প্রাথমিক তদন্ত ফলাফলে দেখা গেছে, বিমানটি রাশিয়ার প্যান্টসির-এস বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে।
Published : 27 Dec 2024, 11:48 AM
কাজাখস্তানে বিধ্বস্ত হওয়া আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটি ভূপাতিত করেছে রাশিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
এমন তথ্যই প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছে আজারবাজাইনের তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চারটি সূত্র।
তবে অনুমানের ওপর নির্ভর করে করে দোষ চাপানোর ব্যাপারে সতর্ক করেছে মস্কো।
এর আগে, রয়টার্সের খবরে বলা হয়, এমব্রায়ার-১৯০ নামের যাত্রীবাহী বিমানটি আজারবাইজানের রাজধানী বাকু থেকে ৬৯ জন আরোহী নিয়ে চেচনিয়ার গ্রজনিতে যাচ্ছিল।
বুধবার আকতাউ শহরের কাছে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ৩৮ জন নিহত হয়।
তবে রাশিয়ার বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের দাবি, বিমানটি সম্ভবত পাখির আঘাতের কারণে জরুরি পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল।
ফ্লাইট জে২-৮২৪৩ বাকু থেকে চেচনিয়ার রাজধানী গ্রজনিতে যাচ্ছিল। কিন্তু কাজাখস্তানের আকতাউ বিমানবন্দরের তিন কিলোমিটার দূরে সেটি জরুরি অবতরণের চেষ্টা করে। পরে কাস্পিয়ান সাগরের অপর প্রান্তে বিধ্বস্ত হয় উড়োজাহাজটি।
কিন্তু উড়োজাহাজটি কেন সাগর পার হয়ে বিপরীত দিকে চলে গিয়েছিল সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
দুর্ঘটনার বিষয়ে আজারবাইজানের তদন্তের সঙ্গে পরিচিত একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্ত ফলাফলে দেখা গেছে, বিমানটি রাশিয়ার প্যান্টসির-এস বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, “এখনও পর্যন্ত এই ঘটনার দায় কেউ স্বীকার করেনি। তবে নিশ্চিত তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাকু আশা করছে, আজারবাইজানের বিমান ভূপাতিত করার দায় স্বীকার করবে রাশিয়া।”
অন্য তিনটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, আজেরি তদন্তও একই প্রাথমিক উপসংহারে এসেছে। এদিকে, রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
অন্যদিকে কানাডা বলেছে, রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা বিমানটিতে আঘাত হানতে পারে এমন খবরে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
রুশ বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী বিমানটিকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে এমন সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে কাজাখ পরিবহন প্রসিকিউটর বলেন, তদন্ত থেকে এখনও নিশ্চিত কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি।
রুশ বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী বিমানটিকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনের আগে ক্রেমলিনকে প্রশ্ন করা হলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
রাশিয়ার হুঁশিয়ারি
আজারবাইজান সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণে থাকা বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেল বৃহস্পতিবার বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাৎকার সম্প্রচার শুরু করেছে। তারা রাশিয়ার দোষী হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে খোলাখুলিভাবে কথা বলেছেন।
আনিউজ চ্যানেল জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে এই সিদ্ধান্তে আসা গেছে যে, ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই বিধ্বস্ত হয়েছে উড়োজাহাজটি।
এই প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে বাকুর চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় বিবিসিকে জানিয়েছে, সম্ভাব্য সব পরিস্থিতি বিবেচনা করেই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তকারীরা নিশ্চিত কোনও ফলাফলের আগেই যাতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বিব্রতকর পরিস্থিতে না পড়তে হয় সেদিকেও খেয়াল রাখছেন।
যদি না রাশিয়া প্রকাশ্যে বিমানটি ভূপাতিত করার কথা স্বীকার করে, তা না হলে এই মুহূর্তে আজারবাইজান সরকারের পক্ষে এই ঘটনার জন্য সরাসরি রাশিয়াকে দোষারোপ করা খুব কঠিন।
বিবিসি লিখেছে, দেখে মনে হচ্ছে আজারবাইজান এবং কাজাখ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে সম্ভবত ইতিমধ্যে এর পক্ষে প্রমাণ রয়েছে, তবে তারা প্রথমে রাশিয়ার ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করছে।
বেঁচে যাওয়া এক যাত্রী রুশ টেলিভিশনকে বলেছেন, তার ধারণা পাইলট দু'বার ঘন কুয়াশার মধ্যে অবতরণের চেষ্টা করেছিলেন। তৃতীয়বার 'কিছু একটা বিস্ফোরিত হয়’।
রিস্ক অ্যাডভাইজরি কোম্পানি সিবিলিনের জাস্টিন ক্রাম্প বলেন, বিমানের ভেতরে ও বাইরে ক্ষয়ক্ষতির ধরন দেখে মনে হচ্ছে রুশ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার জন্য দায়ী হয়ে থাকতে পারে। বিবিসি রেডিও ৪-কে তিনি বলেন, “আপনি যদি শার্পনেলের প্যাটার্ন দেখেন তাহলে বুঝবেন এটি অনেকটা বিমান ক্ষেপণাস্ত্রের বিস্ফোরণের মতো।“