ঘূর্ণিঝড় মোখায় মিয়ানমারে মৃত্যু বেড়ে ২০২

রাখাইনের প্রতিবেশী চীন রাজ্যে মোখার আঘাতে এক হাজার দুইশরও বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2023, 05:00 AM
Updated : 18 May 2023, 05:00 AM

মিয়ানমারে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০২ জনে দাঁড়িয়েছে বলে খবর দেশটির গণমাধ্যমের।

মোখার আঘাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পশ্চিম উপকূলীয় রাজ্য রাখাইনের বাসিন্দারা দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির মধ্যে তাদের ভেঙে পড়া ঘরবাড়ি মেরামত করার জন্য সংগ্রাম করছেন। পাশাপাশি ত্রাণ সহায়তার জন্যও অপেক্ষা করছেন তারা। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার তিন দিন পরও ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা বা আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর কাছ থেকে প্রত্যাশিত ত্রাণ পৌঁছায়নি তাদের কাছে।

আগে থেকেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ক্ষতবিক্ষত রাজ্যটি ১৬ বছরের মধ্যে হওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়ে আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে ইরাবতী সংবাদপত্র জানিয়েছে।

রোববার বিকালে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৯৫ কিলোমিটার বাতাসের বেগ নিয়ে রাখাইনে আঘাত হানে মোখা, এখানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পর ঝড়টি প্রতিবেশী চীন রাজ্য এবং সাগাইঙ্গ ও মাগউই অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যায়।  

রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তুয়ের প্রায় ৯০ শতাংশ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। ঝড়ে শহরটির বেশিরভাগ ঘরবাড়ির ছাদ উড়ে যায় এবং এটি জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়।  

সোমবার মিয়ানমারের জান্তা সরকার রাখাইনের ১৭টি ছোট শহরকে দুর্যোগ কবলিত এলাকা বলে ঘোষণা করেছে।

এই এলাকাগুলোর বাসিন্দারা জানিয়েছেন, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী গোষ্ঠীগুলো ঝড় সৃষ্ট আবর্জনা পরিষ্কার করেছে এবং স্থানীয় দাতব্য সংস্থাগুলো জরুরি ত্রাণ বিতরণ করেছে।

তারা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর তিন দিন পার হলেও আন্তর্জাতিক সংস্থা অথবা সামরিক জান্তার কাছ থেকে কোনো সহায়তা পাননি তারা।  

ম্রাউক-ইউ শহরের এক স্বেচ্ছাসেবক জানান, ম্রাউক-ইউ শহরের নিকটবর্তী গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের তাদের ঘরবাড়ি মেরামত করার সামর্থ্য নেই আর তারা শুভাকাঙ্খীদের সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছে।

মোখায় ম্রাউক-ইউ শহর ও আশপাশের গ্রামগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, প্রায় ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে।

“শহরে বা গ্রামগুলোতে, কোথাও কোনো উদ্ধারকারী দল আসেনি,” ইরাবতীকে বলেন ম্রাউক-ইউয়ের ওই স্বেচ্ছাসেবক।

এখানকার বাসিন্দারা প্রধান যে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন তা হল পণ্যের অতিরিক্ত দাম। টিন ও চালের কাঠামো বানানোর লোহার অ্যাঙ্গেলের দাম পাঁচগুণ বেড়ে যাওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা।

পোন্নাগিউন তরুণ সংস্থার এক মুখপাত্র বলেন, “পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, যারা গরীব তারা এভাবেই থাকতে বাধ্য হয়।”  

তিনি জানান, দমকল কর্মীরা ও কিছু পুলিশ শহরের আবর্জনা পরিষ্কার করার কাজে সাহায্য করলেও স্থানীয় বাসিন্দারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্থানীয় দাতব্য সংস্থাগুলোর ওপরই নির্ভর করছে।

“পোন্নাগিউনের গ্রামগুলোর জন্য জরুরিভিত্তিতে খাবার পানি দরকার, কারণ জলোচ্ছ্বাসের লবণাক্ত পানিতে সব কূপ নষ্ট হয়ে গেছে,” বলেন তিনি। 

রাখাইনের প্রতিবেশী চীন রাজ্যে মোখার আঘাতে এক হাজার দুইশরও বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মঙ্গলবার জাতিসংঘ জানিয়েছে।

একইদিন মিয়ানমারের বেসামরিক ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) জানিয়েছে, রাজ্যটিতে ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১১৩৬টি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে।  

আরও খবর:

Also Read: ঘূর্ণিঝড় মোখায় মিয়ানমারে মৃত্যু বেড়ে ৮১