ইউক্রেইনের খারকিভ অঞ্চলের প্রধান ঘাঁটি ইজিয়ুম রুশ বাহিনীর হাতছাড়া হওয়ায় ক্ষেপেছে রাশিয়ার জাতীয়তাবাদীরা। ইউক্রেইনের যুদ্ধে চূড়ান্ত জয় নিশ্চিত করতে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
মার্চে ইউক্রেইনের রাজধানী কিইভ থেকে পিছু হটতে বাধ্য হওয়ার পর শনিবার ইজিয়ুমেই সবচেয়ে বড় পরাজয়ের শিকার হয় রুশ বাহিনী।
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর ৮৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে পুতিন যখন মস্কো পার্কে ইউরোপের বৃহত্তম নাগরদোলা উদ্বোধন করছেন, রেড স্কয়ারের আকাশ আতশবাজির আলোয় রঙিন হয়ে উঠছে তখন ইউক্রেইনে রুশ বাহিনী নিজেদের দখলে থাকা একটার পর একটা শহর ছেড়ে আসতে বাধ্য হচ্ছিল।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, টেলিগ্রামে পোস্ট করা ১১ মিনিট দীর্ঘ এক অডিও বার্তায় পুতিনের মিত্র চেচেন নেতা রমজান কাদিরভ ইজিয়ুম হারানোর কথা প্রত্যাখ্যান করেছেন। ইউক্রেইনে রুশ বাহিনীর পক্ষ হয়ে কাদিরভের বাহিনী যুদ্ধের একেবারে সম্মুখের সারিতে আছে।
তবে অভিযান পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছে না বলে স্বীকার করেছেন তিনি।
কাদিরভ বলেছেন, “বিশেষ সামরিক অভিযান পরিচালনায় আজ অথবা কাল যদি পরিবর্তন করা না হয়, আমি দেশের নেতৃবৃন্দের কাছে গিয়ে মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে বাধ্য হব।”
ইজিয়ুমের পরাজয় নিয়ে মস্কো প্রায় পুরোপুরি চুপ করে আছে। ইউক্রেইনের উত্তরপূর্বাঞ্চলে কী ঘটে চলেছে তা নিয়ে কোনো ব্যাখ্যাই দেয়নি তারা। এতে ইউক্রেইনে অভিযান চালানোর পক্ষে থাকা রুশ ধারাভাষ্যকার ও জাতীয়তাবাদীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন।
রোববার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ওই অঞ্চলে রাশিয়ার বাহিনীগুলো ইউক্রেইনীয় অবস্থানে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ও কামান থেকে গোলাবর্ষণ করে এবং আকাশপথে সেনা পাঠিয়ে হামলা চালিয়েছে।
কিন্তু রুশ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক প্রেসিডেন্ট পুতিন বা দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্জেই শোইগু রোববার দুপুর পর্যন্ত ওই পরাজয় নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি।
রাশিয়ার যুদ্ধপন্থি বিশিষ্ট এক সামরিক ব্লাগার যিনি টেলিগ্রামে রাইবার নামে পোস্ট করেন, লিখেছেন, “এখন চুপ করে থাকার ও কিছু না বলার সময় নয়, এতে আরও গুরুতর ক্ষতি হচ্ছে।”
২০১৪ সালে ইউক্রেইনের দনবাস অঞ্চলে লড়াই শুরু করতে সাহায্য করা সাবেক এফএসবি কর্মকর্তা ও উগ্র জাতীয়তাবাদী ইগর গরকিন খারকিভে রুশ বাহিনীর বিপর্যয়কে ১৯০৫ সালের রুশ-জাপান যুদ্ধের বিপর্যয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী শোইগুকে ‘কাডবোর্ডের মার্শাল’ বলে ব্যঙ্গ করেছেন তিনি। সরকার যুদ্ধ প্রচেষ্টার সঙ্গে পুরো দেশকে যুক্ত না করলে রাশিয়া ইউক্রেইনের যুদ্ধে হারতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
দেশটির আরও বেশ কয়েকজন জাতীয়তাবাদী ভাষ্যকার ইউক্রেইন যুদ্ধপরিস্থিতি নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ ঝেড়েছেন।
এসব বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সাড়া দেয়নি, জানিয়েছে রয়টার্স।
ক্রেমলিনপন্থি কিছু যুদ্ধ সাংবাদিক এবং টেলিগ্রামে বিরাট সংখ্যক ফলোয়ার আছে এমন কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তা খারকিভের পরাজয়কে ছোট করে দেখার জন্য দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে অভিযুক্ত করেছে।
আরও পড়ুন: