এতে গবেষকরা বিভিন্ন জৈব ইলেক্ট্রোলাইট প্রতিস্থাপনে পানি ব্যবহার করেছেন, যা ‘ওয়াটার ব্যাটারি’তে থাকা বিদ্যুতের ধনাত্মক ও ঋণাত্মক প্রান্তের মধ্যে বৈদ্যুতিক প্রবাহ ঘটাতে সাহায্য করে।
Published : 27 Feb 2024, 02:17 PM
প্রচলিত বৈদ্যুতিক শক্তির সম্ভাব্য বিপদ কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে নতুন আবিষ্কৃত ‘ওয়াটার ব্যাটারি’, এমনই দাবি বিজ্ঞানীদের।
বর্তমানে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী ও নির্ভরযোগ্য হওয়ায় বৈদ্যুতিক গাড়ি থেকে শুরু করে মোবাইল ফোন সবকিছুতেই এর ব্যবহার দেখা যায়, যা গোটা বিশ্বকে রীতিমত বদলে দিয়েছে। তবে এর ভেতরে থাকা উপাদানের কারণে এই ধরনের ব্যাটারিগুলোতে প্রায়ই আগুন ধরে যেতে পারে বা সেগুলো বিস্ফোরিত হতে পারে।
আর এই বিপদের সামাধান হিসাবে সম্প্রতি গবেষকরা ‘জলীয় ধাতুর আয়ন’ দিয়ে ব্যাটারি তৈরি করেছেন, যাকে ডাকা হচ্ছে ওয়াটার ব্যাটারি নামে’।
এতে বিভিন্ন জৈব ইলেক্ট্রোলাইট প্রতিস্থাপনে পানি ব্যবহৃত হচ্ছে, যা ‘ওয়াটার ব্যাটারি’তে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক প্রান্তের মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহে সাহায্য করে।
এই পদ্ধতিতে তৈরি ব্যাটারি নিরাপদ বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ইন্ডিপেনডেন্ট। এর মানে দাঁড়ায়, ব্যাটারির আয়ু শেষ হয়ে গেলেও সেগুলো পুনঃব্যবহার করা যাবে।
এই ‘ওয়াটার ব্যাটারি’কে এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যাতে এর উৎপাদন প্রক্রিয়া সহজ হবে– এমন দাবি করেছেন নির্মাতারা।
“আমরা এইসব ব্যাটারি তৈরিতে ম্যাগনেসিয়াম ও জিঙ্কের মতো উপাদান ব্যবহার করেছি, যা প্রকৃতিতে প্রচুর পরিমাণে আছে ও সহজেই পাওয়া যায়। আর অন্যান্য ধরনের ব্যাটারিতে ব্যবহৃত বিকল্পগুলোর তুলনায় এগুলো কম ক্ষতিকর। এটি উৎপাদন খরচ কমানোর পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর ঝুঁকিও কমায়,” বলেছেন ‘রয়াল মেলবোর্ন ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’র অধ্যাপক তিয়ানই মা।
নতুন এ গবেষণায় ব্যাটারিগুলোকে বাণিজ্যিক লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দীর্ঘস্থায়ী করে তোলার সুযোগ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা, যা প্রচলিত প্রযুক্তির সঙ্গে এর কার্যক্ষমতার ব্যবধান কমাতেও সাহায্য করবে। এর পাশাপাশি, ‘ওয়াটার ব্যাটারি’কে বাজারজাতকরণের জন্যেও প্রস্তুত করবে।
“বাজারে প্রচলিত লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির তুলনায় আমাদের ব্যাটারি উল্লেখযোগ্যভাবে দীর্ঘমেয়াদি। আর বর্তমান বিশ্বের প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যাটারিগুলো দ্রুত চার্জে সক্ষম হওয়ার পাশাপাশি সেগুলো অনেকবার ব্যবহার করা যাবে,” বলেছেন অধ্যাপক মা।
“আকর্ষণীয় ক্ষমতা ও দীর্ঘমেয়াদের সঙ্গে আমরা শুধু উন্নত ব্যাটারি প্রযুক্তিই তৈরি করিনি, বরং এতে দক্ষ ও স্থিতিশীল নবায়নযোগ্য শক্তির সংরক্ষণাগার রেখে সৌর প্যানেলের সঙ্গে আমাদের নকশাকে সফল্যের সঙ্গে মেলাতেও পেরেছি।”
এই ব্যাটারিগুলোকে বিভিন্ন বড় প্রকল্পে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন গ্রিড সংরক্ষণাগার, নবায়নযোগ্য শক্তির সঙ্গে একীভূতকরণ ও বড় অগ্নিকাণ্ডের বিপদ এড়ানো। তবে, বিভিন্ন ছোট অ্যাপ্লিকেশনেও এগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।
“আমাদের প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য ছোট পরিসরের বিদ্যুৎ সঞ্চয়ের অ্যাপ্লিকেশন, যেমন মানুষের বাড়ি ও বিনোদন ডিভাইসে বিদ্যুৎ দেওয়ার সম্ভাব্য সুযোগও বাস্তবায়ন সম্ভব,” বলেছেন অধ্যাপক মা।
বিজ্ঞানীদের এ গবেষণা ব্যাখ্যা করা হয়েছে ‘সিনার্জি অফ ডেনট্রিটেস-ইমপেডেড অ্যাটোমিক ক্লাস্টারস ডিসসোশিয়েটস অ্যান্ড সাইড-রিঅ্যাকশনস সাপপ্রেশেড ইনার্ট ইন্টারফেইস প্রোটেকশন ফর আল্ট্রাস্টেএবল জিঙ্ক অ্যানোড’ শীর্ষক নতুন গবেষণাপত্রে, যা প্রকাশ পেয়েছে ‘অ্যাডভান্সড ম্যাটিরিয়ালস’ জার্নালে।