হামাস যদি বাকি সব জিম্মিকে মুক্তি না দেয় তাহলে ভূখণ্ডটির অংশবিশেষ চিরতরে দখলে নেওয়ারও হুমকি দিয়েছে তারা।
Published : 22 Mar 2025, 10:44 AM
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী তাদের সেনাবাহিনীকে ‘গাজার অতিরিক্ত কিছু এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিতে’ নির্দেশ দিয়েছেন।
হামাস যদি তাদের কাছে থাকা বাকি সব জিম্মিকে মুক্তি না দেয় তাহলে ভূখণ্ডটির অংশবিশেষ স্থায়ীভাবে দখল করে নেওয়ারও হুমকি দিয়েছেন তিনি।
‘জীবিত ও মৃত উভয়’ জিম্মিরা ফিরে না আসা পর্যন্ত সামরিক বাহিনী গাজায় তাদের স্থল অভিযান ‘আরও জোরদারভাবে’ চালিয়ে যাবে, শুক্রবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এ কথা বলেছেন বলে বিবিসি জানিয়েছে।
গাজায় এখনও বন্দি ৫৯ জিম্মির মধ্যে ২৪ জন জীবিত আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কিন্তু যুদ্ধবিরতি দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনায় এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় তাদের ভাগ্য সুতায় ঝুলছে।
দিনকয়েক আগে ইসরায়েল গাজায় বোমা হামলা ও স্থল অভিযান শুরু করে ফের দিনে শত শত মানুষ মারা শুরু করলে জানুয়ারির মাঝামাঝি শুরু হওয়া ওই ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির অবসান ঘটে।
ভূখণ্ডটির এখনকার পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ, গুরুতর উদ্বেগজনক’ অ্যাখ্যা দিয়ে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিইএ-র স্যাম রোজ বলেছেন, গাজাজুড়ে এখন অত্যন্ত মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক সব ঘটনা ঘটছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এর জন্য হামাসকে দায়ী করে বলেছে, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠনটির যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় এমন পরিণতি দেখছে গাজাবাসী।
এদিকে হামাস বলেছে, তারা গুরুত্ব সহকারে, সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়েই মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
পরে শুক্রবার কাটজ তার বিবৃতিতে বলেন, “হামাস যতবার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবে, ততই তারা আরও ভূখণ্ড ইসরায়েলের কাছে হারাবে।”
“আকাশ, সমুদ্র ও স্থলপথে হামলা এবং স্থল অভিযানের আওতা বাড়ানোর মাধ্যমে আমরা তীব্র লড়াইয়ে নামবো, যতক্ষণ পর্যন্ত না জিম্মিরা মুক্তি পায় ও হামাস পরাজিত হয়,” বলেছেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
তিনি জানান, গাজার বাসিন্দাদের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের স্বেচ্ছায় স্থানান্তর পরিকল্পনাও ইসরায়েল বাস্তবায়ন করবে।
ট্রাম্পের চাওয়া, যুক্তরাষ্ট্রই গাজা ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেটি পুনর্গঠন করুক। এর আগে ওই ভূখণ্ডের ২০ লাখ ফিলিস্তিনিকে স্থায়ীভাবে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ারও পরিকল্পনা আছে তার।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) ও হামাস এ পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, গাজা ‘বিক্রির জন্য নয়’।
দখলকৃত এলাকা থেকে বেসামরিকদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ আন্তর্জাতিক আইনে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং এ ধরনের পদক্ষেপ ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞের সমতুল্য’।
সোয়া এক বছরের যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল ও হামাস। ওই যুদ্ধবিরতি তিন ধাপে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও প্রথম ধাপের পরবর্তী কার্যক্রম নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মতের মিল হয়নি।
মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়ার পরপরই আগের পরিকল্পনা মুখ থুবড়ে পড়ে।
হামাস নতুন প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে বলে, চুক্তির শর্ত এড়াতে ইসরায়েলের নির্লজ্জ চেষ্টার বহিঃপ্রকাশ এটি।
শুক্রবার জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতও চলমান যুদ্ধ ও গাজায় নতুন সংঘাতের পেছনে হামাসকে দায়ী করেছেন।
“হামাস যদি সমঝোতা প্রস্তাবটি গ্রহণ করতো, তাহলে সব মৃত্যুই এড়ানো যেত,” নিরাপত্তা পরিষদকে এমনটাই বলেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডরোথি শিয়া।