যে কর্মীদের চাকরি গেল তারা সংস্থাটিতে দুই বছর বা তার চেয়েও কম সময় কাজ করেছেন, জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
Published : 07 Mar 2025, 10:47 AM
মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ তাদের নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত অনেককেই চলতি সপ্তাহে চাকরিচ্যুত করেছে বলে জানিয়েছেন বিষয়টি সম্বন্ধে অবগত তিন ব্যক্তি।
তাদের এই পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে বলে সংস্থাটির সাবেক, বর্তমান একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা সতর্কও করেছেন।
দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীবহর ছোট করে আনার যে উদ্যোগ নিয়েছেন তারই অংশ হিসেবে নতুন সিআইএ পরিচালক জন র্যাটক্লিফ অজ্ঞাত সংখ্যক নতুন চাকরিপ্রাপ্তকে বরখাস্ত করলেন। ধনকুবের ইলন মাস্ক ও তার ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডিওজিই) ট্রাম্পের হয়ে ফেডারেল কর্মীবহর কমিয়ে আনার কাজটি তদারকি করছে।
সিআইএ-র এবার যে শিক্ষানবিস কর্মীদের বরখাস্ত করেছে তারা সবাই বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল, দক্ষতা বিবেচনায় এদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে বিষয়টি সম্বন্ধে অবগত এক ব্যক্তি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন।
ঠিক কতজনের চাকরি গেছে তা বলতে রাজি না হলেও তিনি বলেছেন, “বেশ কিছু লোকের গেছে।”
“সিআইএ-তে আমরা দুই বছর পর্যন্ত কাজ করেছে এমন কর্মীদের কাজ পর্যালোচনা করছি। কারও কারও ক্ষেত্রে এই পর্যালোচনার ফল হয়েছে চাকরিচ্যুতি। আমাদের কর্মকর্তারা দ্রুত-পরিবর্তনশীল ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করার অনন্য চাপের মধ্যে থাকেন। এটা সবার জন্য নয়,” বিবৃতিতে বলেছেন সিআইএ’র এক মুখপাত্র।
যে নবিশ কর্মীদের চাকরি গেল তারা সংস্থাটিতে দুই বছর বা তার চেয়েও কম সময় কাজ করেছেন, জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
সিআইএ-তে চাকরিচ্যুতির এ খবর প্রথম দেয় নিউ ইয়র্ক টাইমস।
মার্কিন এ গোয়েন্দা সংস্থায় চাকরিচ্যুতি শুরু হয়েছে এ বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উভয় কক্ষের গোয়েন্দা সংক্রান্ত কমিটির সদস্যদের আগেভাগে জানানো হয়নি, বলেছেন বিষয়টি সম্বন্ধে অবগত এক ব্যক্তি। তবে এই অবহিতকরণ বাধ্যতামূলক নয়।
কমিটিগুলোর সদস্যরা সামনের দিনগুলোতে এই চাকরিচ্যুতির ব্যাপারে আরও তথ্য চাইতে পারেন, বলেছেন নাম প্রকাশে রাজি না হওয়া ওই ব্যক্তি।
দিনকয়েক আগে ভার্জিনিয়া ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্টের এক ফেডারেল বিচারক বাইডেন প্রশাসনের আমলে বৈচিত্র্য অন্তর্ভুক্তকরণ উদ্যোগের আওতায় সাময়িকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কিছু কর্মীকে নিয়ে এক আদেশ দেওয়ার পর সিআইএ তার শিক্ষানবীস কর্মীদের বরখাস্তের কাজ শুরু করে।
ফেডারেল বিচারকের ওই আদেশ সিআইএ-কে তার ইচ্ছানুযায়ী কর্মী বরখাস্তের সুযোগ করে দেয়।
বিপুল সংখ্যক সিআইএ কর্মীর চাকরিচ্যুতি সংস্থাটির গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও মূল্যায়নের কাজে বেশ বড়সড় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সাবেক, বর্তমান একাধিক কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলা এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, এভাবে চাকরিচ্যুতি চলতে থাকলে যে ঘাটতি তৈরি হবে তা পূরণে কয়েক বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। কেননা, নতুন সিআইএ কর্মকর্তা বাছাই, তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণে ব্যাপক সময় ও প্রচেষ্টা লাগে।
“আমাদের মিশন সফলভাবে শেষ করার জন্য দরকার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ধারাবাহিক প্রবাহ। এ ধরনের শূন্যতা সৃষ্টি হলে, তা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কাজ পরিচালনার সক্ষমতায় দীর্ঘমেয়াদী ও অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে,” বলেছেন এ কর্মকর্তা।
সিআইএর গোপন পরিষেবার সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ডেনিয়েল হফম্যান জানান, তিনি সংস্থায় চাকরিচ্যুতির খবর শুনেছেন, তবে বিস্তারিত জানেন না।
বিপুল সংখ্যক কর্মীকে বরখাস্তের খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, নিয়োগ ও প্রশিক্ষণে কয়েক বছর লেগে যাওয়া গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের একটি প্রজন্মকে বাদ দেওয়া হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
“সাবেক ক্লিনটন প্রশাসন যেভাবে কর্মী কমিয়েছিল, তাতে গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল, এরপর আমরা পেয়েছিলাম ৯/১১ হামলা, সেসময় আমরা পুরোপুরি অপ্রস্তুত ছিলাম। এখানে সাশ্রয় কতটুকু হচ্ছে, সে তুলনায় পরবর্তী প্রজন্মের নিয়োগপ্রাপ্তদের ছাঁটাই করে আমরা কী নানামুখী ঝুঁকির মধ্যে পড়তে যাচ্ছি না?” বলেছেন তিনি।