পক্ষাঘাত ও অন্ধত্বের মতো শারীরিক সীমাবদ্ধতার চিকিৎসা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কম্পিউটার ও মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহারে সহায়তার প্রযুক্তি আনতে কাজ করছে নিউরালিংক।
Published : 26 May 2023, 01:59 PM
প্রথমবারের মতো মানব শরীরের ওপর পরীক্ষার লক্ষ্যে মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-এর (এফডিএ) অনুমোদন পাওয়ার কথা জানিয়েছে ইলন মাস্ক মালিকানাধীন ‘ব্রেইন-চিপ’ নির্মাতা কোম্পানি নিউরালিংক।
মার্কিন এই ধনকুবেরের কোম্পানিটি কম্পিউটারের সঙ্গে মস্তিষ্কের সংযোগ ঘটিয়ে মানুষের দৃষ্টিশক্তি ও শরীরের গতিবিধি পুনরুদ্ধারে সহায়তা দিতে চায়।
কোম্পানি বলছে, তারা এখনই অংশগ্রহনকারী বাছাইয়ের পরিকল্পনা করছে না। এর আগেও মাস্কের এই পরীক্ষা পরিচালনার ‘আকাঙ্ক্ষা’ ব্যর্থ হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।
আর এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির মন্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি।
এর আগে নিরাপত্তার কারণে নিউরালিংকের এফডিএ অনুমোদনের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয় বলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাবেক ও বর্তমান কর্মীদের উদ্ধৃতি দিয়ে মার্চের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।
বিবিসি বলছে, পক্ষাঘাত ও অন্ধত্বের মতো শারীরিক সীমাবদ্ধতার তার চিকিৎসা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কম্পিউটার ও মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহারে সহায়তার উদ্দেশ্যে এইসব মাইক্রোচিপ ব্যবহারের লক্ষ্যস্থির করেছে নিউরালিংক।
এর আগে বানরের ওপর পরীক্ষা চালানো এইসব চিপ এমনভাবে নকশা করা যাতে এর মাধ্যমে মস্তিষ্কে উৎপাদিত বিভিন্ন সংকেত ব্যাখ্যা করতে পারার পাশাপাশি ব্লুটুথের মাধ্যমে বিভিন্ন ডিভাইসে সেইসব তথ্য পাঠানো যায়।
‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের জায়গা দখল করবে’ এমন শঙ্কা দূর করতে প্রস্তাবিত প্রযুক্তি সহায়ক হবে বলে এর আগে মাস্ক বলেছেন।
বৃহস্পতিবারের টুইটে নিউরালিংক বলেছে, এই সিদ্ধান্ত এমন এক ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রথম ধাপ’ যা তাদের প্রযুক্তিকে একদিন অসংখ্য মানুষকে সহায়তার সুযোগ করে দেবে।
কোম্পানি বলেছে, ‘এফডিএ’র সঙ্গে নিউরালিংক দলের ঘনিষ্ঠভাবে আবিশ্বাস্য কাজের ফলাফল’ হলো এই অনুমোদন।
পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারীদের বাছাই পরিকল্পনা সম্পর্কে ‘শীঘ্রই’ তুলনামূলক বেশি তথ্য প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কোম্পানিটি।
‘সুরক্ষা, প্রবেশাধিকার ও নির্ভরযোগ্যতা’ তিনটি বিষয়কেই প্রকৌশলী কাজে সমান গুরুত্ব দেওয়ার উল্লেখ রয়েছে কোম্পানির ওয়েবসাইটে।
অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্কবার্তা দিয়েছেন, নিউরালিংকের মস্তিস্কে চিপ বসানোর ব্যবস্থা বাজারে চালু হওয়ার আগে এর বিভিন্ন প্রযুক্তিগত ও নৈতিক চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠানোর লক্ষ্যে ব্যাপকহারে এর পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
২০১৬ সালে মাস্কের সহ-প্রতিষ্ঠা করা কোম্পানিটি নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের গতি নিয়ে ক্রমাগত ভুল অনুমান প্রকাশ করে আসছে।
এর প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ২০২০ সাল নাগাদ মানুষের মস্তিষ্কে চিপ বসানোর কার্যক্রম শুরু করা। এর এক বছর আগে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কোম্পানিটি। পরবর্তীতে, কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা পাল্টে পেছানো হয় ২০২২ সাল পর্যন্ত।
গত বছরের ডিসেম্বরে কোম্পানির ব্যবসায় আরেকটি বড় ধাক্কা লাগে যখন নিজস্ব কার্যক্রমে ‘প্রাণি অধিকার ও কল্যাণের’ প্রশ্নে কোম্পানিটি তদন্তের মুখে পড়ে। এর আগে একই ধরনের অভিযোগ নাকচ করেছে নিউরালিংক।
সম্প্রতি সুইস গবেষকদের মাধ্যমে মস্তিষ্কে চিপ বসানো সংশ্লিষ্ট একই ধরনের অগ্রগতির খবর উঠে আসার পরপরই কোম্পানিটির কাছ থেকে এফডিএ’র অনুমোদনের এই ঘোষণা এলো।
এর সহায়তায় নিজের চিন্তাশক্তি কাজে লাগিয়ে সহজভাবে হাঁটতে সক্ষম হন নেদারল্যান্ডসের এক পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তি। আর তারবিহীন উপায়ে ওই ব্যক্তির ভাবনাকে সংকেত আকারে তার ‘পায়ে প্রেরণ করার’ সুযোগ করে দেয় এই ব্যবস্থা।