জাকারবার্গ বলেন, বেশিরভাগ নতুন ছাঁটাইয়ের ঘোষণা আসবে পরবর্তী দুই মাসে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটি এই বছরের শেষ পর্যন্তও চলতে পারে।
Published : 15 Mar 2023, 01:47 PM
২০২৩ সালে ফের ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে সামাজিক জায়ান্ট মেটা।
মঙ্গলবারের ঘোষণার মাধ্যমে এই প্রথম কোন শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানি দ্বিতীয় দফায় গণ ছাঁটাই কার্যক্রম পরিচালনা করতে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক মন্দার ফলে এই শিল্পে লাগাম টানার বিষয়টিকে প্রতিবেদনে এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।
এই খবর চাউর হওয়ার পর মেটার শেয়ারমূল্য বেড়েছে ছয় শতাংশ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ব্যাপক প্রত্যাশিত চাকরী ছাঁটাই কার্যক্রম কোম্পানি পুনর্গঠনের অংশ, যেখানে কোম্পানিটি পাঁচ হাজার কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা থেকে সরে আসার পাশাপাশি তুলনামূলক কম গুরুত্বের প্রকল্পগুলো ও মধ্যম ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন স্তর ‘বন্ধ’ করবে।
এই ক্ষেত্রে কোম্পানিটি গেল শরতে ঘটিত প্রথম দফার গণছাঁটাই কার্যক্রমের পদ্ধতি অনুসরণ করেছে। সে সময় কোম্পানির সামগ্রিক কর্মশক্তির ১৩ শতাংশ অর্থাৎ ১১ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছিল মেটা। এর আগে, ব্যপক কর্মী নিয়োগের কারণে ২০২০ সালে কোম্পানির কর্মী সংখ্যা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করেছিল এই সামাজিক মাধ্যম জায়ান্ট।
সাম্প্রতিক মাসগুলোয় ক্রমবর্ধমান সুদের হারের কারণে অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে উদ্বেগ বেড়ে যাওয়ায় গোটা কর্পোরেট আমেরিকা জুড়ে ব্যাপক কর্মী ছাঁটাই হয়েছে। ট্র্যাকিং সাইট ‘লেঅফস ডটএফওয়াইআই’র তথ্য অনুযায়ী, এর নেতৃত্ব দিয়েছে বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানি, ২০২২ সাল থেকে দুই লাখ ৯০ হাজারের বেশি কর্মী ছাঁটাই করেছে তারা।
মেটার এই কর্মী ছাঁটাই কার্যক্রমের কথা এই খাতে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়। মুদ্রাস্ফীতির মতো সমসার পাশাপাশি কোম্পানিটি নিজেদের মূল ডিজিটাল বিজ্ঞাপন ব্যবসায় এমন এক সময় হুমকির মুখে পড়েছে, যখন কোম্পানিটি প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গের ‘ভবিষ্যৎমুখী মেটাভার্স তৈরির পরিকল্পনা’তেও ব্যাপক বিনিয়োগ করছে।
মঙ্গলবার কর্মীদের এক বার্তায় জাকারবার্গ বলেন, বেশিরভাগ নতুন ছাঁটাইয়ের ঘোষণা আসবে পরবর্তী দুই মাসে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটি এই বছরের শেষ পর্যন্তও চলতে পারে।
“নিজস্ব ইতিহাসের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, আমরা বছরের পর বছর দ্রুত আয় বৃদ্ধি দেখেছি। আর অনেক নতুন পণ্যে বিনিয়োগের রসদও পেয়েছি। তবে, গত বছর আমাদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করেছে।” --বলেন জাকারবার্গ।
“আমি মনে করি, এই নতুন অর্থনৈতিক বাস্তবতা বেশ কয়েক বছর অব্যাহত থাকবে, এমন সম্ভাব্যতার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকা উচিৎ।”
জাকারবার্গ বলেন, নিয়োগকারী দলের আকার ছোট করার বিষয়টিও তার পরিকল্পনায় ছিল, যা এরইমধ্যে দেখা গেছে শরতের ছাঁটাই কার্যক্রমে। এর প্রযুক্তি দল পুনর্গঠনের ঘোষণা আসতে পারে এপ্রিলের শেষে। আর ব্যবসায়িক দলের বেলায় তা আসতে পারে মে মাসে।
কোম্পানির ব্যবস্থাপনা বিভাগের একাধিক স্তর সরিয়ে ফেলার পাশাপাশি মেটা বিভিন্ন ব্যবস্থাপককে স্বতন্ত্র কর্মী হিসেবে কাজ করতে বলবে। এ ছাড়া, বিভিন্ন অপ্রকৌশল পদ সরিয়ে তুলনামূলক স্বয়ংক্রিয় উপায়ে ফাংশন তৈরি করে অন্তত আংশিকভাবে মার্ক জাকারবার্গের কোভিড মহামারীর লকডাউন চলাকালীন ‘রিমোট-ফার্স্ট’ পদ্ধতির বিপরীতে কাজ করবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।
বিনিয়োগকারীদের ‘খুশি করা’
সম্ভবত জাকারবার্গের ঘোষণার আগেই এই ছাঁটাই কার্যক্রমের সর্বশেষ হাওয়া শুরু হয়েছে। শুক্রবার মেটা বলেছে, তারা গত বছর অধিগ্রহণ করা গ্রাহক সেবা ভিত্তিক কোম্পানি ‘কাস্টমার’-এর জন্য বিভিন্ন ‘কৌশলগত বিকল্প’ খুঁজছে।
রয়টার্সের দেখা এক অভ্যন্তরীণ মেমো অনুসারে, নিজেদের খসড়া কাজ করা ‘নিউ প্রোডাক্ট এক্সপেরিমেন্টেশন’ দল ভেঙে মেসেঞ্জারের পণ্য নিয়ে কাজ করার উদ্দেশ্যে ওই দলের নেতৃত্ব দেওয়া আইমে আর্চিবঙকে পুনরায় নিয়োগ দিয়েছে কোম্পানিটি। প্রাথমিকভাবে এই দুটো পরিবর্তন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন বাণিজ্য দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও মহামারী চলাকালীন ই-কমার্স খাত ফুলে ফেপে ওঠার মধ্যেই কোম্পানির ডিজিটাল বিজ্ঞাপন থেকে সরে আসার কারণে মেটার মূল ব্যবসা থেকে আয় কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের জাকারবার্গের আর্থিক ব্যয় নিয়ে সতর্ক হয়ে ওঠার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।
অ্যাপল নেতৃত্বাধীন প্রাইভেসি নীতিমালায় পরিবর্তন ও তরুণ ব্যবহারকারী আকৃষ্ট করতে টিকটকের মতো শর্ট ভিডিও অ্যাপের সঙ্গে চলমান প্রতিযোগিতা নিয়েও কোম্পানিকে ব্যাপক ‘কাঠখড় পোড়াতে’ হচ্ছে।
একই সময়, নিজের মেটাভার্স বিভাগ ‘রিয়ালিটি ল্যাবস’ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাঠামো সমর্থনে শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে মেটা। ২০২২ সালেই এক হাজার তিনশ ৭০ কোটি ডলারের লোকসান হয়েছে এতে।
নভেম্বরের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে ওয়াল স্ট্রিটের কাছ থেকে এর সুফল পেতে শুরু করেছে মেটা। এর আগে ২০২২ সালের শুরুতে কোম্পানির শেয়ারের দাম ৭০ শতাংশ কমে গিয়েছিল।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতেও কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। সে সময় জাকারবার্গ একে ‘দক্ষতার বছর’ হিসেবে আখ্যা দেন, যেখানে খরচ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার পাশাপাশি চার হাজার কোটি শেয়ার বাইব্যাকের বিষয়টিও ছিল।
সর্বশেষ ছাঁটাই কার্যক্রম থেকে মেটার প্রত্যাশা, ২০২৩ সালে কোম্পানির সামগ্রিক খরচ হতে পারে আট হাজার ছয়শ কোটি ও নয় হাজার দুইশ কোটি ডলারের মাঝামাঝি, যা গত বছরের অনুমানের (আট হাজার নয়শ কোটি ও সাড়ে নয় হাজার কোটি ডলারের মাঝামাঝি) তুলনায় কম।