি বাহাদুর চুনারা। সেই ভয়ানক রাতের কথা স্মরণ করে বিবিসি-কে তিনি বলেন, "মাঝরাতে পুরো গ্রামে হাহাকার আর কান্নার রোল ছড়িয়ে পড়ে। আমরা কেউই ঠিকমত চিন্তা করতে পারছিলাম না।"
সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। অবশেষে শেষকৃত্যের চিতা নিভে যেতে শুরু করার পর শোকাহত মানুষেরা রাস্তা পার হয়ে পাহাড়ি পথ ধরে গ্রামের পথ ধরে- যার পুরোটাই এখন ধ্বংসস্তূপ।
বেঁচে ফেরা মানুষেরা এ মুহূর্তে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। সাহায্যের অপেক্ষায় আছে তারা। হরি বাহাদুর চুনারা বলেন, “আশ্রয়ের কোনও জায়গা নেই।”
ওদিকে হট্টিরাম মাহার ঠান্ডায় খোলা আকাশের নিচে রাত কাটানো শিশুদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। যারা বেঁচে আছে তাদেরকে কীভাবে রক্ষা করা যায় সেটিই এখন সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়।