চীনা অর্থনীতি ‘গভীর খাদের কিনারায় পৌঁছে যাওয়ায়’ সেই কোম্পানিগুলোর জন্যই দেশটির কর্তৃপক্ষ এখন ‘লাল গালিচা’ বেছাতে ইচ্ছুক।
Published : 31 Jul 2023, 07:09 PM
নিজ দেশের প্রযুক্তি খাতে চীনের ‘ক্র্যাকডাউনের’ ফলে সর্বমোট এক লাখ ১০ হাজার কোটি ডলারের বাজারমূল্য হারিয়েছে সেখানকার বিভিন্ন শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানি। তবে, সম্প্রতি ওই কঠোর নিয়ন্ত্রণ শিথিল করে প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যস্থির করেছে দেশটির নীতিনির্ধারকরা।
কোভিড-১৯-এর কারণে তিন বছরের লকডাউন দেশটির অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা দিয়েছে। ২০২০ সালে প্রযুক্তি খাতে ক্র্যাকডাউন শুরু করেছিল চীন। এতে বিভিন্ন শীর্ষ কোম্পানির বাজারমূল্য থেকে মুছে যায় এক লাখ ১০ হাজার কোটি ডলার।
তবে, এখন চীনা অর্থনীতি ‘গভীর খাদের কিনারায় পৌঁছে যাওয়ায়’ একই কোম্পানিগুলোর জন্য দেশটির কর্তৃপক্ষ এখন ‘লাল গালিচা’ বেছাতে ইচ্ছুক বলে উঠে এসেছে চীনা দৈনিক ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’-এর প্রতিবেদনে।
রোববার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন বলছে, তথাকথিত ‘প্ল্যাটফর্ম ইকোনমি’ গঠনের জন্য চীনের শীর্ষ প্রযুক্তি জায়ান্টদের সঙ্গে অন্তত পাঁচটি চুক্তি করেছে দেশটির বিভিন্ন প্রাদেশিক সরকার।
শুক্রবার প্রকাশিত এক সরকারি নোটিশ অনুসারে, সাইবার নিরাপত্তা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে সম্প্রতি ‘আলিবাবার আতুরঘর’ হিসেবে পরিচিত হাংঝউ শহরের সরকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করেছে বেইজিংভিত্তিক কোম্পানি ‘কিহু ৩৬০’।
আর জুলাইয়ের শুরুতে হাংঝউ সরকারের সঙ্গে এআই ও ইস্পোর্টস সংশ্লিষ্ট এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে গেইমিং জায়ান্ট ‘নেটইজ’।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার ই-কমার্স জায়ান্ট ‘জেডি ডটকম’, স্মার্টফোন জায়ান্ট ‘শাওমি’ ও বাইটড্যান্সের সামাজিক মাধ্যম প্রতিদ্বন্দ্বী ‘কুয়াইশউ’র সঙ্গে পরিচালিত এক বৈঠকে গ্রাহকভিত্তিক প্রযুক্তি খাতে সমর্থন জানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বেইজিং অংশের প্রধান ইয়িন লি।
এর কিছু দিন আগে বেইজিংয়ের মেয়র ইয়ি ইয়ং ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবা’র বিদায়ী চেয়ারম্যান ও সিইও ড্যানিয়েল ঝ্যাং এবং শাওমির প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও লেই জুনকে বলেন যে ‘দেশটির রাজধানীর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে অর্থনীতির বেসরকারি খাত’।
সংবাদপত্রটির প্রতিবেদনে আরও উঠে আসে, চীনের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত বন্দরনগরী তিয়ানজিন ও দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত প্রযুক্তি হাব শেনজেনে বিভিন্ন প্রযুক্তি জায়ান্ট কোম্পানির সঙ্গে সম্প্রতি বেশ কিছু চুক্তি হয়েছে।
এমনকি ১২ জুলাই ই-কমার্স জায়ান্ট কোম্পানি আলিবাবার প্রশংসা করেছেন দেশটির প্রাদেশিক পরিকল্পনা প্রধান। তার মতে, স্বচালিত যান ও চিপ নির্মাণ’সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাতে বড় ভূমিকা রেখে যাচ্ছে কোম্পানিটি। এর আগে ২০২০ সালের অক্টোবরে দেওয়া এক বক্তব্যে কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা বেইজিংয়ের সমালোচনা করার পর তার মালিকানাধীন বিভিন্ন কোম্পানির ওপর ক্র্যাকডাউন চালায় চীনা কর্তৃপক্ষ।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীন তিন বছরের লকডাউনের ধাক্কা সামলানোর মধ্যেই দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্বদেশী প্রযুক্তি কোম্পানিকে এমন সুযোগ দেওয়ার পদক্ষেপটি এল।
চীন সম্ভবত ‘মুদ্রাস্ফীতির একদম দ্বারপ্রান্ত’ আছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ইনসাইডার।
চীনের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সূচকও বেশ হতাশাজনক ফলাফল দেখাচ্ছে।
সোমবার প্রকাশিত সরকারী পরিসংখ্যান অনুসারে, টানা চতুর্থ মাস হিসেবে জুলাইয়ে চীনের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সূচকগুলো উৎপাদন সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে হতাশাজনক ফলাফল দেখিয়েছে।
ইনসাইডার বলছে, চীন নিজস্ব অর্থনীতি চাঙ্গা করার পেছনে এমনভাবে উঠে পড়ে লেগেছে যে কোভিড-১৯ মহামারী বিষয়ক নীতিমালাও বদলানোর বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছে বেইজিং। এর মানে হচ্ছে, দেশটি সম্ভবত সম্পদ খাতেও কঠোর নীতিমালা শিথিল করবে।